প্রায় ৩ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে মৎস্য চাষীদের বাগেরহাটের সাড়ে ৪ হাজার ঘের পানিতে ভেসে গেছে

বাগেরহাট প্রতিনিধি: ঘূর্নিঝড় আম্পানের প্রভাবে সৃষ্ট জলচ্ছাসে বাগেরহাট জেলার ৪ হাজার ৬‘শ ৩৫টি মৎস্য ঘের পানিতে ভেসে গেছে। পানির সাথে ঘের ও পুকুরে থাকা সকল মাছ বের হয়ে গেছে।

বাগেরহাট জেলার রামপাল, মোংলা, বাগেরহাট সদর, মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা ও কচুয়া উপজেলার সবথেকে বেশি মৎস্য ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চাষীদের স্বপ্ন ও ভরসা ভেসে গেছে বানের জোয়ারে।

সরকারি হিসেবে এতে প্রায় ২ কোটি ৯০ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে চাষীদের। তবে বেসরকারি হিসেবে ঘের ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমান আরও অনেক বেশি।

বাগেরহাট জেলা চিংড়ি চাষী সমিতির সভাপতি ফকির মহিতুল ইসলাম সুমন বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, ঘূর্নিঝড় আম্পানের ফলে সৃষ্ট জলচ্ছাসে বাগেরহাটের বিভিন্ন উপজেলার অন্তত ১০ হাজার মাছের ঘের পানিতে ভেসে গেছে। এতে চাষীদের অপূরনীয় ক্ষতি হয়েছে। সরকারি হিসেবের থেকে চাষীদের ক্ষতি আরও বেশি হয়েছে বলে দাবি করেছেন মৎস্যচাষীদের এই নেতা।

চাষীরা বলছেন, ঝড়ে জেলার কোথাও কোথাও ভেড়িবাঁধ ও রাস্তা উপচে এবং কোথাও কোথাও বেড়িবাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানি ঢুকে শতশত মাছের ঘের ভেসে গেছে। ঘেরের মাছ বেরিয়ে গেছে। এতে আমরা দারুণ আর্থিক ক্ষতির মূখে পড়েছি।

সরকার এই মাছ চাষীদের জন্য সহায়তা দেয়না বলে অভিযোগ করেছেন অনেক চাষী।

বাগেরহাট সদর উপজেলার মাঝি ডাঙ্গা গ্রামের নারী মৎস্য চাষী হালিমা বেগম বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, গতকাল রাতের ঝড় ও জলচ্ছাসে আমার ঘেরের মাছ বের হয়ে গেছে। সকালে ঘেরে গিয়ে নেট দিয়েছি। কিন্তু মাছ যা বের হওয়ারতো রাতেই বের হয়ে গেছে।

রামপাল উপজেলার নান্টু মল্লিক বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, ঘেরে বিক্রয় যোগ্য অনেক মাছ ছিল এবং নতুন করেও কিছু পোনা ছেড়েছিলাম। সব মাছ বের হয়ে গেছে। করোনায় দুই মাস ধরে আয় বন্ধ। বিক্রয় যোগ্য মাছের দাম কম থাকায় বিক্রিও করতে পারিনি। এর মধ্যে আবার আম্পানে ভাসিয়ে নিয়ে গেল সব মাছ। শুধু আমার নয় এই উপজেলার অনেকেরই ঘেরের মাছ এভাবে বের হয়ে গেছে।

বাগেরহাট জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মামুনুর রশীদ বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, করোনা পরিস্থিতি ও আম্পান পরবর্তী ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে সরকারের পক্ষ থেকে মানবিক সহয়তা প্রদান শুরু হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে ঢেউটিন ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ অব্যাহত থাকবে।

তিনি আরো বলেন, ‘আম্পানে ক্ষয়-ক্ষতির তালিকা নিরূপণ করার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. কামরুল ইসলাম বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আশ্রয়কেন্দ্রে আসা মানুষদের খাবার ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা করেছি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় রিং বেড়িবাঁধ দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি চলছে।বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. খালেদ কনক বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের জোয়ারের জলোচ্ছাস ও অতিবর্ষণে উপকূলীয় বাগেরহাটের ৪ হাজার ৬‘শ ৩৫টি মৎস্য ঘের ভেসে গেছে। এতে চাষীদেও ২ কোটি ৯০ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

এর ফলে আমাদের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বাগেরহাট জেলায় ৭৮ হাজার ১০০টি মাছের ঘের রয়েছে। চলতি অর্থ বছরের প্রায় ৩৩ হাজার মেট্রিকটন মাছ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বাগেরহাট প্রতিনিধি মাসুম হাওলাদার। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.