বিদেশী তৈজসপত্র নির্ভরতায় ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে রাজশাহী অঞ্চলের মৃৎ শিল্প!

নিজস্ব প্রতিবেদক: লাগামহীন দ্রব্যমূল্য ও আধুনিকতার আগ্রাসনের কারণে মৃৎ শিল্পের তৈজসপত্র তৈরিতে বেড়েছে খরচ আর কমেছে দাম। এছাড়াও চায়নাসহ বিভিন্ন দেশ থেকে মাটির তৈরি বিভিন্ন তৈজসপত্র দেশে আশায় প্রতিযোগিতায় টেকা দায় হয়েছে তাদের। তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই পেশা বদলাতে চাইছেন এ স¤প্রদায়ের কারিগরেরা। এতে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে রাজশাহী অঞ্চলের মৃৎ শিল্প।
মৃৎ শিল্পীদের ভাষ্য, এই ব্যয় নির্বাহ করতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। সমবায় সমিতি কিংবা উদ্যোক্তা হিসেবে সহজ শর্তে লোন পাচ্ছেন না তারা। আবার ভারত ও চায়না থেকে মাটির তৈরি বিভিন্ন তৈজসপত্র দেশে আশায় প্রতিযোগিতায় টেকা দায় হয়েছে তাদের। কারণ, চায়না ও ভারতের তৈরি জিনিসগুলো দেখতেও যেমন সুন্দর আবার দেশি তৈজসের চাইতেও অনেক মজবুত। এসব তৈজসপত্র তারা তৈরি করে অত্যাধুনিক মেশিনের মাধ্যমে। যার দাম অনেক বেশি। মৃৎ শিল্পীদের দাবি- সরকারি সহায়তায় যদি মৃৎ শিল্প বাঁচাতে ট্রেনিং ও প্রয়োজনীয় কারিগরি সহায়তা প্রদান করা হয় তবে দেশেও ঝুঁকির মধ্যে থাকা মৃৎ শিল্প বাঁচিয়ে উন্নতমানের তৈজসপত্র তৈরি ও সরবরাহ করা সম্ভব।
এক সময় পাল স¤প্রদায়ের হাতের তৈরি মাটির তৈজসপত্রের কদর ছিল বেশ। কিন্তু কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে পালদের তৈরি তৈজসপত্র। এখন আনুধিক যুগে কাঁচ, সিলভার, অ্যালুমিনিয়াম, প্ল্যাস্টিক, সিরামিক অথবা মেলামাইনের তৈজসপত্র বাজারে ভরপুর থাকায় মাটির তৈরি জিনিসপত্র হারাতে বসেছে। শুধু আধুনিক তৈজসপত্রই বিলুপ্তি বা ঝুঁকির কারণ নয়। ঝুঁকির সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে মাটির সংগ্রহ ও উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি। মাটির সংগ্রহ করতে লেবার খরচ দিনে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা গুনতে হয়। এছাড়াও পরিবহনে লাগে খরচ।
রাজশাহীর বাগধানী পালপাড়া গ্রামের মৃৎ শিল্পীরা জানান, এখনো শহর কিংবা গ্রাম এখনো মাটির তৈরি হাঁড়ি-পাতিল, কড়াই, ডাবর-মটকি, মাটির ব্যাংক, গহনা, কলস, ফুলের টব, ফুলদানি, ঢাকনা, পিঠা তৈরির ছাঁচসহ নানা ধরনের খেলনার চাহিদা রয়েছে। এরমধ্যে দই-মিষ্টির হাড়ি, ফুলদানি, ফুলের টব, কড়াইসহ টুকিটাকি তৈজসপত্রের চাহিদা প্রচুর। শহরে এসব আসবাবের ক্রেতাও রয়েছে প্রচুর।
রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার কুমার পাড়ার নিখিল পাল বিটিসি নিউজকে বলেন, এক সময় মানুষ হাটে এসে স্বেচ্ছায় মাটির জিনিসপত্র কিনতো। এখন আর আসে না। সবাই বাজারে দৌড়ায় লোহা, প্লাস্টিক আর সিরামিকের জিনিস কিনতে। তাই হাটের দিন বাদেও প্রতিদিন ফেরি করে গ্রাম গ্রাম ঘুরে মাটির জিনিসপত্র বিক্রি করি।
প্রতিবন্ধকতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভালো এঁটেল মাটি এখন আর সহজে পাওয়া যায় না। এঁটেল মাটি না মেলায় মাটির জিনিস টেকসই হয় না। তাই ভালো মাটি দূরদূরান্ত থেকে সংগ্রহ করতে গেলে চড়া মূল্য গুনতে হচ্ছে। এক ট্রাক্টর মাটির মূল্য পড়ছে এক থেকে দেড় হাজার টাকা। এক ট্রাক্টর মাটি দিয়ে যে হাঁড়ি-পাতিল তৈরি হয়, তাতে কোনো রকমে পয়সা উঠে। অনেক সময় মাটি ভালো না হলে লোকসানও গুনতে হয়।
আরেক মৃৎ শিল্পী বীরেন পাল। তিনি বলেন, অভাব অনটনের মধ্যেও হাতেগোনা কয়েকটি পরিবার বাপ-দাদার পেশাকে আঁকড়ে ধরে আছে। আবার বাধ্য হয়ে চার পুরুষের এই পেশা বদলানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অনেকেই।
রাজশাহী জেলা বিসিক কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা কেউ এ বিষয়ে মন্তব্য করতে না চাইলেও কেউ কেউ বলেন, যতটুকু শুনেছি, মৃৎ শিল্প ও কারিগরদের টিকিয়ে রাখতে ও শিল্পের বিকাশে বিসিক থেকে বিভিন্ন সময় সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া হয়। এর আগেও বিভিন্ন সময় সরকার থেকে মৃৎ শিল্পীদের সহায়তা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তারা।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি মো.মাসুদ রানা রাব্বানী / রাজশাহী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.