নাটোরে চলনবিল সিটি সেন্টারে কর্মসংস্থান হবে ২০ হাজার তরুণ-তরুণীর

নাটোর প্রতিনিধি: নাটোরের সিংড়ায় ১৫ একর জায়গার ওপর নির্মাণ হচ্ছে চলনবিল ডিজিটাল সিটি সেন্টার। হাইটেক পার্ক, ইনকিবিউশন সেন্টার, টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ এবং টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার এই চারটি প্রতিষ্ঠান নির্মাণ হচ্ছে এক ছাদের নিচে। একই জায়গায় চারটি প্রতিষ্ঠান নির্মাণ হওয়ায় খুশি ফ্রিল্যান্সার সহ স্থানীয়রা।

তবে দুটি প্রকল্পের কাজ দৃশ্যমান হলেও আরো দুটি প্রকল্পের কাজ শুরুই হয়নি। কবে নাগাদ শুরু হবে তাও নিশ্চিত নয় কর্তৃপক্ষ। এছাড়া দৃশ্যমান দুটি প্রকল্পের ধীরগতির কাজ নিয়েও রয়েছে অসন্তোষ। তবে নির্দ্দিষ্ট সময়ের মধ্যে চারটি প্রতিষ্ঠানের কাজ শেষ হলে চলনবিলের অন্তত ২০হাজার তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির হবে বলে জানান আইসিটি প্রতিমন্ত্রী।

নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের শেরকোল এলাকার বিশাল এলাকা জুড়ে নির্মাণ করা হচ্ছে চলনবিল ডিজিটাল সিটি সেন্টার। ১৫একর জায়গার ওপর আইসিটি বিভাগের অধীনে ৪৩ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মাণ করা হচ্ছে একটি হাইটেক পার্ক, ১৫৪ কোটি টাকা ব্যায়ে শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং এন্ড ইনকিবিউশন সেন্টার, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধিনে ৩৪ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মাণ হচ্ছে সিংড়া টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ এবং প্রবাসী কল্যান ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২১ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মাণ হচ্ছে টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার।

ইতোমধ্যে হাইটেক পার্ক এবং গণপূর্ত বিভাগের অধীনে টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার নির্মাণের কাজ দৃশ্যমান হয়েছে। বাকি দুটি প্রকল্পের কাজ এখনও শুরুই হয়নি।বর্তমানে চারটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে হাইটেক পার্ক এবং টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার এর নির্মাণ কাজ চলছে দ্রুত গতিতে।

হাইটেক পার্কটি নির্মাণ করছে আনোয়ার ল্যান্ডমার্ক লিমিটেড এবং টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার নির্মাণ করছে নাটোরের বনপাড়ার মীম কন্সট্রাকশণ। তবে প্রকল্প দুটি পাইলিং সহ ৩০শতাংশ কাজ শেষ করেছে। রয়েছে কাজের ধীরগতির অভিযোগ। তবে কেন কাজের ধীর, সেবিষয়ে কথা বলেছেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলো।

কাজের ধীর গতি নিয়ে হাইটেক পার্ক নির্মাণ প্রকল্পের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আনোয়ার ল্যান্ডমার্ক লিমিটেড এর প্রজেষ্ট ম্যানেজার মশিউর রমহান বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, গত বছর আমাদের প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে। তবে কাজের অনুমতি দেরিতে পাওয়ার কারনে কাজ সমাপ্ত করা সম্ভব হয়নি। জায়গা সিলেকশানেও অনেক সময় দেরি হয়ে গেছে। তবে পাইলিং করার পর বণ্যা আসায় আবারও কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এই বছর কাজ শুরু করার পর অন্তত ৫০শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। আশা করছি ২০২০ সালের মধ্যে কাজ সমাপ্ত করা সম্ভব হবে।

চলনবিল ডিজিটাল সিটি সেন্টারে তৈরী হচ্ছে আরেকটি প্রতিষ্ঠান টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার। দক্ষ জনশক্তি এবং শ্রমিকদের দক্ষ করে বিদেশী পাঠানো জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার। এই ট্রেনিং সেন্টারে তৈরী করা হবে তিনটি ভবন। যার ব্যায় ধরা হয়েছে ২১ কোটি টাকা।

মীম কন্সট্রাকশন নামের একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এই ট্রেনিং সেন্টারের কাজ করছেন। গত বছর প্রকল্পটির কাজ শুরু হলেও বর্তমানে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ শেষ করেছে মাত্র ১০ভাগ। তাছাড়া ট্রেনিং সেন্টারটি নির্মাণ হলে সরকার ঘোষিত প্রতি বছর এক হাজার দক্ষ শ্রমিক বিদেশে পাঠানো সম্ভব হবে।

এবিষয়ে গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহেদুল ইসলাম বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, নানা সমস্যার কারণে প্রকল্পের কাজ খুব বেশি দুরে এগিয়ে যায়নি। মাত্র ১৫ভাগ কাজ শেষ করেছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এই সময়ে যেখানে ৬০ থেকে ৭০ভাগ কাজ শেষ করার কথা ছিল সেখানে মাত্র ১৫ভাগ কাজ করেছে তারা।

তবে নিচু জমি হওয়ার কারণে মালামাল নিয়ে যেতে সমস্যা হচ্ছে। এছাড়া চলনবিলের মাঝে হওয়ার কারণে বণ্যার পানি এবং বৃষ্টির জন্য কাজ করতে পারছেনা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। তবে নির্দ্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করতে হবে প্রতিষ্ঠানটির।

এদিকে, চলনবিল ডিজিটাল সিটি সেন্টার নির্মাণ হওয়ায় স্থানীয়দের পাশাপাশি আশার আলো দেখছেন চলনবিলের ফ্রিল্যান্সাররাও। চলনবিলের প্রত্যন্ত এলাকায় চারটির মধ্যে একটি হাইটেক পার্ক অন্যটি শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং এন্ড ইনকিবিউশন সেন্টার নির্মাণ হওয়ায় ফ্রিল্যান্সার তৈরীর কারিগর হবে এখানে। উন্নত প্রশিক্ষণ নিয়ে কর্মসংস্থানের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা আয় সম্ভব বলে জানান ফ্রিল্যান্সার।

সিংড়ার ফ্রিল্যান্সার এমিলি বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, চলনবিলে মূলত ধান সহ অন্যান্যে ফসল। শষ্য ভান্ডার হিসেবে সারা দেশের মানুষ চলনবিলবাসীকে চিনে এবং জানে। তবে চলনবিল ডিজিটাল সিটি সেন্টার নির্মাণ হলে সারা দেশের মানুষ নতুন করে চলনবিল তথা সিংড়ার মানুষকে চিনবে। এখানে উত্তরাঞ্চলের তরুণ-তরুণীরা প্রশিক্ষণ নিয়ে কর্মসংস্থান তৈরী করে বেকারত্ব ঘোচাতে পারবে।

আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলছেন, চলনবিল ডিজিটাল সিটি সেন্টার নির্মাণ হলে এখানে একখন্ড সিংঙ্গাপুর গড়ে উঠবে। অবহেলিত চলনবিলের শিক্ষিত বেকার যুবকরা ডিজিটাল সিটি সেন্টারে প্রশিক্ষণ নিয়ে সু-শিক্ষায় শিক্ষিত হলে অন্তত ২০ হাজার তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে এখানে। আর প্রকল্প পরিচালকদের দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান আইসিটি প্রতিমন্ত্রী।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নাটোর প্রতিনিধি খান মামুন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.