বিএনপির নির্বাচন প্রস্তুতি ও খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি

বিটিসি নিউজ ডেস্ক : এটাই শেষ রমজান একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে। তাই কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকা ছাড়াও এবার তৃণমূলেও ইফতার পার্টি দেবেন বিএনপির সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীরা। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনের বার্তা তৃণমূলে ছড়িয়ে দেওয়া এবং দলীয় প্রার্থী হিসেবে জানান দেওয়াই তাদের উদ্দেশ্য। তাই রমজানের প্রথম ইফতার গতকাল যথারীতি এতিম ও ওলামা-মাশায়েখদের সাথে করেছে বিএনপি। রাজধানীর লেডিস ক্লাবে এই ইফতার পার্টি অনুষ্ঠিত হয়।

এরপর একই স্থানে আজ রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মানে ইফতার আয়োজন করেছে বিএনপি। এ ছাড়া আগামীকাল রবিবার রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে কূটনীতিকদের সম্মানে ইফতারের আয়োজন করেছে বিএনপি। মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান, ‘আমরা বরাবরের মতো এবারও রমজানে কয়েকটি ইফতার মাহফিল করব। তবে দুঃখজনক হলো এবার ইফতার মাহফিলে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া উপস্থিত থাকতে পারছেন না। তাকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ অন্যায়ভাবে কারাগারে পাঠিয়েছে। তার পরও দলের পক্ষ থেকে ইফতার পার্টি সফল করতে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

বিশেষ করে সরকার বিরোধী অন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে ইফতারে চায় বিএনপি। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জাসদ (ইনু) বাদে বাকি ৩৭টি রাজনৈতিক দলকে ইফতারের দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। অবশ্য এর আগের বছরও আওয়ামী লীগকে ইফতার পার্টির দাওয়াত দেওয়া হয়। দাওয়াত না দেওয়ার কারণ হিসেবে বিএনপি নেতারা জানান, তাদের দাওয়াত দিলেও আসবে না। তা ছাড়া আওয়ামী লীগ জোটের বিরুদ্ধে সব দলকে এক প্লাটফরমে আনতে হবে।

সরকারের বাইরে থাকা দলগুলোর সমন্বয়ে একটি রাজনৈতিক ঐক্যও গড়ে তুলতে চেষ্টা করা হবে। জোটের বাইরে গণফোরাম, বিকল্পধারা, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগসহ অন্যান্য দলকেও দাওয়াত দেওয়া হয়েছে। তাদের দাওয়াতপত্র পৌঁছে দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লা বুলু, শামসুজ্জামান দুদু ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লা বুলু বলেন, ‘জোট-মহাজোটের বাইরে কয়েকটি রাজনৈতিক দলকে আমরা আমন্ত্রণ জানিয়েছি।

তারা আমাদের আমন্ত্রণপত্র গ্রহণ করেছেন।’ সূত্রমতে, ৩০০ আসনে সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীরা আটঘাট বেঁধে এবার ইফতার পার্টি করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে প্রার্থীদের মধ্যে অজানা শঙ্কাও কাজ করছে। সদ্যসমাপ্ত খুলনা সিটির মতো নির্বাচন হলে ফলাফল শূন্য হতে পারে এমন দুশ্চিন্তাও অনেকের মধ্যে। তা ছাড়া মাঠের নেতারা মনে করেন, বেগম খালেদা জিয়াবিহীন নির্বাচনের পথে হাঁটছে সরকার। সে ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন হলে ভরাডুবিও হতে পারে। সব দিক মাথায় রেখেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। সম্ভাব্য প্রার্থীরা জেলা-উপজেলার পাশাপাশি অনেকেই ইউনিয়ন পর্যায়েও ইফতার পার্টি দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছেন। জানা যায়, কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে ইফতারের পাশাপাশি একাদশ জাতীয় নির্বাচনে যেতে বেশকিছু দাবি নিয়ে এগোচ্ছে বিএনপি।

এর মধ্যে প্রধান দাবি হলো, শিগগিরই দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি। সেই সঙ্গে বিএনপির দাবির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বেগম খালেদা জিয়াসহ সর্বস্তরের নেতা-কর্মীর মামলা প্রত্যাহার। তৃণমূলে নেতাদের বক্তৃতা-বিবৃতিতে এসব নিয়ে কথা বলতে বলা হয়েছে। বিএনপির অন্য দাবির মধ্যে রয়েছে— সংসদ নির্বাচনের অন্তত এক সপ্তাহ আগে সেনা মোতায়েন করতে হবে। তৈরি করতে হবে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড।

তফসিলের আগেই সংসদ ভেঙে দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবিও তাদের। ২০০৮ সালের আগে নির্ধারিত সীমানায়ও নির্বাচন চায় দলটি। এর ব্যত্যয় ঘটলে আন্দোলনের মাধ্যমেই দাবি আদায়ের পরিকল্পনা রয়েছে দলটির। এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এ মুহূর্তে বেগম জিয়ার মুক্তিই আমাদের মূল লক্ষ্য। বিএনপি চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে তারা নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে চায়। কিন্তু সরকারের এ ষড়যন্ত্র টিকবে না।’ দলের স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্যের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, সরকার যদি নির্বাচন নিয়ে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করে তাহলে বিএনপিও সর্বোচ্চ ছাড় দেওয়ার কথা চিন্তাভাবনা করবে। কিন্তু সরকার যদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান ক্যাবিনেট রেখেই নির্বাচন করতে চায়, তাতে অংশ নেওয়া বিএনপির জন্য কঠিন হয়ে পড়বে। এজন্য নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে সব দলের সঙ্গেই সংলাপ করা জরুরি।

কিন্তু সরকার যদি একতরফা নির্বাচনের পথেই হাঁটে তাহলে বিএনপি ইতিবাচক চিন্তাভাবনা থেকে সরেও আসতে পারে। জানা যায়, একাদশ নির্বাচনের তফসিলের আগ মুহূর্তে সরকারকে বড় ‘ধাক্কা’ দিতে চায় বিএনপি। আগস্ট-সেপ্টেম্বর থেকেই গণতান্ত্রিক শক্ত কর্মসূচিতে যাওয়ার চিন্তাভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে আইনি প্রক্রিয়ায় বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি না মিললে আন্দোলনের পথেই থাকবে দলটি। বিএনপি মনে করছে, সরকারকে চাপে রাখতে পারলে খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ সব দাবি আদায়ই সম্ভব।

একই সঙ্গে নির্বাচনী প্রস্তুতিও থাকবে দলটির। তিন ধাপে সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রস্তুতি নেওয়ার দিকনির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। বিএনপির যুগ্মমহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘ধাপে ধাপে আন্দোলনে পরিবর্তন আসবে। এখন নরম হলেই যে সারা বছর এমনটাই থাকবে, তাও নয়। পর্যায়ক্রমে আন্দোলনের গতি পরিবর্তন হতে পারে, সেটাও খুব একটি বেশি দূরে নয়।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.