পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি অভিযানে এবছর শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: অধিকৃত পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে চলতি বছর দেশটির সেনাবাহিনীর অভিযানে শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। সবশেষ শনিবার পূর্ব জেরুজালেমে একজন ১৮ বছর বয়সী তরুণকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
এর আগের দিন জেনিন শহরের একটি বাড়িতে মিসাইল ছুড়ে একজন সন্দেহভাজন বন্দুকধারীসহ আরও তিনজনকে হত্যা করা হয়।
এখন পর্যন্ত চলতি বছরেই পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের জন্য ২০১৫ সালের পর থেকে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বেশিরভাগই নিহত হন ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী ও বেশ কয়েকজন সশস্ত্র ইসরায়েলি বেসামরিক লোকদের গুলিতে।
এমন প্রেক্ষিতে মানবাধিকার সংগঠনগুলো শঙ্কা প্রকাশ করছে এবং তাদের পরিসংখ্যান বলছে যে, নিহত ফিলিস্তিনিদের প্রায় এক পঞ্চমাংশই তরুণ-কিশোর, যাদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ ১৪ বছর বয়সী এক কিশোর। 
পশ্চিম তীরে নিহত সর্বকনিষ্ঠ এই ফিলিস্তিনি কিশোরের নাম মোহাম্মদ সালাহ। গত ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে নিহত হয় সে।
এদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ সপ্তাহে একটি সাত বছরের শিশুর হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু হওয়ার বিষয়টি তদন্ত করে দেখার আহ্বান জানিয়েছে। শিশুটির ভাই পাথর ছুড়েছে অভিযোগ তুলে তাদের বাড়িতে অভিযান চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। যদিও ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর দাবি, প্রাথমিক তদন্তে অভিযান ও ছেলেটির মৃত্যুর মধ্যে কোনো সম্পর্ক পাওয়া যায়নি।
ফিলিস্তিনি নিহতদের তালিকায় রয়েছে সশস্ত্র বন্দুকধারী, কিশোর ও যুবক- যারা কথিত পাথর বা পেট্রোল বোমা নিক্ষেপের পরে গুলিবিদ্ধ হন। নিরস্ত্র বেসামরিক লোক, পথচারী, বিক্ষোভকারী এবং ইসরায়েলি বসতিবিরোধী কর্মীরাও রয়েছেন এই তালিকায়। ইসরায়েলি সৈন্যদের ওপর ছুরি হামলা বা অন্য অস্ত্র নিয়ে সন্দেহভাজন হামলাকারী ব্যক্তিরাও রয়েছেন নিহতদের তালিকায়।
ফিলিস্তিনের কর্মকর্তারা এই বলে অভিযোগ করছেন যে, পশ্চিম তীরকে ‘হত্যার ক্ষেত্র’ বানিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী।
গত বসন্তে, আরব ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের হামলায় ১৬ জন ইসরায়েলি ও দুইজন বিদেশি নিহত হন। এরপর থেকেই পশ্চিম তীরে প্রায় প্রতিরাতে সেনা অভিযান অব্যাহত রাখে ইসরায়েল।
ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বলেছিলেন যে, তারা ক্রমবর্ধমান সন্ত্রাসবাদের হুমকি মোকাবেলা করবে। জেনিন ও নাবলুসের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় অভিযান চলাকালে প্রায়শই তরুণ, সদ্য সশস্ত্র বিদ্রোহীদের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে।
যদিও উত্তর পশ্চিম তীরে এমন নিরাপত্তাহীন পরিবেশের জন্য ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন একে অপরকে দোষারোপ করছে।
এক বিবৃতিতে ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ) বলেছে, ‘সহিংস দাঙ্গা এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ দমনে তারা গুলি চালায়। তাদের দাবি, একজন ফিলিস্তিনি নিহত হলেও সামরিক বাহিনীর তদন্ত টিম কাজ করে, প্রকৃত ঘটনা কি ছিল তা খুঁজে বের করার জন্য। যদি অভিযানে নিহত হতো তাহলে তাৎক্ষণিকভাবে অপরাধ তদন্ত করে দেখা হতো না’।
গত আগস্টে, জাতিসংঘের তৎকালীন মানবাধিকারবিষয়ক প্রধান মিশেল ব্যাসেলেট বলেছিলেন, অনেক ক্ষেত্রে ‘জবাবদিহিতার অভাব’ রয়েছে। রয়েছে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগও।
১৯৬৭ সালে ৬ দিনের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় পশ্চিম তীর দখল করে নেয় ইসরায়েল। এরপর থেকে বিভিন্ন দফায় সেখানে বসতি স্থাপন করেছে ইহুদিবাদী কর্তৃপক্ষ। পশ্চিম তীরে বর্তমানে প্রায় ছয় লাখ ইসরায়েলি ইহুদির বাস। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী একে অবৈধ বলে বিবেচনা করা হয়। (সূত্র: বিবিসি)। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.