নাটোরে স্বাক্ষর জাল করে তিন বছর ধরে ১০ টাকা কেজির চাল উত্তোলন

নাটোর প্রতিনিধি: নাটোর শহরের তেবাড়িয়া ইউনিয়নে হতদরিদ্রদের জন্য সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি ১০ টাকা কেজি দরের চাল বিতরণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তালিকা অনুযায়ী যাদের নামে মাসের পর মাস চাল উত্তোলন করা হচ্ছে তারা তা জানেনেই না। মানুষের নাম খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির তালিকায় থাকলেও করোনার মধ্যেও তাদের ভাগ্যে জোটেনি চাল। মাসের পর মাস বছরের পর বছর তাদের স্বাক্ষর জাল করে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল তুলে নিয়েছে নাটোর সদর উপজেলার তেবাড়িয়া ইউনিয়নের ডিলার মামুনুর রশীদ বাবু ডিলারসহ একটি চক্র।

সরেজমিনে জানা যায়, নাটোর সদর উপজেলার বনবেল ঘড়িয়া গ্রামের সুফিয়া বেগম। দুই মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে অভাবের সংসারে প্রতিদিন তাকে যুদ্ধ করতে হয়। তিন বছর আগে ভোটার আইডি কার্ড দিয়ে তেবাড়িয়া ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুল আজিজ ভোলার মাধ্যমে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে আবেদন করেন তিনি । তালিকা প্রণয়নের পরে তিনি ইউপি সদস্য ভোলার কাছে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কার্ড চাইলে তিনি বলেন তোমার কার্ড হয়নি ।সম্প্রতি সুফিয়া জানতে পারে তিন বছর ধরে তার নামে চাল উত্তোলন করা হচ্ছে ।

এ গ্রামের প্রতিবন্ধী আলাউদ্দীনের স্ত্রী আন্জুয়ারা বেগম বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, তালিকায় নাম আছে কি-না জানতে অনেক বার স্থানীয় ডিলারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি কোনোভাবেই স্বীকার করেননি। তিন বছর পর জানতে পারেন আমার স্বামীর নামে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কার্ড হয়েছে। তার স্বাক্ষর জাল করে কার্ড থেকে ইতোমধ্যে ৫১০ কেজি চাল উত্তোলন করা হয়েছে । আমার প্রতিবন্ধী স্বামী কোন কাজ করতে পারেনা । তিন মেয়ে এবং এক ছেলেকে নিয়ে তিনি মানুষের বাসায় কাজ করে সংসার চালাচ্ছে।একই অভিযোগ করেছেন বনবেল ঘড়িয়া গ্রামের আবুল কাশেমের স্ত্রী তাসলিমা বেগম এবং আলাউদ্দীন প্রামাণিকের ছেলে বাবু প্রামাণিক।

এছাড়া ইউপি সদস্য আব্দুল আজিজ ভোলার বাবা আনার হোসেন ৩ বছর আগে মারা যাওয়ায় পরও তার নামে যথারীতি বছরের পর বছর উঠছে । এছাড়া ইউপি সদস্যর স্ত্রী পলি বেগমসহ ৫ জনের নামে ওএমএস কার্ডের সুবিদাভোগী বলে জানা যায় ।

খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির তালিকায় নাম থাকা বাবু মিয়া (৫০) বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির তালিকায় নাম থাকলেও বছরের পর বছর ধরে চাল ভোগ করছে স্থানীয় ডিলার মামুনুর রশীদ বাবু ও একটি চক্র। বিষয়টি জানাজানি হলে অভিযুক্ত ডিলার খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কার্ড ও কিছু টাকা ফেরত দিয়ে ইউপি সদস্য আব্দুল আজিজ ভোলার বিষয়টি গোপন করার চেষ্টা করছেন।

স্থানিয়রা আরো জানায়, গত ০৩-০৫-২০২০ তারিখে জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি ।কিন্তু এখন কোন পতিকার পাইনি।

ইউপি সদস্য আব্দুল আজিজ ভোলা বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ গুলো সঠিক নয় । ইউপি সদস্য গরিব হলে কি চাল নিতে পারবে না

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলার মামুনুর রশীদ বাবু বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী আমাকে চাল বিক্রির জন্য নিয়োগ করা হয়েছে। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির কার্ডধারী আমার আওতায় যারা আছেন তাদের যে কেউ সরকারের নিয়ম অনুযায়ী আমার কাছ থেকে ১০ টাকা কেজি দরে চাল কিনতে পারবেন। এই চাল বিক্রির সময় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অফিসার উপস্থিত থাকেন। তালিকা প্রণয়নে অনিয়ম থাকতে পারে কিন্তু আমার বিতরণে কোনো অনিয়ম হয়নি। আমাকে ফাঁসাতে প্রতিপক্ষ এসব অভিযোগ করেছে।

তেবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওমর আলী প্রধান বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে এমন ঘটনা ঘটলেও ভুক্তভোগী কেউ ইউনিয়ন পরিষদে বিষয়টি জানায়নি। এখন যেহেতু জানা গেছে তাই তালিকা অনুযায়ী সঠিকভাবেই চাল বিতরণ করা হবে। আর আমি এবার আইডি কার্ড এবং ছবি দেখে চাল দেওয়ার কথা বলার পর এবার ডিলারদের কাছে ৪৫ বস্তা চাল থেকে গেছে । এ চাল নেওয়ার লোক খুঁজে পাওয়া যায়নি ।

বনবেলঘড়িয়া গ্রামের গণমাধ্যম কর্মী সাব্বির আহমেদ বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল যদি যাচাই বাছাই করার পর একবার যদি বাঁচে ৪৫ বস্তা। তাহলে বছরে ২২৫ বস্তা চাল বাঁচে। তিন বছরে ৬৭৫ বস্তা চাল আত্মসাৎ করা হয়েছে। অসহায় গরীবের হক যারা মেরে দিয়েছে তাদের কঠোর বিচার হওয়া উচিত ।

নাটোর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জাহাঙ্গীর আলম বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, অভিযোগটি পাওয়ার পর আমি তদন্ত করে সত্যতা পাওয়ার পর কাডগুলো বাতিল করা হয়েছে। বিষয়টি অধিকতর তদন্ত চলছে । তদন্তে প্রমাণ পাওয়া গেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নাটোর প্রতিনিধি খান মামুন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.