পলাশবাড়ীতে মোবাইল ফোন আসক্তিতে বাড়ছে কিশোর অপরাধ

গাইবান্ধা প্রতিনিধি: মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট, স্মার্ট ফোন, ডিভাইস ও প্রযুক্তির ভালো দিকগুলো সবারই কমবেশি জানা। প্রযুক্তি মানুষের জীবনে যেমন সুফল বয়ে এনেছে, তেমনি এর অতিরিক্ত ব্যবহারে রয়েছে নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। ইন্টারনেটের মাধ্যমে দুনিয়া হাতের মুঠোয়।
জানা যায়, অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহার শারীরিক ও মানসিক সমস্যা সৃষ্টির জন্য দায়ী।
পলাশবাড়ী উপজেলার ফিফটি পার্সেন্ট পরিবারের স্কুল,কলেজ পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকেরা জানান, তাদের সন্তানরা বতর্মানে মোবাইল ফোন নিয়ে বেশি সময় কাটায়।
মোবাইলে অনলাইন ক্লাস এর কথা বলে তারা বিভিন্ন ধরনের ভিডিও গেমস, মিডিয়া সাইড গুলোর দিকে ঝুঁকে পড়ছে। আমরা কিছু বল্লেই রাগান্বিত হয়ে চেচিয়ে ওঠে। মানসম্মানের ভয়ে কিছু বলি না। কারণ যুগযামানা খারাপ হয়ে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে এক সময় ভবিষ্যৎ প্রজম্ম মেধাশূন্য হয়ে পড়বে।
বতর্মানে শিশুকে খাবার খাওয়ানোর সময়ও মোবাইলে গেমস চালু করে দিতে হয়। সে কি খেল তা অভিভাবক নিজেও জানে না। এখান থেকেই সে মোবাইলে আসক্ত হয়ে পড়ছে। এটা এক ধরনের নেশায় পরিণত হচ্ছে।
উপজেলার সচেতন অভিভাবক অনেকেই জানান, মোবাইলের ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে। এখন ছোট ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে সর্ব বয়সী ছেলে-মেয়েরা খেলাধুলা ছেড়ে মোবাইল নিয়ে বসে স্কুল ঘরের বারান্দায়, পরিত্যক্ত কোন বিল্ডিংয়ের ছাদে, খোলা মাঠে,বাঁধের ধারে,নিরিবিলি কোন পুকুর পাড়ে, বাড়ীর ছাদে বা কোন স্কুল-কলেজ মাঠে। ঘন্টার পর ঘন্টা মোবাইল নিয়ে বসে থাকে। খেলাধুলার প্রতি তাদের কোন আগ্রহ নেই।
অতিরিক্ত মোবাইল ব‍্যবহারে নানা ধরনের ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। কানে কম শুনা, চোখে ঝাপসা দৃষ্টি, দৃষ্টি শক্তির সমস্যা, খাবার অরুচি, ঘুমের সমস্যা,স্নায়ু সমস্যা,মাথা ব‍্যাথা ও ঘাড় ব‍্যাথাসহ নানাবিধ শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। শুধু ছোট ছেলে মেয়েদেরই নয় বয়স্কদের এই সব সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে।
বিশেষ করে মোবাইলের নীল আলো বেশি ক্ষতিকর। মাঝে মধ্যে কানে হেড ফোন নিয়ে গাড়ি চালানো বা রাস্তা পারাপারেও ঘটছে নানা দূর্ঘটনা।
মোবাইলফোন বয়স্কদের চেয়ে ছোট শিশুদের জন্য হুমকি স্বরূপ। তারা পড়াশোনা না করে এক ধরনের মানসিক রোগীতে পরিণত হচ্ছে। কথা বললেই অল্পতে রোগে যায়।
কেহ কেহ বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, অনেক পারিবারিক কলহের সৃষ্টি হয় ছেলে- মেয়েদের মোবাইল না দিলে।
ব্যক্তিগত থেকে শুরু করে পারিবারিক, সামাজিকসহ অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত বিপদ ডেকে আনতে পারে মোবাইলফোনের অতিরিক্ত ব্যবহার। মোবাইল ফোন ব্যবহারে সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় হচ্ছে,কিশোর অপরাধ বৃদ্ধি পাচ্ছে । সচেতন এলাকাবাসী বলছেন, পারিপার্শ্বিক নানা কারণে অপরাধীর তালিকায় নাম এসেছে অল্পবয়সীদের।
আইন-শৃঙ্খলার পাশাপাশি পারিবারিক শিক্ষার অভাবেও অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। অনেক অভিভাবক সন্তান আনন্দ পাবে ভেবে মোবাইল ফোন দিয়ে থাকে ছোট্ট শিশুর হাতে। এতে সে সাময়িক আনন্দ পেলেও শিক্ষা ও চরিত্র নষ্ট হচ্ছে। তাই চরিত্র গঠনের প্রতি অভিভাবকদের মনোযোগ দেয়া দরকার।
দেখা যায়, ফেসবুকের মাধ্যমে গ্রুপ তৈরী করেও অপরাধ করছে কিশোরেরা। ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোনের কুপ্রভাবে অনেকে আকৃষ্ট হচ্ছে। বাড়ছে কিশোর অপরাধ। এই সব ছেলে মেয়েরা শুধু পাড়া প্রতিবেশীর জন্য নয়, নিজের পরিবারের জন্যও বিপদজনক। মাদকের টাকার জন্য সন্তান পিতামাতাকে হত্যা করছে এটা বর্তমানে হরহামেশেই ঘটছে।
সুশীল সমাজের লোকজন মনে করছেন, বতর্মানে সামাজিক কর্মকাণ্ড, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হচ্ছে না, খেলার মাঠ কমে এসেছে ,পিতা- মাতার ব্যস্ততার কারণে সন্তানকে সময় দিতে পারছে না। সামাজিকভাবে অনুষ্ঠানের আয়োজন না থাকায় কিশোরেরা সাইবার জগতে ঢুকছে।দেখছে ফেসবুক, ইউটিউব। অনেকে আবার পর্নোগ্রাফির দিকে এগিয়ে চলছে। বিপথগামী হচ্ছে এই সব সন্তানরা, জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন অপরাধে।
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা, মোহাম্মদ আনিছুর রহমান বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, পরিবার ও সামাজিকভাবে সঠিক পরিচর্যা ও পর্যবেক্ষণ করলে, সন্তানের প্রতি অভিভাবকেরা সময় দিলে কিশোর অপরাধ কমবে। তাদের সব সময় ভালো কাজে উৎসাহ দিতে হবে। খেলাধুলার সুযোগ করে দিতে হবে। খুন, অপরাধ বিষয়ক কোনো টিভিশো না দেখাই ভালো। শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান দেখবে। রাগ করা যাবে না। সন্তানের সাথে বন্ধুর মতো থাকতে হবে। র্স্মাটফোন না দিয়ে পজিটিভ কাজে এগিয়ে দিতে হবে। এতে শিশু কিশোর অপরাধ কমে যাবে বলে আশা করেন তিনি ।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুজ্জামান নয়ন বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, শিশু কিশোরদের মানবিক বিকাশে পরিবারের সদস্যদের এগিয়ে আসতে হবে। তাদের সময় দিতে হবে। সপ্তাহে অন্তত তাদের প্রিয় কোন জায়গায় নিয়ে যেতে হবে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর গাইবান্ধা প্রতিনিধি মোঃ শাহরিয়ার কবির আকন্দ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.