বশেমুরবিপ্রবিতে হতাশায় ভুগছেন প্রায় ৪৯.৫ শতাংশ শিক্ষার্থী 

বশেমুরবিপ্রবি প্রতিনিধি: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি)   শিক্ষার্থীদের ওপর পরিচালিত আত্মহত্যা বিষয়ক এক জরিপে দেখা গেছে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রায় ৪৯.৫ শতাংশ শিক্ষার্থী হতাশাগ্রস্ত এবং ১৪.৭% শিক্ষার্থী বিগত এক বছরে (মার্চ-এপ্রিল ২০১৮ থেকে মার্চ-এপ্রিল ২০১৯) আত্নহত্যা বিষয়ক চিন্তা করেছেন।
Centre for Health Innovation, Networking, Training, Action and Research – Bangladesh এর উদ্যোগে এ গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন এবং বশেমুরবিপ্রবির অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক ইসতিয়াক রায়হান। এছাড়া গবেষণাটির সার্বিক তত্বাবধানে ছিলেন ইংল্যান্ডের নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মার্ক গ্রিফিটস।
গত ২৬ অক্টোবর “Springer” এর “International Journal of Mental Health and Addiction” জার্নালে এ সংক্রান্ত গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে। গবেষণাটিতে মোট ৬৬৫ শিক্ষার্থীর তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে যাদের মধ্যে ৬৭.৫% ছাত্র। এতে দেখা যায় প্রায় ৬১.১% শিক্ষার্থী জীবনে একবার এবং ১৪.৭% শিক্ষার্থী বিগত এক বছরে (মার্চ-এপ্রিল ২০১৮ থেকে মার্চ-এপ্রিল ২০১৯) আত্নহত্যা বিষয়ক চিন্তা করেছেন। বিশেষ করে জরিপে মেয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে অধিক আত্মহত্যা বিষয়ক চিন্তা পরিলক্ষিত হয়েছে। বিগত এক বছরে প্রায় ১৭. ৬% নারী শিক্ষার্থী আত্মহত্যার চিন্তা করেছেন।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে সম্পর্কে বিচ্ছেদ, ডিপ্রেশন, এনজাইটি, এবং সোশাল মিডিয়া এডিকশন আত্নহত্যা বিষয়ক চিন্তার মূল ক্রিয়ানক। গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বশেমুরবিপ্রবির প্রায় ৪৬.৩% শিক্ষার্থী মানসিক চাপে, ৪৯.৫% শিক্ষার্থী হতাশায়, ৫৭.০% শিক্ষার্থী উদ্বেগে এবং ৩৭.৯% শিক্ষার্থী ফেসবুক এডিকশনে ভুগছেন।
এ বিষয়ে গবেষণা পরিচালনাকারী বশেমুরবিপ্রবির অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ইসতিয়াক রায়হান বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, “আত্মহত্যা বিষয়ক চিন্তার এই হার অন্যান্য গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফলের তুলনায় ৪-৫% বেশি। আর করোনার প্রভাবে এই হার আরও বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে গুরুত্ব প্রদান করা জরুরি।”
এসময় তিনি আরও বলেন, “এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় একটি কাউন্সেলিং সেন্টারের কার্যক্রম শুরু করতে পারে এবং সেখানে একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দিতে পারে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ন সম্পর্ক রয়েছে এমন শিক্ষকরাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন। এর পাশাপাশি বর্তমান করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে একটি হটলাইন নাম্বার চালু করা যেতে পারে যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদেরকে সহজেই নিজেদের সমস্যা জানাতে পারবে এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ গ্রহণ করতে পারবে।”
বশেমুরবিপ্রবির শিক্ষার্থী উপদেষ্টা ড. মো: শরাফত আলী বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, “আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে রুম সংকট থাকায় এখন পর্যন্ত কাউন্সেলিং সেন্টারের কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হয় নি। তবে বিষয়টি আমি উপাচার্য মহোদয়কে জানিয়েছি। রুম সংকট সমাধান হলে আমরা কাউন্সেলিং সেন্টারের কার্যক্রম শুরু করবো এবং আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষকদের সাথে আলোচনা করে চেষ্টা করবো কোনো অভিজ্ঞ মনোরোগ বিশেষজ্ঞকে এখানে এডভাইজার হিসেবে যুক্ত করার। এছাড়া হটলাইন সেবা চালু করা যায় কি না এ বিষয়েও উপাচার্য মহোদয়ের সাথে আলোচনা করবো।
এ বিষয়ে বশেমুরবিপ্রবির উপাচার্য ড. এ.কিউ.এম মাহবুব বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, “ শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন পরামর্শ প্রদানসহ মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিতে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়েই কাউন্সেলিং সেন্টার থাকে এবং শিক্ষার্থীদের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়েও অবশ্যই কাউন্সেলিং সেন্টারের কার্যক্রম শুরু করা হবে। আর এই মহামারী পরিস্থিতি যদি আরও দীর্ঘায়িত হয় তাহলে টেলিমেডিসিন সেবাও চালু করা হবে।”
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বশেমুরবিপ্রবি (গোপালগঞ্জ) প্রতিনিধি নওরীন বর্না। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.