প্রবাসীদের ভিসার মেয়াদ বাড়ানো হবে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

বিশেষ (ঢাকা) প্রতিনিধি: মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে যেসব বাংলাদেশী নাগরিক ছুটিতে দেশে এসেছেন বা যারা নতুন করে সেসব দেশে যেতে ভিসা করেছেন তাদের ভিসার মেয়াদ বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন।

আজ বৃহস্পতিবার (১২ মার্চ) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় মধ্যপ্রাচ্যের পাঁচটি দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

সারা বিশ্বে মহামারী আকার ধারণ করা করোনাভাইরাস প্রতিরোধে করণীয় ঠিক করতেই এই বৈঠকের আয়োজন করা হয়। বৈঠকে সৌদি আরব, আরব আমিরাত, কাতার, কুয়েত ও ইরাকের রাষ্ট্রদূতরা অংশগ্রহণ করেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যের অনেক প্রবাসী ছুটিতে দেশে এসেছেন, তারা আবার ফেরত যাবেন। সম্প্রতি তাদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরী হয়েছে। তাদের সেসব অনিশ্চয়তা দূর করতে আমরা পাঁচ দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। তারা বলেছে, বাংলাদেশের জন্য কোনো বাধ্যবাধকতা রাখেনি। প্রবাসী যারা দেশে এসেছেন তাদের প্রত্যেকেরই ভিসার মেয়াদ বাড়ানো হবে। কোনো ধরনের অসুবিধা তাদের হবে না।’

নভেল করোনাভাইরাস ‘কোভিড-১৯’ ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে সৌদি আরব আপাতত ওমরাহ ব্যবস্থা বন্ধ করেছে। অন্যদিকে বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশ থেকে ভ্রমণকারীদের প্রবেশের ওপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে কাতার। কুয়েত সাময়িকভাবে সব ধরনের ভিসা বন্ধ রেখেছে। তবে এখন পর্যন্ত সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইরান ভিসা বন্ধের কোনো ধরনের নির্দেশনা দেয়নি।

করোনা ইস্যুতে এই পাঁচটি দেশের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘সৌদি আরবের প্রতিনিধি বলেছেন, তাদের দেশে আপাতত ওমরা ভিসাটা বন্ধ আছে। প্রবাসী যারা দেশে এসেছেন তারা প্রত্যেকেরই ভিসার মেয়াদ বাড়াবেন। যে যেখানে কাজ করতেন সেখানে গিয়ে করতে পারবেন। আমিরাত খোলা আছে। কাতারে স্থগিতাদেশ উঠে গেলে সেখানে বাংলাদেশিরা যেতে পারবেন। কুয়েত আপাতত সব ফ্লাইট বন্ধ রেখেছে, এটা সাময়িক। ইরাক বন্ধ করে নাই।’

অন্যদিকে যেসব বাংলাদেশী প্রবাসে রয়েছেন তাদের তাড়াহুড়ো করে দেশে না ফিরতে পরামর্শ দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বলেছেন, ‘আপনারা সেখানে অবস্থান নেন। তাড়াহুড়ো করে দেশে ফিরবেন না। সে দেশের দিক নির্দেশনা মেনে চলুন। কোনো সমস্যা হলে আমাদের মিশনগুলোতে যোগাযোগ করুন। আমাদের মিশনগুলো ২৪ ঘণ্টা আপনাদের জন্য খোলা রয়েছে। আর যারা জরুরি প্রয়োজনে দেশে আসেন তারা ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন। তারপর বাইরে বের হবেন।’

এদিকে আগামীকাল শুক্রবার (১৩ মার্চ) থেকে নির্দিষ্ট কিছু সেক্টর ব্যতীত সব দেশের নাগরিকদের জন্য ভিসা বন্ধ করতে যাচ্ছে ভারত। আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত এই স্থগিতাদেশ কার্যকর থাকবে। পাশাপাশি আজ শ্রীলঙ্কাও অন-অ্যারাইভাল ভিসা বন্ধ করেছে।

এমন পরিস্থিতে বাংলাদেশ কেন করছে না পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা চারটি দেশের জন্য অন-অ্যারাইভাল ভিসা বন্ধ করেছি। চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি ও ইরান। তবে প্রয়োজন হলে আরও বন্ধ হতে পারে। আমরা সতর্ক রয়েছি। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। খামোখা আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। যদি প্রয়োজন হয় আমরা বন্ধ করব।’

এই চারটি দেশ থেকে যারা বাংলাদেশ আসতে চান তারা হেলথ সার্টিফিকেট নিয়ে এলে ভিসা দেওয়া হবে- বলেন মোমেন।

চীনের উহান প্রদেশে সর্বপ্রথম করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা গেলেও এখন চীনের বাইরে ইতালি, ইরান, দক্ষিণ কোরিয়া, জার্মানিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এটি খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। গতকাল বুধবার (১১ মার্চ) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) পক্ষ থেকে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবকে বৈশ্বিক মহামারী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

করোনা ইস্যুতে গণমাধ্যম ও ডব্লিউএইচও’র সমালোচনা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বলেন, ‘মিডিয়ার কারণে করোনা ইস্যুটা বেশী প্যানিকি হয়েছে। আর এইদিকে ডব্লিউএইচও মহামারি ঘোষণা করায় হইচই হচ্ছে। যদি আপনি দেখেন, মাত্র কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে। এটা স্বর্দি-জ্বরের মতো। খামোখা আতঙ্কিত হবেন কেন?’

ভারতে বাংলাদেশ ফ্লাইট বন্ধ হওয়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মোমেন বলেন, ‘যারা ভারতে গেছেন তারা ধৈর্য ধরে থাকেন সেখানে। কিছুদিন অপেক্ষা করেন। আর যদি আসতে চান তাহলে নিষেধাজ্ঞার আগেই দ্রুত দেশে চলে আসেন।’

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বিশেষ (ঢাকা) প্রতিনিধি মো: ফারুক আহম্মেদ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.