প্রতি আমের গাছের মূল্য মাত্র ২১৩ টাকা !

নাটোর প্রতিনিধি: এ যেন শায়েস্তা খাঁর আমলকেও হার মানিয়েছে। প্রতিটি আমগাছ বিক্রি করা হয়েছে মাত্র ২১৩ টাকায়। বরেন্দ্র বহুমুখি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) এমন ঠিকাদারপ্রীতির কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে সাধারণ মানুষ। পরে বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ার তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে স্থানীয়দের মধ্যে।

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, পুষ্টির চাহিদা পুরণ এবং বন্য প্রাণীদের জন্য প্রাকৃতিক খাবার উৎস গাছগুলো ২১৩ টাকায় বিক্রি করে অনেকটা বিতর্কের জন্ম দিয়েছে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ।

বিএমডিএ অফিস সূত্র জানায়, পুষ্টির চাহিদা পুরণ এবং পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ২০০৭-০৮ অর্থ বছরে বড়াইগ্রামের বনপাড়া থেকে নাটোর পর্যন্ত মহাসড়কের উভয় পাশে আমসহ অন্যান্য ফলদ গাছ রোপন করে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ)। গত বছর থেকে ওই সব গাছে ফল আসা শুরু করে।

মহাসড়কের পাশে হওয়ায় এসব গাছের ফল খেয়ে পথচারীদের যেমন পুষ্টির চাহিদা পূরণ হতো, তেমনি বন্যপ্রাণীদের জন্য তৈরি হতো প্রাকৃতিক খাবার। কিন্তু এ বছর প্রকল্পের ব্যয় সংকোচন ও আয় বৃদ্ধির অযুহাত নাটোর সদর উপজেলার গাজীর বিল এলাকায় নির্মাণাধীন নাটোর এলপিজি ফিলিং স্টেশনের সংলগ্ন নাটোর-ঢাকা মহাসড়কের এক পাশের ৪৫টি আমগাছ মাত্র ৯ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি করেছে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্প।

এতে প্রতিটি আমগাছের মূল্য পড়েছে মাত্র ২১৩ টাকা। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের টেন্ডারে অংশ নিয়ে গাছগুলো কিনেছেন পার্শ্ববর্তী লক্ষ্মীপুর গ্রামের আমীর আলী।

আজ বুধবার (৬ মে) সকালে গাছ কাটার সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে দুই গণমাধ্যমকর্মীর ওপর চড়াও হন আমীর আলী ও তার লোকজন।

জানা যায়, গত ৮ মার্চ বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ পাবনার দাশুরিয়া হতে নাটোর মহাসড়কের পাশে ৯৬ কিলোমিটার পর্যন্ত ৪৫টি আম গাছ বিক্রির জন্য নিলাম আহ্বান করে। ওই নিলামে অংশ নিয়ে নির্বাচিত হন আমীর আলী।

এ সংক্রান্ত তথ্য জানিয়ে গত ৩রা মে আমীর আলী বরাবর গাছ কর্তনের কার্যাদেশ প্রেরণ করেন বরেন্দ্রর নাটোর জোনের সহকারী প্রকৌশলী আহসানুল করিম। প্রকৌশলীর মনোনীত প্রতিনিধির উপস্থিতিতে গাছ কাটার নির্দেশনা দেয়া হয়। তবে সকালে বরেন্দ্রর কোনো প্রতিনিধির উপস্থিতি ছাড়াই গাছ কাটা শুরু করেন আমীর আলী।

স্থানীয়রা বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, এসব গাছের প্রতিটিতে আম ধরেছিল। ক’দিন আগেও গাছগুলোতে আমের থোকা ঝুলছিল। কার্যাদেশ প্রাপ্তির পর তড়িঘড়ি করে ক্রেতা আমীর আলী আমগুলো সংগ্রহ করে গাছগুলো কাটা শুরু করেন। প্রতিটি গাছ থেকে প্রায় ১০ মণ খড়ি পাওয়া যাবে যার বাজার মূল্যই আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা।

এভাবে গাছপ্রতি ন্যুনতম আড়াই হাজার থেকে ২৭০০ টাকা লোকসানে বিক্রি করেছে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। এতে সরকারের প্রায় ১ লাখ ১২ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে।

নিলাম প্রক্রিয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে গাছের ক্রেতা আমীর আলী রাগান্বিত হন। তিনি বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, ‘আমি যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে নিলামে নির্বাচিত হয়েছি। আমি সাংবাদিকদের নিলামের ব্যাপারে বলতে বাধ্য নই। সাংবাদিকরা আমাকে টাকা দেয় না যে তাদের কথা শুনতে হবে।’

পথচারী আব্দুল মালেক বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, মহাসড়কের পাশে লাগানো আমগাছগুলো গত বছর থেকে আম ধরতে শুরু করেছে। আশপাশের লোকজন এসব গাছে ছায়ার নীচে বসে থাকে। আবার অনেক সময়পাকা আম গাছ থেকে লোকজন পেরে খায়। এছাড়া পশু-পাখিরাও গাছের আমগুলো খায়। কিন্তু আম গাছগুলো কেটে বিক্রি করে দেয়ার কারণে হতাশ হয়েছি আমরা।

এ ব্যাপারে বরেন্দ্রর নাটোর জোনের সহকারী প্রকৌশলী আহসানুল করিমের বক্তব্য জানতে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তার খোঁজে অফিসে যাওয়া হলে অফিসের নিরাপত্তা কর্মী আবদুল বারেক বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, এখন কেউ অফিস করেন না। তিনি নিজেই শুধু পাহারা দেন। গত দুই-তিনদিনে কেউ আসেননি। গাছ কাটার ব্যাপারে কোনো আদেশ প্রদান করা হয়েছে কি না বলতে পারবো না।

জেলা প্রশাসক মোঃ শাহরিয়াজ বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, খুবই নগণ্য দামে গাছগুলো বিক্রির কথা শুনেছি। বিষয়টি তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উল্লেখ্য, গত বছর এসবগাছের প্রতিটা গাছের আম ১৬ টাকায় বিক্রি করে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হয়ছিল বরেন্দ্র কর্তৃপক্ষ।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নাটোর প্রতিনিধি খান মামুন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.