বাবার অপকর্ম ঢাকতেই রাবি ছাত্রলীগ নেতা ‘মেসবাহ’র ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশ


নিজস্ব প্রতিবেদক: বাবা আব্দুস সাত্তার কাদেরী (৫৮) সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়ের করা মামলার এজহারভুক্ত আসামী। মামা আব্দুল গণি মাস্টার দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলা জামায়াতের বর্তমান আমির।

এই হলো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মো. মেজবাহুল ইসলামের পারিবারিক পরিচয়।

মেজবাহুল নিজেও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির হওয়ার আগে ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

এমনকি বাবা আব্দুস সাত্তারের নানা অপকর্ম ঢাকতেই মেসবাহুল রাবি ক্যাম্পাসে এসে ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশ করে অভিযোগ উঠেছে।

তবে বাবার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী মামলা এবং মামার রাজনৈতিক পরিচয়ের বিষয়টি স্বীকার করলেও নিজে ছাত্রলীগের একজন একনিষ্ঠ কর্মী বলেই দাবি করেছেন ছাত্রলীগের এই নেতা।

মেজবাহুল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী এবং দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামের মো. আব্দুস সাত্তার কাদেরীর ছেলে।

গত শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে Joya Hasan Diya” নামের এক ফেসবুক একাউন্টের একটি পোস্টে মেজহুলের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আনা হয়েছে।

পোস্টে ২০১৭ সালে তার (মেজবাহুল) পিতা মো. আব্দুস সাত্তার কাদেরীর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়ের করা একটি মামলার চার্জশীটের কপি সংযুক্ত করে বলা হয়েছে, ‘এ কি করে ছাত্রলীগ এ পদ পদবি পায়, জঙ্গি মামলার আসামীর সন্তান এখন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি! সে নিজেও উপজেলা ছাত্রশিবিরের সহ-সভাপতি ছিল, তার মামা উপজেলা জামায়াতের বর্তমান আমীর…।’

ফেসবুকে পোস্টকৃত দিনাজপুর জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পক্ষ থেকে দায়ের করা মামলার চার্জশীটে দেখা গেছে, ২০১৭ সালের ২৯ জুলাই ডিবির এসআই মো. বজলুর রশিদ আদালতে চার্জশীটটি দাখিল করেন। চার্জশীটে মো. আব্দুস সাত্তারসহ তিনজনকে গোপন বৈঠকে মিলিত হওয়ার ষড়যন্ত্র করায় সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯ (সংশোধিত/২০১৩) এর ৮/১০ ধারা অপরাধ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। চার্জশীটে আব্দুস সাত্তার কাদেরীকে একজন পলাতক আসামী হিসেবেও দেখানো হয়েছে।

এব্যাপারে আদালতে চার্জশীট দাখিলকারী দিনাজপুর জেলা ডিবি পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. বজলুর রশিদ বলেন, ‘জেলা ডিবির এসআই মো. ফরিদুল ইসলাম দিনাজপুর কোতয়ালী থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি অভিযোগ (অভিযোগ নং-১১১৭) দায়ের করেন। পরবর্তীতে ২০১৭ সালের ২৯ জুলাই আমি আদালতে চার্জশীট দাখিল করি। মামলাটি বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন।’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘মেজবাহুলের বাবা নিষিদ্ধঘোষিত একটি জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। তার বড় ভাই কাহারোল উপজেলা ছাত্রশিবিরের সভাপতি ছিল। তার মামা আব্দুল গণি মাস্টার বর্তমান উপজেলা জামায়াতের আমির। এছাড়া সে নিজেও ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। মূলত বাবার অপকর্ম ঢাকতেই মেজবাহুল ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশ করেছে।’

কাহারোল উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক শেখর কুমার দাস বলেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার আগে তাকে কখনো ছাত্রলীগ করতে দেখিনি। তবে তার মামা উপজেলা জামায়াতের বর্তমান আমির।

বর্তমানে জামায়াত-শিবির ‘আন্ডারগ্রাউন্ড’ এর দল হয়ে গেছে। সে আগে শিবির করতো কিনা তা আমার জানা নেই। এছাড়া শুনেছি তার বাবার বিরুদ্ধে সন্ত্রাস আইনে মামলা রয়েছে।’

তবে অভিযুক্ত রাবি শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মো. মেজবাহুল ইসলাম বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘সামনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মেলন রয়েছে। সম্মেলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে আমার একটা আবেদন আছে। আর ষড়যন্ত্রকারীরা এটা বুঝতে পেরে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার ছড়াচ্ছে বলে আমি বিশ্বাস করি।’

তিনি বলেন, ‘একটি ফেসবুক আইডি থেকে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার ছড়ানো হচ্ছে। সেখানে বলা হয়েছে, আমি নাকি উপজেলা ছাত্রশিবিরের সহ-সভাপতি ছিলাম। কিন্তু ছাত্রশিবিরের সহ-সভাপতি নামে কোনো পদবি নাই। এতেই প্রমাণিত হয়, আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।’

পিতার বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মামলার বিষয়ে সত্যতা আছে। আমার বাবা উপজেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িত। তবে ওই মামলায় বাবার নাম থাকাতে হতবাক আমরাও হয়েছি। আদালত এখনো চার্জশীট গ্রহণ করেননি। চার্জশীটের ওপর শুনানি চলছে। আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীরা বুঝতে পেরেছে যে, মামলা দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি হবে এবং আমার বাবা জয়ী হবে এজন্য তারা এই বিষয়টা সামনে এনেছে।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার মামা উপজেলা জামায়াতের আমির ঠিক আছে। তবে তার সাথে আমার আদর্শগত মিল থাকতে হবে তা তো নয়।’

এব্যাপারে রাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সার আহম্মেদ রুনু বিটিসি নিউজকে বলেন, ‘আমরা বিষয়টি শুনেছি। আমরা তার ব্যাপারে খোঁজখবর নিচ্ছি। অভিযোগ প্রমাণিত হলে আমরা তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি আমজাদ হোসেন শিমুল। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.