বরিশালে মাদক নিরাময়কারীদের নির্যাতনে যুবকের মৃত্যু, গ্রেপ্তার-৫


বরিশাল ব্যুরো: বরিশাল নগরীতে চিকিৎসার জন্য মাদক নিরাময় কেন্দ্রে নেয়ার সময় এক মানসিক রোগীকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে।

এই ঘটনায় ‘ড্রীম লাইফ মাদকাসক্ত ও মানসিক রোগ চিকিৎসা কেন্দ্রে’র পরিচালকসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এই ঘটনায় নিহতের স্বজন বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছে ।

গতকাল বুধবার (০২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় বরিশাল নগরীর ২৫ নম্বর ওয়ার্ড রূপাতলী বাংলাদেশ বেতার বরিশাল (রেডিও সেন্টার) এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।

নিহত মো. সুমন খান (৩৫) ওই এলাকার বাসিন্দা মো. আব্দুস সাত্তার খানের পুত্র। দীর্ঘদিন যাবত সে মানসিক রোগে (অপ্রকৃতস্থতা) ভুগছিলেন।

আটকরা হলেন- মাদক নিরাময় কেন্দ্র পরিচালক মো. বাপ্পি সিকদার, কেন্দ্রের স্বেচ্ছাসেবক মো. রায়হান ও মো. রাব্বি এবং কেন্দ্রের পুরাতন রোগি উজ্জল সমাদ্দার ও মো. বায়েজিদ।

ঘটনার সত্যতা বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেন কোতয়ালী মডেল থানার ওসি (তদন্ত) এ আর মুকুল।

তিনি জানান, ঘটনার পরপরই পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে র‌্যাব-৮ এর হাতে আটক ড্রিম লাইফ মাদক নিরাময় কেন্দ্রের পরিচালক সহ ৫ জনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়।

তিনি আরও জানান, মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। এই ঘটনায় নিহতের স্বজন বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

নিহত সুমনের মা খাদিজা বেগম জানান, সুমনের কিছুটা মানসিক সমস্যা ছিলো। বিভিন্ন অযুহাতে সে আমাকে সহ বাসার অন্যান্য স্বজনদেরও মারধর করতো। এই কারণে তাকে এর আগেও ৬ মাস ড্রিম লাইফ মাদক নিরাময় কেন্দ্রে রাখা হয়। গত দেড়মাস যাবত সে বাসায় ছিলো।

গত মঙ্গলবার (০১ সেপ্টেম্বর) রাতে পূর্বের ন্যায় বিভিন্ন অযুহাতে আমাকে মারধর শুরু করে। বিষয়টি সুমনের অপর দুই ভাইকে জানানো হলে তারা আবারো ড্রিম লাইফ সেন্টারে ফোন করে ঘটনা জানায়।

গতকাল বুধবার (০২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় কেন্দ্র থেকে ৬/৭ জন লোক আসে সুমনকে নিয়ে যাওয়ার জন্য।

খাদিজা বেগম জানান, বাসায় অবস্থানরত পরিবারের সদস্যদের কিছু না বলেই হঠাৎ আমার ছেলে সুমনকে টানাহেচড়া শুরু করে মাদক নিরাময় কেন্দ্রের সদস্যরা। এসময় আমার ছেলে যেতে না চাইলে তারা সুমনকে বেধম মারধর করে এবং ঘরে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়।

তারা সুমনকে ঘর থেকে বাহিরে বের করে মাটিতে ফেলে ৩/৪জন পিঠের উপর উঠে বসে। অন্যরা বস্তা দিয়ে তার মুখ চেপে ধরে। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে সুমন নিস্তেজ হয়ে পরে।

নিহতের ভাতিজা শিবলী খান বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, পরিবারের সদস্যদের সামনে এমন লোমহর্ষক ঘটনা প্রত্যক্ষ করলেও নিরাময় কেন্দ্রের লোকজনের তান্ডব দেখে কেউ তাদের প্রতিরোধের সাহস পায়নি।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বকুল বেগম বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, মাদক নিরাময় কেন্দ্রের লোকজন সুমনকে নিতে কৌশলী হননি। তারা পশুর ন্যায় হাত-পা বেঁধে নেওয়ার চেষ্টা করায় এমন ঘটনা ঘটেছে।

তিনি আরও জানান, নিহত সুমনকে উলঙ্গ করে মারধর করা হয়।

স্থানীয় ২৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাকির মোল্লা বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, সুমন একই এলাকায় ড্রীম লাইফ নামে একটি মাদক নিরাময় কেন্দ্রে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন ছিলেন। মঙ্গলবার থেকে সে আবারও পূর্বের মত বাসার লোকজনদের মারধর শুরু করে। এই জন্য নিরাময় কেন্দ্রের লোকজন তাকে নেওয়ার জন্য এসে অকথ্য মারধরে অজ্ঞান হয়ে যায় সুমন।

স্বজনরা তাকে শেবাচিম হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক সুমনকে মৃত ঘোষণা করেন।
এই খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকাবাসী মাদক নিরাময় কেন্দ্রের ৫ জনকে ঘেরাও করে পাশ্বর্তী র‌্যাব-৮ এর প্রধান কার্যালয়ে খবর দেয়। পরে র‌্যাবের একটি টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের আটক করে কোতয়ালী মডেল থানায় সোপর্দ করে।

ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী থানার উপ-পরিদর্শক ফিরোজ আল মামুন বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। এই ঘটনায় নিহতের ছোট ভাই নোমান খান বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন।

আটকদের ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে এবং আজ বৃহস্পতিবার (০৩ সেপ্টেম্বর) আসামীদের আদালতে প্রেরণ করা হবে বলেও জানান তিনি।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বরিশাল ব্যুরো প্রধান আল মামুন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.