বাল্যবিয়ে বন্ধে ইউএনও আনিসুর রহমানের ট্রিপল সেঞ্চুরি!


বেলকুচি (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনিসুর রহমান বাল্যবিয়ে বন্ধে ট্রিপল সেঞ্চুরি করছেন। সিরাজগঞ্জে দায়িত্ব পালনের ২৯ মাসে ৩০২ বাল্যবিয়ে বন্ধ করে রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন।

এসডিজিথর লক্ষ্যমাত্রার টার্গেটগুলোর অন্যতম বাল্যবিয়ে বন্ধে তার এ অর্জন ইতিবাচকভাবে দেখছে জেলা প্রশাসন সিরাজগঞ্জ। এজন্য ২০১৯ সালের ২৩ জুন আন্তর্জাতিক পাবলিক সার্ভিস দিবসে সিরাজগঞ্জ সদরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে কর্মকালীন সময়ে বাল্যবিবাহ বন্ধে অবদান রাখায় বিশেষ সম্মাননা প্রদান করেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক কামরুন নাহার সিদ্দীকা।

২০১৯ সালে ৩০ সেপ্টেম্বরে জাতীয় কন্যা শিশু দিবসে বর্তমান জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহাম্মদ ও ২০২০ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারিতে সদর-কামারখন্দ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য ডাঃ মোঃ হাবিবে মিল্লাত মুন্না,ইউএনএফপিএ এর বাংলাদেশ প্রতিনিধি ড. ওসা টরকেলসন,মালদ্বীপের রাষ্ট্রদূত মিস আয়সা শান শাকির।

আনিসুর রহমান যেখানেই দায়িত্বে ছিলেন সেখানেই নিষ্ঠার সাথে কাজ করে গেছেন। ২০১৪ সালের আগস্ট থেকে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যশোরে সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় ভেজাল বিরোধী অভিযান করে সমগ্র দক্ষিণ বঙ্গে সাড়া ফেলেছিলেন।

ভেজাল কারবারীরা নয়-ছয় কারবার বাদ দিয়ে নিয়ম মানতে বাধ্য হন। এজন্য যশোরের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের নিকট ম্যাজিস্ট্রেট আনিসুর রহমান প্রশংসিত। ২০১৭ সালের শেষের দিকে তিনি বদলি হন যমুনা বিধৌত সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলায়।

তিনি সেখানে সহকারী কমিশনার (ভূমি) পাশাপাশি ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবেও দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন, এরপর এখানে অনিয়মের বিরুদ্ধে মাঠে নামেন তিনি।

দুটি ইলিশ প্রজনন মৌসুমে তিনি নিয়মভঙ্গকারী ১২৪ জন জেলেকে কারাদন্ড প্রদান করেন। এছাড়া গত বছর মা ইলিশ রক্ষা অভিযানে সিরাজগঞ্জ সদরে ১১৬ জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- প্রদান করে ইলিশ রক্ষায় অবদান রাখেন। যা এখনও সিরাজগঞ্জ সদরবাসীর মুখে প্রশংসিত।

চৌহালী উপজেলা থেকে সকল পাবলিক পরীক্ষায় নকল মুক্ত করেছিলেন। শুধু তাই নয় চৌহালী উপজেলায় কর্মকালীন ৩৩ সপ্তাহে ৩৪ টি বাল্যবিবাহ বন্ধ করেন। এরপর বদলি হয়ে আসেন সদর উপজেলায় সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে। এখানে ১৮ মাসে ২১৬ টি বাল্যবিয়ে বন্ধ করেন।

এসময়ে বাল্যবিবাহ বন্ধে সদর উপজেলায় বাইশ লক্ষ বেয়াল্লিশ হাজার টাকা জরিমানা এবং ০৬ (ছয়) জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করেন। গত জুলাই মাসে বেলকুচি উপজেলার নির্বাহী অফিসার হিসেবে যোগদান করেই বাল্যবিবাহ, ইভটিজিং, মাদক ও জুয়া বন্ধে মাঠে নামেন।

বেলকুচি উপজেলায় আগস্ট মাসে ০৮ টি,সেপ্টেম্বর মাসে ৩১ টি এবং অক্টোবর মাসে অদ্যবধি ১৩ টিসহ মোট ৫২ টি বাল্যবিবাহ বন্ধ করেন।তিনি ইতোমধ্যে বেলকুচি উপজেলায় একদিনে ৮ টি বাল্যবিবাহ বন্ধ করে রেকর্ড সৃষ্টি করেছেন। তিনি চৌহালী উপজেলায় ৩৪ টি ও সদর উপজেলায় ২১৬ টি,বেলকুচি উপজেলায় ৫২ টিসহ মোট ৩০২ টি বাল্যবিবাহ নিজে উপস্থিত হয়ে বন্ধ করেছেন।

তিনি বাল্যবিবাহ বন্ধে বিভিন্ন গ্রামে গিয়ে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে মা-বাবাদের বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে সচেতন করেন। সিরাজগঞ্জ সদরে কর্মকালীন সময়ে তিনি প্রায় সকল উচ্চ বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার ছাত্র ছাত্রীদের বাল্যবিবাহ, ইভটিজিং, মাদক ও জুয়া সম্পর্কে সচেতন করেন এবং সামাজিক ব্যাধিগুলো দূর করার জন্য কার্যকর ভূমিকা রাখতে সহযোগিতা চান। উপজেলা প্রশাসনের মোবাইল নাম্বার সরবরাহ করে সামাজিক ব্যাধিগুলো সম্পর্কে তথ্য চান।

এছাড়া বাল্যবিবাহ থেকে রক্ষা পাওয়া অসহায় গরীব ৩ ছাত্রীর পড়াশুনার দায়িত্ব নিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আনিসুর রহমান।

সচেতন মহলের প্রত্যাশা ইউএনও আনিসুর রহমানের মতো যদি সবাই যার যার অবস্থান থেকে এগিয়ে আসে তবে বাল্যবিবাহের অভিশাপমুক্ত হবে লাখো শহীদের রক্তে রাঙা লাল সবুজের প্রিয় মাতৃভূমি।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বেলকুচি (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি এম মুছা। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.