নিজের অফিস আদেশ নিজেই অমান্য করলেন রাবি উপাচার্য 

রাবি প্রতিনিধি: করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় দেওয়া অফিস আদেশ ভঙ্গের কারণে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিংয়ে হট্টগোল ও তর্ক-বিতর্ক হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান তার নিজের অফিস আদেশ অমান্য করার পরিপ্রেক্ষিতে কয়েকজন অধ্যাপকের সঙ্গে এই তর্ক-বিতর্ক হয় বলে জানা গেছে।
একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিং সূত্রে জানা যায়, করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে গতকাল মঙ্গলবার একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিংয়ের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দফতর থেকে যে অফিস আদেশটি পাঠানো হয়েছিল, সেখানে বলা হয়েছিল, ‘মিটিংটি সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত হবে‌ এবং সিনেট ভবনে কেবল বিভাগীয় চেয়ারম্যান, ইনস্টিটিউটের পরিচালক, নির্বাচিত প্রতিনিধি, অনুষদ অধিকর্তা, লাইব্রেরি প্রশাসক ও সিন্ডিকেট সদস্যরা উপস্থিত থাকতে পারবেন। অন্য অধ্যাপকরা অনলাইনে মিটিংয়ে যুক্ত হবেন।
তবে মিটিংয়ের শুরুতেই সিনেট ভবনে ওই অফিস আদেশে উল্লিখিত ব্যক্তিরা ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন অধ্যাপক উপস্থিত ছিলেন। এ নিয়ে মিটিংয়ের শুরুতেই ক্ষোভ প্রকাশ করে উপাচার্যের কাছে প্রশ্ন তোলেন ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক সুলতা উল ইসলাম।
তিনি উপাচার্যকে বলেন, ‘উপাচার্য যে অফিস আদেশ দিয়েছেন, সেই আদেশের বাইরে সিনেট ভবনে অন্য শিক্ষকরা কেন উপস্থিত আছেন?’
তখন উপাচার্য বলেন, সিনেট ভবনে অন্য যেসব অধ্যাপক উপস্থিত আছেন, তারা উপাচার্যের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন যে, তাদের প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে তারা অনলাইনে যুক্ত হতে পারবেন না। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সিনেট ভবনে মিটিংয়ে অংশ নেওয়ার অনুমতি দেয়া হয়।
তখন অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম উপাচার্যকে তার অফিস আদেশ অমান্য করেছেন বলে দুঃখ প্রকাশ করতে বলেন। তিনি বলেন, ‘আপনি যদি অফিস আদেশের নিচে লিখে দিতেন- যারা অনলাইনে যুক্ত হতে পারবেন না, তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সিনেট ভবনে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হবে। ’  এভাবে নানান প্রশ্নে সিনেট ভবনে শুরু হয় হট্টগোল এবং উপাচার্যের সঙ্গে নানান বিষয় নিয়ে তর্ক শুরু হয়। একপর্যায়ে সুলতান-উল-ইসলামকে উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবাহান বলেন, ‘আপনি অনেক বেশি কথা বলছেন।
আপনি ভালোভাবে কথা বলতে পারেন না। আপনাকে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হবে না। ’ তখন অধ্যাপক সুলতান উল ইসলাম বলেন, ‘কথা বলার সুযোগ তো আপনি তৈরি করে দিয়েছেন। আপনি নিজের অফিস আদেশ নিজেই অমান্য করেছেন। এ কারণে আমরা কথা বলছি।
এভাবে আপনি নিজের নিয়ম নিজে অমান্য করেন এবং নিজের ইচ্ছামত কাজকর্ম চালিয়ে যান আর এক ধরনের স্বেচ্ছাচারীমূলক আচরণ করেন। ’
একপর্যায়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ইকরাম উল্যাহ মিটিংয়ে একটি নিন্দা প্রস্তাব উত্থাপন করেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির যে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে, সে বিষয়ে উপাচার্যের প্রতি নিন্দা প্রস্তাব রাখেন। তখন তার প্রস্তাবে সমর্থন দেন মনোবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক এনামুল হক। তখন অধ্যাপক এনামুল হককে লক্ষ্য করে উপাচার্য বলেন, আমার কাছে গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে, আপনারা মিটিংয়ে ওয়াকআউট করে একটা ঝামেলা তৈরি করতে পারেন। সরকারি কাজে বাধা দিতে পারেন। ’
উপাচার্যের এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে সিনেট ভবনে হইচই শুরু হয়ে যায়। ফলে নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে শুরু হয় একাডেমিক কমিটির এই মিটিং।
এ বিষয়ে সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক মো. আব্দুল আলিম বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, একাডেমিক কমিটির মিটিংয়ের শুরুতে কিছু ঝামেলা হয়েছিল। এ কারণে নির্ধারিত সময়ে মিটিং শুরু করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে যখন তর্ক-বিতর্ক ও হট্টগোল থেমে যায় তখন মিটিং শুরু হয়।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর রাবি প্রতিনিধি মো: মুজাহিদ হোসেন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.