বেগুনের কেজি ৫ টাকায় নেয় না, দাম না পেয়ে বাগমারায় বেগুন চাষিদের মাথায় হাত!


বাগমারা প্রতিনিধি: রাজশাহীর বাগমারায় বেগুনের উৎপাদন বাড়লেও চাহিদা কমেছে। বারে বারে রমজানে বেগুনের দাম বেশী থাকে, তবে এবারে চাহিদা কম থাকায় অস্বাভাবিকভাবে কমেছে বেগুনের দাম।
উপজেলায় এ সবজি বেগুন পাইকারি মাত্র ৩ টাকা এবং খুচরা ৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে আমদানী থাকলেও ক্রয় করার আগ্রহ তেমন নেই ক্রেতাদের। বেগুনচাষিরা বেগুনের দাম না পেয়ে বাজারে ফেলে বাড়ি ফিরছে।
শুক্রবার (২২ মার্চ) উপজেলার বৃহৎ হাট ভবানীগঞ্জ ও আজ রোববার উপজেলার বিভিন্ন হাট ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। দাম কমে বেগুন চাষিদের বেগুন গাছে নষ্ট হচ্ছে।
সপ্তাহ দুয়েক আগে বাজারে বেগুন খুচরা ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। মাত্র কয়েক দিন ব্যবধানে বেগুনের বাজর দরপতনে সবাই অবাক হয়ে পড়েছেন। এদিকে রমজানে দাম বাড়তিতে বিগত দিনে বেগুনের পরিবর্তে কৌতুক করে যে কথা বলা হতো তা উল্টে যাচ্ছে। ফলে হাট-বাজার ও গ্রাম গঞ্জে বেগুনের দাম কমতিতে বেগুনী নেই, বেগুন ফেলানি হয়েছে। সকল সবজির চেয়ে বেগুনের দাম কমে বেগুনচাষিদের মাথায় হাত উঠেছে। কৃষককের উৎপাদিত বেগুনের মূল্য হ্রাসে উৎপাদন খরচ জুটছে না।
স্থানীয কৃষকরা জানান, একই কৃষক ভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করতে পারে না। কিছু কৃষক ভাগ্যক্রমে দাম পেয়ে যায়। যে আলু করে, সে বেগুন করে না, আর করলেও কম করে। কেই ভাবে ভূট্রা ও ধান করলে পিঁয়াজ বা অন্য ক্ষেত করতে পারে না। এতে করে যখন যে জিনিসের ঘাটতি তখন তার দাম বেড়ে যায়। একটু আমদানী হলে দাম কমে তলায় ঠেকে যায়। বাজার ব্যবস্থার ত্রুটিতে চাষিদের মাথায় হাত পড়ছে।
চাষিদের দাবি কৃষি উৎপাদনের প্রধান উপকরণ সার, ডিজেল ও কীটনাশকের দাম বাড়ছে প্রতি নিয়তই কিন্তু কৃষকদের কৃষি পণ্যের দাম নির্ধাররণ সঠিক হচ্ছে না। ফলে কৃষি ফসলের সঠিক উৎপাদন করে লোকশান গুনছেন। দু’ দফায় ইউরিয়া সার ও চার দফায় ডিজেলের দাম বেড়েছে।
সরকার গ্রাম পর্যায়ের কৃষকদের কথা না ভেবে কৃষি উপকরণের দাম বাড়িয়ে চলেছে। গ্রামের কৃষকদের অবলম্বন কৃষি। অন্য কোন উপায় না থাকায় বাধ্য হয়ে কৃষি কাজ ও উৎপাদন করে। উপজেলার বালানগর গ্রামের কৃষক আব্দুল মান্নান বলেন, পিঁয়াজ করিনি, বেগুন ও ধান করেছি। বেগুন ও ধানের দাম আনুপাতিক হারে কম, কিন্তু ফিয়াজ বেশী দামে কিনতে হচ্ছে। দামের সমান্বয়ে একই ভাবে বলছেন, গ্রামের কৃষক জয়নাল আলী আলু করে লাভবান এবারে কিন্তু বিগত কয়েক বছর আলুর দাম কমে তাকে লোকশান গুনতে হয়েছে।
এদিকে বেগুনের দামে হতাশ হয়ে পড়েছেন বেগুন চাষিরা। হাটে বেগুন বিক্রি করতে এসেছেন সগুনা বেগুন চাষি আব্দুস সালাম তিনি জানান, হাটে ২ মণ বেগুন বিক্রি করতে এসেছিলাম। আড়তগুলোতে দাম কম দেখে খুচরা একমণ বিক্রি করেছি ১শ টাকায়। অবশিষ্ট একবস্তা বিক্রি করতে না পেরে বাজারে রেখে এসেছি।
তিনি আরও জানান, তিনি এক বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমিতে বেগুন চাষ করেছেন। তার মতো সব চাষিই রমজান মাসকে লক্ষ্য করে উৎপাদন করেছেন। আমদানি বেড়েছে, তাই দামও কম। খরচ না ওঠায় হতাশয় রয়েছেন তিনি। বেগুন চাষি আব্দুল মান্নান বলেন, এক বিঘা জমিতে বেগুন আবাদ করতে ১২-১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ৫ হাজার টাকাও বিক্রি করতে পারি নাই। দাম কম বলে খেতের বেগুন খেতেই রেখেছি। লাভ তো দূরের কথা, হাটে বেগুন নিয়ে আসার ভ্যান ভাড়াও ওঠেনি। একই ভাবে গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম জানান, গত বছর বেগুনের ভালো ফলন ও দাম পেয়ে বেশী লাভের আসায় এবারে বেশী বেগুন চাষে ব্যাপক ক্ষতি পোহাতে হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার বেগুনের বাম্পার ফলন হয়েছে। তবে চাষিরা ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এলাকায় হিমাগার না থাকায় এসব বেগুন সংরক্ষণেরও সুযোগ নেই।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বাগমারা প্রতিনিধি মো: আফাজ্জল হোসেন / রাজশাহী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.