‘বৈশাখী মেলায়’ প্রথম দেখার ৫বছর!

রাবি প্রতিনিধি: ফারাবী! হুম ফারাবী গ্রামে বড় হয়ে ওঠা একটা সাধারন ছেলে অন্য সবার মত তার ওতো জীবনে স্বাধীনতা ছিল না। এক কথায় মা বাবার অবাধ্য যাওয়া তার সাহস ছিল না। পড়াশুনা, স্কুল , প্রাইভেট, ব্যাগ, সাইকেল, টিফিন, তারাতারি বাসায় ফেরা, বিদ্যুৎ চলে গেলে মোমবাতির আলোয় পড়াশুনা, এসব নিয়েই তার মাধ্যমিক জীবন কেটেছে।

মাধ্যমিক পরীক্ষা অর্থাৎ এস.এস.সি পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট করার সুবাধে, সে শহরের একটা কলেজে ভর্তি হল, নতুন জায়গা, নতুন সব মানুষ, নতুন সংস্কৃতির সাথে আস্তে আস্তে মানায় নিতে শুরু করল। এখন আার কেউ তাকে পড় পড়, তারাতারি বাসায় ফিরে আসবা, প্রাইভেট মিস দিও না, ক্লাসে ফার্স্ট হতে হবে, এসব কথা কেউ বলে না, বললেও ইলেকট্রনিক মাধ্যম পার হয়ে তার কানে ওইভাবে পৌছাত না। সে ওই রুটিন টা খুব মিস করত। এভাবে তার নতুন বন্ধু, দিনে চার টা প্রাইভেট , সকাল, বিকাল, সন্ধা এবং নতুন মানুষের সাথে চেনা পরিচয়, এর মাধ্যমে তার কলেজ জীবন চলছিল।

হটাৎ একদিন তার এক পরিচিত আপু তাকে বলল যে, ‘ফারাবী আজ তো বৈশাখ, মেলায় যাবি? এখানে একটা জায়গায় বড় আকারে মেলা বসে’ সে এর আগে কার সাথে মেলাতে যায়নি। একবার ছোটবেলা তে তার মনে আছে নানু বাসাতে গিয়ে মামাতো ভাইদের সাথে পূজার মেলাতে গিয়েছিল এবং নাগর দোলাতে ওঠেছিল! যায়হোক, সে তার আপুর কথায় সাড়া দিয়ে বলল হুম আপু যাব। আপু তখন মাস্টার্স এ পড়ে ফারাবী সবে মাত্র কলেজে ভর্তী হয়েছে। আপুর কথামত তারা বিকালে বের হল। আপু অবশ্য সেদিন শাড়ি পড়ছিল।

তারপর, মেলাতে ঘুরতে ঘুরতে তার আপুর ফোনে একটা ফোন আসল। ফোনটা তখন ফারাবীর কাছে ছিল। আপুকে কে যেন ফোন দিয়েছে আপু ফোনটা ধরেই বলল, কই তোরা আমি তো গেটের পাশে দাড়ায় আছি (জোরে জোরে)। ফারাবীর আপু সচারচার অনেক জোরে কথা বলত। যায়হোক, কিছুক্ষন যাওয়া মাত্র আপুর নাম ধরে বলছে, ‘এই দিকে আয়। অনেকগুলা আপু একসাথে এক পাশে দাঁড়ায় আছে। এবং ফারাবীকে তার আপুর বান্ধবীর সাথে পরিচয় করিয়ে দিল। আপুর পাশে থাকা একটা বান্ধবী ফারাবীকে বলল, তুমি কি বিজ্ঞান বিভাগের? সে বলল হুম আপু!

তখন ফারাবীর আপুর বান্ধবী ওপাশ থেকে একটা মেয়েকে ডাকল (জ্যাকপট) এই দিকে আস। যে মেয়েটিকে ডাকল সে তার কিছু বন্ধুদের সাথে হাসা হাসি করছিল। ফারাবী মেয়েটাকে এর আগেও দেখেছে। তার সাথে ম্যাথ প্রাইভেট পড়েছে কিছুদিন। কিন্তু সেই মেয়ে আার এই মেয়ের মধ্যে হাজার পার্থক্য দেখতে পাচ্ছে। হটাৎ মেয়েটি সামনে হাজির! “ফারাবীর ভাবনা এখানেই শেষ না”। আপু তাদের পরিচয় করিয়ে দিল। কেন জানি একটা ভাল লাগা কাজ করছিল ওইদিন ফারাবীর, মেয়েটি বার বার তাকাচ্ছিল। এই সেই ফারাবীর প্রথম ভাললাগা মেয়ে (জ্যাকপট)!

তারা সন্ধ্যার দিকে একসাথে বাসায় ফিরল। তারপর সে তার আপুর কাছে জানতে চাইল মেয়েটির পরিচয়, তারপর ফেইসবুক.! তখন থেকে তাদের ফেসবুকে টুক টাক কথা হত। দিনে একবার হায় হ্যালো অথবা দুইদিন পর পর একদিন ফারাবীর আপুর বান্ধবীর ফোন দেখতে গিয়ে দেখল মেয়েটির নাচের ভিডিও! ওইদিন থেকেই ফারাবীর ভালবাসর মুকুট পরিহিত মেয়েটিই হচ্ছে জ্যাকপট! সেখান থেকেই ভাল লাগা শুরু ফারাবীর। ফেইসবুক তারপর ফোনে এসএমএস, ফোনে কথা, এসব মিলিয়ে ফারাবীর মেয়েটিকে অসম্ভব ভাল লেগেছিল। তার আচরন, কথা-বার্তা, অহংকারহীন সবমিলিয়ে অনেক সাধাসিধা একটা মেয়ে ।

মায়াবী চোখ, চুল গুলো কুঁকড়ানো, এবং ঐ দিনের নাচের ভাল লাগা থেকে শুরু করে তার জীবনে প্রথম ভালবাসা জ্যাকপট আসল ২৫ আগস্ট রাতে। ঐ রাত যেন ছিল সবাই নিশ্চুপ, সবায় যেন সাক্ষী ছিল তাদের ভালবাসার।

জ্যাকপট কে নিয়ে ফারাবীর চলছিল ভালবাসার নতুন নতুন স্মৃতি। ছেলেটি মেয়েটার সাথে সামনা সামনি দেখা করতে পারত না বিভন্ন সমস্যার কারনে কিন্তু তারা সবার অগোচরে ভালবাসার পাতায় অনেক কিছুই লেখেছে যেমন- মেয়টি থাকত তাদের দুই তালার বাসার বারান্দায় আর ছেলেটি রাতে আাসত মেয়েটির সাথে দেখা করতে মেয়েটির বাসার নিচে চায়ের দোকানে। ফারাবী এর আগে চা খেত না, কিন্তু মেয়েটার সাথে দেখা করার ছলনায় প্রতিদিন চা খেতে আসত, আর মেয়েটি অন্ধকারে বারান্দায় দাড়ায় থাকত। সৃষ্টিকর্তা হয়ত তাকে মাঝে মাঝে দেখানোর জন্য চাঁদের আলোটা একটু বাড়িয়ে দিত, এবং কখনও কখনও মেয়েটি তার ফোনের লাইট মুখে ধরত। কখনও বৃষ্টি মাথায় দোকানে দাড়ানোর ছলনায় দেখা, ছেলেটি কখন মেয়েটির বাসার নিচ দিয়ে পড়তে যাবে সেই জন্য মেয়েটির বারান্দা ও ছাদে দাড়িয়ে থাকা, কখনও সকালে বাসার গেটের ওপাশ থেকে জোরে ভালবাসি বলে ছেলেটিকে ভয় পাইয়ে দেওয়া, কখনও বৃষ্টিতে খালি অটো ছেড়ে মেয়েটির বসে থাকা জ্যাম ভরা অটোতে ওঠা, সামনা সামনি কখনও দেখা হলেও মেয়েটি প্রচন্ড রকমের লজ্জা পেত, এবং ছেলেটির সামনে হাটতে পারত না। এসব ছোট ছোট স্মৃতি পার করে ফারাবী-জ্যাকপট কলেজ জীবন শেষ করল। ফারাবীর এখন আর শহরে একা লাগে না, কারন তার জ্যাকপট আছে।

ফারাবী ওইদিন অনেক কাদছিল যেদিন বিশ্ববিদ্যালয় কোচিং এর জন্য অন্য একটা শহরে চলে আসে। এত স্মৃতি স্মৃতি ময় দিন ছেড়ে কেমনে থাকে সে? ফারাবী মাঝে মাঝে চলে আসতে চাইত কিন্তু জাকপট তাকে আসতে দিত না! একদিন তো হটাৎ ফারাবী রাতের বাস ধরে চেনা সেই যায়গায় চলে আসছিল। খুব কষ্ট হত তার। মনে হত পৃথিবী কতবড় স্বার্থপর। তারপর জাকপট ও অন্য একটা শহরে চলে গেল বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হবার জন্য।

ফারাবী জ্যাকপটের ভালবাসর আতুর ঘর থেকে দুজনই অনেক দূরে, তারপরও চলতে থাকল তাদের পড়াশুনা এবং মায়ামাখা ভালবাসা। জ্যাকপট ফারাবী কে বার বার বলত তোমাকে কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় পড়তে হবে। মা বাবা বোনের সাহস, জাকপটের পাসে থাকায় হয়ত ফারাবী বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হল। ফারাবীর বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হবার পিছনে জাকপট এর অবদান অপরিসীম। দুই জন বাংলাদেশের দুই দিকে অবস্থান! বাস্তবতা তাদের আলাদা করেছে কিন্তু তাদের ভালবাসা চলছে অভিমান, কান্না আক্ষেপ নিয়ে। তারা এখন অনেক বড় হয়েছে তারা অনেক কিছু বুঝতে শিখেছে, কিন্তু বাচ্চা মেয়েটা মাঝে মাঝে অনেক রাগ করে ছেলেটার সাথে দেখা করা নিয়ে। ছেলেটাও মাঝে মাঝে আাসে দেখা করতে। আবার বিভন্ন ব্যাস্ততার কারনে আসতে পারে না। ফারাবী জ্যাকপট এর অনেক স্বপ্ন তাদের ভালবাসা নিয়ে। ফারাবী মাঝে মাঝে অনেক বকা বকি করত তাসনিম কে কিন্তু মেয়েটা চুপ করে শুনে।

আজ ফারাবী ও জ্যাকপটের ভালবাসার প্রথম প্রণয়ের ৫বছর। এখন অবশ্যই ফারাবীর জ্যাকপটের মায়া চোখ দুইটা ছল ছল করছে। এভাবে চলতে থাকে তাদের ভালবাসা।

“তাপস নিঃশ্বাস বায়ে মুমূূর্ষের দাও উড়ায়ে
বৎসরের আবর্জনা দূল হয়ে যাক।’’
নতুন বছর নতুন করে শুরু হোক।
শুভ নববর্ষ!

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর রাবি প্রতিনিধি মো: মুজাহিদ হোসেন।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.