বেডের হাহাকার : জরুরী ভিত্তিতে ৫’শ রেল কামরাকে মেকশিফট হাসপাতালে পরিণত

ছবি: সংগৃহীত

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ভারতের রাজধানী দিল্লিতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ এত দ্রুত গতিতে বাড়ছে যে জরুরী ভিত্তিতে পাঁচশো রেলের কামরাকে মেকশিফট হাসপাতালে পরিণত করা হচ্ছে।

দিল্লি সরকার ইতিমধ্যেই জানিয়েছে যে জুলাই মাসের মধ্যে শহরে করোনা পজিটিভ রোগীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৫ লক্ষে পৌঁছতে পারে। আর সেই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য দিল্লির এখন নাভিশ্বাস উঠছে। খবর বিবিসি বাংলা।

পুরো দিল্লি জুড়ে করোনা রোগীরা এখনই হাসপাতালের বেড পাচ্ছেন না। ওদিকে হঠাৎ করে টেস্টিং কমিয়ে দেওয়া আর সার্বিক অব্যবস্থাপনার জন্য সুপ্রিম কোর্টও দিল্লি সরকারের কড়া সমালোচনা করেছে।

ভারতের ‘করোনা ক্যাপিটাল’ হিসেবে এতদিন বর্ণনা করা হচ্ছিল মুম্বাইকে, কিন্তু সেই তকমা অচিরেই দিল্লির কপালে জুটবে বলে এখন মনে করা হচ্ছে।

রোগী আছে হাজারে হাজার, বেড নেই একটাও: দিল্লির সরকারী হাসপাতালগুলোর বাইরে এখন একটা বেডের জন্য অসহায়ভাবে ছুটো ছুটি করছেন করোনা রোগীদের আত্মীয় পরিজনরা।

দিল্লির এলএনজিপি হাসপাতালের বাইরে একজর রোগীর ছেলে প্রশান্ত পাসোয়ান বলছিলেন, “চারদিন ধরে আমার বাবা জ্বর আর কাশিতে ভুগছিলেন – নানা হাসপাতালে দৌড়োদৌড়ি করার পর অবশেষে করোনা টেস্ট করাতে পারলেও বলা হল পাঁচদিন পর রেজাল্ট মিলবে।”

“এর মধ্যে বাবার শরীর আরও খারাপ হয়, কিন্তু আরএমএল থেকে সফদরজং, কিংবা এইমস – কোনও হাসপাতালেই তার বেড জোটেনি। অবশেষে এলএনজিপি-তে জায়গা পেয়েছি বারোদিন পর!”

কেউ আবার বলছেন, “একে ওকে দিয়ে তদবির আর ফোন করিয়ে অনেক কষ্টে রোগীকে ভর্তি করাতে পেরেছি।”

এবং এই হাল শুধু সাধারণ মানুষের নয়, সাবেক এমপি কিংবা টেলিভিশন তারকাদেরও। বিভিন্ন সিরিয়ালের পরিচিত মুখ দীপিকা সিং গোয়েল যেমন গতকালই দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে ভিডিও বার্তা পোস্ট করে জানিয়েছেন, “আমার প্রৌঢ়া মা করোনা পজিটিভ শনাক্ত হলেও কোথাও চিকিৎসা পাচ্ছেন না – দয়া করে ওনাকে বাঁচান।”

রাজ্যসভার সাবেক সদস্য শাহিদ সিদ্দিকিও টুইটারে জানিয়েছেন, দিল্লিতে কোথাও ভর্তি করাতে না-পেরে তিনি তার এক নিকটাত্মীয়কে হারিয়েছেন।

দায়ী বেসরকারী হাসপাতালগুলোই?

দিল্লির আম আদমি পার্টি সরকার বলছে, এই মেডিক্যাল ইমার্জেন্সিতে বেসরকারী হাসপাতালগুলোর সাহায্য পাওয়া যাচ্ছে না বলেই পরিস্থিতি এতটা খারাপ। দলের হাই-প্রোফাইল এমএলএ আতিশি মার্লেনার কথায়, “প্রাইভেট হাসপাতাল গুলো মুখের ওপর বলে দিচ্ছে তাদের নাকি বেড নেই।”

“কিন্তু একটু জোর করলেই বলছে, চার-পাঁচ লাখ টাকা দিলেই বেডের ব্যবস্থা হয়ে যাবে। সেই জন্যই আমরা তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছি, কারণ এই বিপদে তারা তাদের বেড নিয়ে কালোবাজারি করতে পারে না!’। দিল্লিতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবকে অনেকেই এই শোচনীয় পরিস্থিতির জন্য দায়ী করছেন।

রেলের কামরা, ব্যাঙ্কোয়েট হলেই হাসপাতাল

তবে আজ রবিবার (১৪ জুন) কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর সঙ্গে দিল্লি সরকারের মুখোমুখি বৈঠকের পর মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালও একসঙ্গে কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন।

অমিত শাহও জানিয়েছেন, কেন্দ্র ৫০০ রেলের কামরা দিয়ে দিল্লিতে বাড়তি ৮ হাজার বেডের ব্যবস্থা করবে। দুদিনের মধ্যে দ্বিগুণ করা হবে কোভিড-১৯ টেস্টিংয়ের সংখ্যাও।

কিন্তু দিল্লি সরকারের হিসেব মতো সত্যিই যদি দেড় মাসের মধ্যে শহরে সাড়ে ৫ লক্ষ কেস হয়, সেই পরিস্থিতি কি আদৌ সামলানো যাবে?

দেশের প্রিমিয়ার মেডিক্যাল ইনস্টিটিউট এইমসের অধিকর্তা রণদীপ গুলেরিয়া বলছেন, “যদিও ব্যক্তিগতগতভাবে আমি মনে করি না সংখ্যাটা ওই জায়গায় পৌঁছবে – তারপরও এর জন্য সব রকম প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে বলেই আমার বিশ্বাস।”

সেই অনুযায়ী স্বাস্থ্য অবকাঠামো তৈরী রাখা, ডাক্তার-নার্সের ব্যবস্থা করা ও উপযুক্ত পরিকল্পনা প্রণয়নের ওপরেই জোর দিচ্ছেন তিনি। কিন্তু এই মুহুর্তে দিল্লির যে নাজেহাল দশা, তাতে রাজধানীর বাসিন্দারা করোনা সঙ্কট মোকাবিলায় প্রশাসনের ওপর কোনও ভরসাই রাখতে পারছেন না। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.