নাটোরে ক্লিয়ারেন্স এর নামে উৎকোচ গ্রহণ পুলিশ সুপারকে অভিযোগ : অতপর ফেরত

নাটোর প্রতিনিধি: নাটোরে ক্লিয়ারেন্স এর নামে উৎকোচ গ্রহণর পর পুলিশ সুপারকে অভিযোগ করায় তা ফেরত দেয়ায় বিষয়টি মুখরোচক আলোচনায় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। নাটোর সদর উপজেলার করোটা গ্রামের কৃ-রীয়ানা কুরআন শিক্ষা সোসাইটির মহা-পরিচালক ক্বা-রী হাফেজ মুফতি মুহাঃ আব্দুল করিম নাদভী নাটোরের পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ জানান, তিনি পবিত্র কোরআন শরিফ ছাপিয়ে সারাদেশে বিক্রি করার পাশাপাশি কোনআন শিক্ষার ক্লাস করান।

গত ৩০ নভেম্বর দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জ থানার হিলিরডাঙ্গা জামে মসজিদে আয়োজিত একটি শিক্ষক প্রশিক্ষণে কাজ শুরু করেন। এর এক ঘন্টার মধ্যেই নবাবগঞ্জ থানা পুলিশের লোকজন সেখানে এসে তার কাছে জানতে চান এখানে অনুষ্ঠানের কথা কেন পুলিশকে জানানো হয়নি।

তিনি উত্তরে জানান তার ছাত্ররা স্থানীয় সকল জনপ্রতিনিধিকে জানালেও পুলিশকে যে জানানো হয়নি তা জানা ছিলনা। পুলিশ এসময় তিনিসহ মোট ১৬জনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় এবং তার ক্লিয়ারেন্স এর জন্য নাটোর সদর থানায় ম্যাসেজ পাঠায়।

ম্যাসেজ পেয়ে নাটোর থানার কম্পিউটার অপারেটর এনামুল হক লিটুর সাথে একজনকে নিয়ে করোটায় তার কারখানায় যান। তারা কারখানার ম্যানেজার মোঃ আব্দুল মান্নানের কাছে দেড় লাখ টাকা উৎকোচ দাবি করেন এবং বিষয়টি কাউকে না জানোর জন্য হুঁশিয়ার করে দেন।

পরে তারা বড়হরিশপুরে গ্রামের বাড়িতে তার স্ত্রীর কাছে গিয়েও একই টাকা দাবি করেন যার ভিডিও সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা আছে। অভিযোগে তিনি আরও বলেন, তার কারখানার ম্যানেজার মোঃ আব্দুল মান্নান ও ভাতিজা মোঃ শরিফুল ইসলাম নাটোর থানার কম্পিউটার অপারেটর এনামুল লিটুর সাথে কথা বলার জন্য থানায় গেলে থানার এসআই তারেক তাদেরকে নিয়ে কথা বলার জন্য বাহিরে যান এবং টাকার জন্য চাপ সৃষ্টি করেন।

টাকা না দিলে উল্টাপাল্টা রিপোর্ট দিয়ে সবাইকে বিপদের ফেলারও হুমকি দেয়া হয়। পরে দাবিকৃত দেড় লাখ টাকা কমে ৭০ হাজার টাকায় রফা হলে ম্যানেজার ও ভাতিজা বিভিন্ন জনের কাছ থেকে সংগ্রহ করে তারা সদর থানার ওসি কাজী জালাল উদ্দিনের কক্ষে যান। এ সময় এসআই তারেক তাদের ইশারা করে থানার বাহিরে রাস্তার উত্তরে ভাঙ্গা মসজিদের পিছনে গিয়ে সকলের মোবাইল বন্ধ করতে বলেন। মোবাইল বন্ধ করে তিনি ৭০ হাজার টাকা নিয়ে আবারও ওসি কাজী জালালের কাছে ফিরে এসে চোখের ইশারায় টাকার প্রাপ্তির বিষয়টি বুঝিয়ে দিলে নাটোর থানা থেকে ক্লিয়ারেন্স ম্যাসেজ দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ থানায় পাঠানো হয়।

এরপর রাত ১২টার দিকে তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। তিনি অভিযোগ করেন তার কর্মকান্ড স্বচ্ছ হওয়ার পরেও নাটোর থানার ওসি কাজী জালাল উদ্দিন এবং এসআই তারেক অন্যায়ভাবে হাতিয়ে নেয়ার ৭০ হাজার টাকা ফেরত দেয়ার পাশাপাশি বিষয়টি তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবি জানান।

অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের চাপে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর স্থানীয় একজন রাজনৈতিক নেতার মধ্যস্থতায় ও উপস্থিতিতে উৎকোচের নগদ ৭০ হাজার টাকা ফেরত দেয়া হয়।

এব্যাপারে নাটোর সদর থানার ওসি কাজী জালাল উদ্দিন বিটিসি নিউজকে জানান, তিনি উৎকোচের টাকা নেয়া ও ফেরত দেয়ার বিষয়টি মোটেও অবগত নন।

নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহার সাথে কথা হলে তিনি বিটিসি নিউজকে জানান, অভিযোগ পাওয়ার পরপরই তিনি নাটোর সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আবুল হাসনাতকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি করে দিয়েছেন।

তদন্ত শেষে দোষ পাওয়া গেলে অবশ্যই সেই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। পুলিশের উৎকোচ গ্রহণের ঘটনাটি নাটোর শহরে মুখরোচক আলোচনার বিষয়ে হয়ে উঠেছে।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নাটোর প্রতিনিধি খান মামুন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.