বাগমারায় ইউপি নির্বাচনে সহিংসতার শঙ্কা, ভয়ভীত প্রদর্শনের অভিযোগ


বাগমারা প্রতিনিধি: রাজশাহীর বাগমারায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন আগামীকাল বুধবার। উপজেলায় ৫ম ধাপে ১৬টি ইউনিয়নে একযোগে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। নির্বাচনকে ঘিরে ক্ষমতাসীন দল আ’লীগের দলীয় নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্ব›দ্বীদের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের নানা অভিযোগ পাওয়া গেছে। নির্বাচনে সহিংসতা বেড়ে যাওয়ায় ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। একে অপরের বিরুদ্ধে নির্বাচনী অফিস ভাংচুর সহ হামলার অভিযোগ তুলছেন।
নির্বাচন উপলক্ষ্যে উপজেলা বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনী অফিস গুড়িয়ে দিয়েছে বলে স্বতন্ত্র একাধিক প্রার্থী অভিযোগ করেছেন। তবে ইতি মধ্যে অবাধ, সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা নির্বাচনী মাঠে ব্যাপক পর্যবেক্ষন শুরু করছে।
এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ঘোষিত তফশিল অনুযায়ী বাগমারায় ১৬ টি ইউনিয়নে ১৫৩ টি ভোট কেন্দ্রে ভোট অনুষ্ঠিত হবে বুধবার। এতে ৭২টি কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ধরা হয়েছে। নিবাচনের আগে সহিংসতায় ঝুঁকিপুর্ণ কেন্দ্র গুলো আইন র্শংখলাবাহিনীর তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। সবগুলো ভোট কেন্দ্রেই যাতে করে কেউ কোন ধরণের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে এবং ভোটাররা শান্তিপূর্ণ ভাবে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট প্রদান করতে পারেন সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখছেন স্থানীয় প্রশাসন। ইতিমধ্যে বিষয়টি সম্পর্কে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাগমারা থানার ওসি মোস্তাক আহম্মেদ।
এবারে উপজেলায় নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৬৪ হাজার ১৩৭ জন। নির্বাচনে ৫৪ জন চেয়ারম্যান, ৫২৮ জন সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ১৬৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্ব›দ্বীতা করছেন। প্রার্থীরা একে অপরের কর্মী ও সমর্থকদের বিরুদ্ধে পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা, হামলা ও ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানোসহ নানা অভিযোগ করেছেন নির্বাচন অফিসসহ সংশ্লিষ্ট উর্ধতন প্রশাসনেরর নিকটে বলে প্রার্থরা দাবি করেছেন।
সোনাডাঙ্গা ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোজাফ্ফর হোসেন জানান, সোমবার সোনাডাঙার এক মসজিদে মাগরিবের নামাজ পর বাইরে আসলে নৌাকার প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী আজাহারুল হকের নেতা কর্মী তাকে ঘিরে ধরে। এসময় তার সমর্থকরা এগিয়ে আসলে তাদের উপর হামলা চালানো হয়। এতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে নৌকার সমর্থকরা ভরট্রো গ্রাম তার নির্বাচনী ক্যাম্প পুড়িয়ে দেয় বলে অভিযোগ করেন মোজাফ্ফর হোসেন। এসময় তারা তার কর্মীদের ধাওয়া করে ভোট কেন্দ্রে না আসার হুমকি দিয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
একই ভাবে বড় বিহানালী ও গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহমুদুর রহমান মিলন বলেন, নৌকার প্রার্থীদের নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে অফিস ভাংচুর ও ভোট কেন্দ্রে না যাবার হুমকি দিচেছ। তিনি বলেন, সোমবার তার হরিনমারা ও মন্দিয়াল এলাকায় তার দু’টি নির্বাচন অফিস প্রতিপক্ষ ক্ষমতাসীন দলের নৌকা প্রতীকের রেজা ও তার সমর্থকরা গতকাল পুড়িয়ে দিয়েছে। এছাড়া গোয়ালকান্দি ইউনিয়নে স্বতনন্ত্র প্রার্থী আব্দুল মজিদ খাঁনের নির্বাচনী অফিস পুড়িয়ে ফেলাসহ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছেন আ’লীগ সমর্থিত আলমগীর সরকারের লোকজন বলে দাবি করেন।
তিনি বলেন, তার সমর্থকদের উপর হামলা চালিয়ে একের পর এক জনকে পিটিয়ে আহত করছেন বাড়ি থেকে বের হতে দেয়া হচ্ছে না। গত কয়েক দিন ধরে তার নির্বাচন অফিস ভাঙচুর, হামলা ও কর্মীদের নির্বাচন কেন্দ্র না যাবার হুমকি দেয়া হচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। একের পর এক হামলায় কর্মী, সমর্থক ও ভোটররা আতংকিত হয়ে পড়েছেন বলে তিনি দাবি করেন।
এদিকে এতো সব নিয়ে বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা উপজেলা নির্বাচন অফিস, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানায় অভিযোগ করছেন। অভিযোগে ভোটাররা সহিংসতার আশঙ্কা করছেন। ভোট কেন্দ্রে যাওয়া নিয়ে রয়েছে তাদেরও শঙ্কা।
এসব ঘটনায় অধিকাংশ ক্ষমতাসীন নেতা কর্মীদের ইন্ধনে হয়েছে বলে এমনটি দাবি স্থানীয় বিরোধী দল বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
উপজেলার বড়বিহানালী ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহমুদুর রহমানের এক কর্মী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জানান, ক্ষমতাসীন দলের চাপে তার কোন ঠাসা হয়ে পড়েছেন। একই ভাবে ঝিকরা ইউনিয়নের এক স্বতন্ত্র প্রার্থী জানান, ক্ষমতাসীন দলের দাপটে তারা টিকতে পারছেন না।
এছাড়া গোয়ালকান্দি, আউচপাড়া, মাড়িয়া নরদাশ ইউনিয়নসহ অধিকাংশ স্বতন্ত্র ও বি এনপি’র প্রার্থীদের ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়া স্থানীয় দাঙ্গাবাজরা স্থানীয় ভোটারদের ভোট দিতে ভয়ভীতি প্রদর্শণ করছেন বলে সংশ্লি¬ষ্ট ইউনিয়নের একাধিক প্রার্থী সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেছেন।
তারা আরো জানান এবারে নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আ’লীগের দলীয় প্রার্থীদের তোড়ে বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী কোন ঠাসা হয়ে পড়েছে। তবে সুষ্ঠ নির্বাচন হলে উপজেলার অধিকাংশ ইউনিয়নে ক্ষমতাসীন দলের মনোনীত প্রার্থীর ভরাডুবি হবে এমনটি মত পোষন করেছেন তারা।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারুক সুফিয়ানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিটিসি নিউজকে বলেন, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনায় সকলের সুযোগ সুবিধা ও নির্বাচন সুষ্ঠ করতে আমারা কাজ করছি। কোন ভাবে নির্বাচনে বিশৃংখলাকারীদের প্রভাব খাটানোর সুযোগ নেই। প্রতিটি নির্বাচনী এলাকা পর্যবেক্ষণে র‌্যাব ও পুলিশের পাশাপাশি স্ট্রাইকিং ফোর্স ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করবেন। সুষ্ঠু নির্বাচনে প্রশাসন তার দায়িত্ব পালন করে যাবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বাগমারা প্রতিনিধি মোঃ আফাজ্জল হোসেন / রাজশাহী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.