পুকুর গিলে খাচ্ছে ১২ গ্রামের মানুষের চলাচলের রাস্তা জনদুর্ভোগ চরমে


নাটোর প্রতিনিধি: নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার বিপ্রবেলঘড়িয়া ইউনিয়নের বৈদ্যবেলঘড়িয়ায় ১২ গ্রামের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র রাস্তাটি পুকুরে গিলে খাচ্ছে। এই রাস্তা দিয়ে হাজার হাজার মানুষের চলাচল করে।
একমাত্র গ্রামীণ রাস্তা ভেঙ্গে যাওয়ায় চরম জনদুর্ভোগে পড়েছেন এলাকাবাসী। এর কারণ হিসেবে স্থানীয় লোকজন দায়ী করেছেন পুকুরের প্রভাবশালী মালিক মিঠু মিয়াকে। সরকারি রাস্তাকে পুকুরের পাড় বানিয়ে ব্যবহারের কারণে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটি পুকুরের আগ্রাসনে হারিয়ে যেতে বসেছে।
বর্তমানে ৪ টি ড্রেজার দিয়ে পুরাতন পুকুর খনন করার কারণে ঝুঁকিতে রয়েছে পুকুরের পাশের জামে মসজিদ ,ঈদগাহ ও গ্রামের একমাত্র চলাচলের রাস্তা। যে কোন সময় ভেঙ্গে যেতে পারে এসব স্থাপনা। এ নিয়ে গ্রামবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এক্ষুণি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে জনগণকে ভোগান্তিতে পড়তে হবে।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়,পুকুরের মালিক মিঠু মিয়া নিজের স্বার্থে মাছ চাষের জন্য রাস্তার পাশের সরকারী জায়গা পুকুরের গর্ভে ঢুকিয়ে দিয়ে রাস্তাকে পুকুরের পাড় হিসেবে ব্যবহার করছেন।
যার ফলে জনগুরুত্বপূর্ণ সরকারী এই রাস্তা ভেঙ্গে গিয়ে জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে।দীর্ঘ দিন ধরে তারা এই পুকুরে মাছ চাষের ব্যবসা করে আসছেন। মাছ চাষে তিনি লাভবান হলেও ক্ষতি হচ্ছে ওই গ্রামের মানুষের চলাচলের একমাত্র সরকারী রাস্তার। এলাকার কৃষকগণ তাদের উৎপাদিত ফসল এ পথ দিয়ে বাসুদেবপুর এবং এলাকার বৃহৎ হাট নলডাঙ্গায় নিয়ে গিয়ে কেনা-বেচা করতো।
এ ছাড়া এলাকার শত শত শিক্ষার্থী এ সড়ক দিকে শীশচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়, ডাঃ নাসির উদ্দীন কলেজ, বাসুদেবপুর সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ এবং নলডাঙ্গা শহীদ নাজমুল হক সরকারি কলেজে আসা যাওয়া করে। অনতিবিলম্বে পুকুরের পাশে গাইড ওয়াল দিয়ে রাস্তাটি দ্রুত সংস্কারের দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বৈদ্যবেলঘড়িয়া গ্রামের এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন ১২টি গ্রামের হাজারো মানুষ আসা-যাওয়া করে। রাস্তাটির পাশেই বিশাল পুকুরটির অবস্থান। পুকুরে পাড় না থাকায় রাস্তাটির একটা বড় অংশ ইতিমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে চারটি ড্রেজার দিয়ে খনন করে পুকুরের মাটি বিক্রি করা হচ্ছে স্থানীয়দের কাছে। অপরিকল্পিত ড্রেজিংএর কারণে ঝুঁকিতে পরেছে নবনির্মিত একটি মসজিদ,ঈদগাহ সহ আশেপাশের ঘড়বাড়ি।
ভ্যানচালক খলিল মিয়া,আহাদ আলী এবং মাসুম জানান, রাস্তাটিকে পুকুরের পাড় হিসেবে ব্যবহারের কারণে ধসে গেছে। এখন একটা ভ্যান,রিকশায় যেতে পারেনা ।আমাদের চার কিলোমিটার ঘুরে ১০ টি গ্রামে যেতে হচ্ছে।
বৈদ্যবেল ঘড়িয়া গ্রামের কৃষক ওয়ারেজ আলী বলেন, গত ৬ বছর ধরে পুকুরটা যেন কাল হয়ে দাড়িয়েছে জনগুরুতপূর্ণ এই রাস্তাটির। পুকুরের গাইড ওয়াল না দেওয়ার কারণে যেকোনো সময়ে পাঁয়ে হেঁটে চলাচলও বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
ইউনিয়ন যুবলীগ সভাপতি জিয়াউর রহমান বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, পুকুরটির মালিক মিঠু মিয়া অনেক প্রভাবশালী।
গ্রামবাসীকে সব সময় হুমকি ধামকি দেয়। যেভাবে সরকারি রাস্তা পাড় বানিয়ে পুকুরটি পুনরায় খনন করা হচ্ছে। এতে করে যেকোনো সময় বৃষ্টি হলে এবং পুকুরে পানি দিয়ে মাছ চাষ শুরুকরা হলে রাস্তাটি পুকুরে বিলীন হয়ে যেতে পারে।
পুকুর মালিক মিঠু মিয়া বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন,পুকুরের কারণে রাস্তাটি ভেঙ্গে পরেছে এটা ঠিক। কিন্তু আমি রাস্তা রক্ষায় কিছু করতে পারবো না। গ্রামবাসীর ক্ষমতা থাকলে করুক। সরকারীভাবে এটা সংস্কার করতে হবে।
সরকারি রাস্তাটি পাড় বানিয়ে ৪ টি ড্রেজার দিয়ে পুকুর পুনরায় খনন করার বিষয়ে জানতে চাইলে পুকুরের মালিক মিঠু মিয়া বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, আমি নলডাঙ্গা উপজেলা প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে ড্রেজার দিয়ে মাটি কেটে বিক্রি করছি। অনুমতির কাগজ পরে দেখাতে পারবো।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুখময় রায় বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, বিষয়টি আমার জানা ছিলো না। সবেমাত্র জানলাম। কাউকে ড্রেজার দিয়ে মাটি কেটে বিক্রির অনুমতি দেয়া হয়নি ।যদি কেউ সরকারি রাস্তা পুকুর পাড় বানিয়ে পুকুর খনন করে থাকে তাহলে অভিযুক্তর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নাটোরের জেলা প্রশাসক শামীম আহম্মেদ বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন,আমি ঘটনাস্থলে অফিসের লোক পাঠাচ্ছি বিষয়টি খোঁজ নেয়ার জন্য।বিধিমোতাবেক প্রত্যকটি পুকুরের পাড় রাখতে হবে। ওই এলাকাবাসী উপজেলা প্রশাসনকে জানালে বিধিলঙ্ঘনকারী পুকুর মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। দ্রুতই রাস্তার সমস্যাটি সমাধান করা হবে জানান তিনি।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নাটোর প্রতিনিধি খান মামুন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.