নামকাওয়াস্তে খনন প্রকল্প: চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার পূণর্ভবা-মহানন্দা নদী এখন মরা খাল!


চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি: মোটা অংকের অর্থ খরচ করে খনন করার পরও চাঁপাইনবাবগঞ্জের পূণর্ভবা-মহানন্দা নদী এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। নামকাওয়াস্তে খনন করে কাজ শেষ করায় শুধু অর্থ খরচ হয়েছে সরকারের, লাভ হয়েছে ঠিকাদারসহ সংশ্লিষ্টদের। সফল হয়নি সরকারের টাকা খরচ করার পরিকল্পনা।
অপরিকল্পিত ও লোক দেখানো খনন করায় এই অবস্থা বলে ক্ষুদ্ধ জেলার কৃষক ও সাধারণ মানুষ। খনন না করায় পলি জমে ভরাট হয়ে নৌ-চলাচল প্রায় সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেছে। ব্যবসা-বাণিজ্য ভাটা পড়ে দিন দিন অর্থনীতি পঙ্গু, অন্যদিকে কৃষি উৎপাদনে দারুণ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হওয়াতে আজ ৪টি উপজেলাবাসীর জন্য এক অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ৪টি উপজেলাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবী তাদের প্রধান সমস্যা পূণর্ভবা-মহানন্দা নদী সংস্কার, কিন্তু সংস্কারের কোন বাস্তব পরিকল্পনা নেয়া হয়নি। ফলে খাল-বিল শুকিয়ে যাচ্ছে।
নলকৃপে পানি না পেয়ে সেচের অভাবে উপজেলার হাজার হাজার একর জমির ফসল উঠাতে দ্বিগুন খরচ করে কৃষকরা সর্বস্বান্ত হয়। পানির খরচ যোগাতে মহাজনদের নিকট চড়া সুদে ঋণ নিয়ে কৃষকরা অনাহারে অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছে। অনেক কৃষক হালের বলদও বিক্রয় করে ঋণ পরিশোধ করে সংসার চালাচ্ছে।
এভাবে পূণর্ভবা-মহানন্দা নদীর উপর নির্ভরশীল ভোলাহাট, গোমস্তাপুর, নাচোল ও সদর উপজেলার অর্থনীতি দিনদিন ঝিমিয়ে পড়ছে। ভোলাহাট, পোল্লাডাঙ্গা, মুশরীভূজা, দলদলী, আলমপুর, কাশিয়াবাড়ী, শামপুর, ব্রজনাথপুর, আলিনগর, মকরমপুর, গোমস্তাপুর, চৌডালা, মুল্লিকপুর, গোবরাতলা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মহানন্দা নদী চাঁপাইনবাবগঞ্জের মোহনপুরে পদ্মা নদীতে গিয়ে মিশেছে।
এদিকে, মহানন্দা নদী দিয়ে বর্ষাকালে পাহাড়ি ঢলে ভারত থেকে নেমে আসা পানিতে পলি ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে পানি উপচিয়ে নদীর উভয় তীরের আবাদী ফসল ভাসিয়ে নিয়ে যায়। অপরদিকে, পলি ও বালি এসে ফসলি জমি ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ফলে বালি চাপা পড়ে জমির ফসল অনাবাদী হয়ে যাচ্ছে। পাহাড়ী ঢলের সাথে বালু এসে প্রায় ৪০ কিঃ মিঃ উত্তর-দক্ষিণ দিকে গোমস্তাপুর, মল্লিকপুর, চৌডালা, মকরমপুর, আলিসাহাপুর, ভোলাহাট পর্যন্ত পলি জমে মহানন্দা নদীর বিলীন হতে চলেছে।
এদিকে, চলতি শুকনো মওসুমে রোকনপুর থেকে ১১ মাইল দীর্ঘ কাজিগ্রাম পর্যন্ত বর্ষাকালে লঞ্চ চলাচল করে। অন্য সময় উক্ত এলাকাবাসীর বিকল্প পথ হিসেবে বাসে যাতায়াত করে। মহানন্দা নদীতে পানির অভাবে ৪টি উপজেলার প্রায় হাজার হাজার বিঘা জমির ফসল প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে মার খাচ্ছে। নদী দুটি শুকিয়ে যাবার কারণে পাওয়ার পাম্পগুলো অকেজো হয়ে পড়েছে।
অপরদিকে, মরণ বাঁধ ফারাক্কার প্রভাবও কম দায়ী নয় বলে এলাকাবাসী জানান। সচেতন মহল জানান, আশার আলো, চাঁপাইনবাবগঞ্জে রাবার ড্রাম নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলেছে। এটির নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হলে নদীর পানি দিয়ে কয়েক হাজার বিঘা জমি চাষাবাদ করা যাবে এবং উৎপাদিত ফসল দিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ দেশ খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতার দিকে একধাপ এগিয়ে যাবে। তবে নদীর গভীরতা রক্ষায় সঠিকভাবে নদী খনন করে পূণর্ভবা-মহানন্দা নদী রক্ষায় এগিয়ে আসবেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এমনটায় আশা জেলাবাসীর। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.