নাটোরে কোন অনুমোদন না নিয়েই সাইনবোর্ড টাঙিয়ে মুক্তিযোদ্ধা টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিরুদ্ধে রমরমা নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ

নাটোর প্রতিনিধি: শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অনুমোদন ছাড়াই নাটোর সদর উপজেলার দরাপপুরে গড়ে তোলা হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ।

অভিযোগ উঠেছে, প্রতিষ্ঠানটি সাইনবোর্ড টানিয়ে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে শুরু করেছে রমরমা নিয়োগ বানিজ্য। প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধানের দাবি নিয়ম মেনেই সবকিছু হচ্ছে। শিক্ষা বিভাগ বলছে এটি স¤পূর্ণ অবৈধ।

নাটোর সদর উপজেলার দরাপপুরে কৃষি জমির মাঝখানে সম্প্রতি নির্মান করা হয়েছে টিনের চালার তৈরী বেশ কয়েকটি কক্ষ। সেখানে বিশাল সাইনবোর্ডে ২০১৭ সালে স্থাপিত মুক্তিযোদ্ধা টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ উল্লেখ করে সাইনবোর্ড ঝুলানো হয়েছে।

কিন্তু এলাকাবাসী জানান, চলতি বছরেই স্থাপিত করা হয় ।কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অনুমতি ছাড়া কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে টেকনিক্যাল শব্দটি ব্যবহার করার বিধান না থাকলেও কোন অনুমোদন না নিয়েই রাতারাতি গড়ে তোলা হয়েছে এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি।

মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদিত উল্লেখ করে মোটা অংকের বেতন ও ভাতা প্রদানেরর নিশ্চয়তাসহ স্থানীয় পত্রিকায় জনবল নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে প্রতিষ্ঠানটি।

ইতিমধ্যে ৭১ পদে আবেদন করেছে পাঁচ শতাধিক শিক্ষিত তরুণ- তরুণী । ইতিমধ্যে আবেদনের সাথে পোষ্টাল অর্ডার এববং ব্যাংক ড্রাফট হিসেবে ৫ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ভুঁইফোড় প্রতিষ্ঠানটি । শুধু তাই নয়,বেশ কয়েকটি পদে নিয়োগের নামে বেকার তরুণ-তরুণীর কাছ থেকে ডেনোশন হিসেবে মোটা অংকের টাকা হাাতিয়ে নিয়ে তৈরী করা হচ্ছে পাকা ভবন ।

এদিকে প্রতিষ্ঠানটির সাইনবোর্ডে মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বারা পরিচালিত বলে উল্লেখ থাকলেও প্রতিষ্ঠানটি স¤পর্কে তেমন কোন তথ্য জানেন না স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা। শিক্ষা বিভাগ বলছে, এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি সম্পুর্ন নিয়ম বর্হিভূতভাবে গড়ে তোলা হয়েছে।

কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অনুমতি ছাড়া কিভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে টেকনিক্যাল শব্দটি ব্যবহার করছেন এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ সোহেল রানা বলেন, বিধি মেনেই তাদের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। কোন নিয়োগ বাণিজ্য হয়নি।

মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের কাগজপত্র প্রতিষ্ঠানের প্রতিাষ্ঠতা মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন মাষ্টারের কাছে রয়েছে।

দরাপপুর এলাকাবাসী অভিযোগ করে বলেন,মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন মাষ্টার ১৫ বছর আগে একই জায়গায় প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রপতি হসেইন মুহাম্মদ এরশাদের নামে পল্লীবন্ধু এরশাদ স্কুল এবং কলেজ নামে একটি সাইনবোর্ড সর্বস্ব প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।

সে সময় প্রতিষ্ঠানটি উদ্ধোধন করার জন্য স্বয়ং এরশাদ নাটোর এসেছিলেন । কিন্তু উদ্ধোধনের দুইদিন পরে সাইনবোর্ড নেই হয়ে যায় । হঠাৎ করে মাস চারেক আগে তারা মুক্তিযোদ্ধা টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাইনবোর্ড দেখতে পান । এলাকার শিক্ষিত বেকার তরুণ তরুণীকে বিভিন্ন পদে চাকরি দেওয়ার নামে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়ে পাকাঘর নির্মাণের কাজ শুরু করে ।

দরাপপুর গ্রামের শিক্ষিত বেকার তরুণ সামিউল ইসলাম বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, এই কার্যক্রমের সাথে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কতটুকু জড়িত সে স¤পর্কে জানা নেই। মুক্তিযোদ্ধাদের নাম ভাঙ্গিয়ে কেউ যেনো বাণিজ্য না করতে পারে সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আহবান জানিয়েছেন তিনি।

স্কুলের প্রতিষ্টাতা মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়েই প্রতিষ্ঠানটি করা হয়েছে ।কারিগরী বোর্ডের অনুমোদনের প্রক্রিয়া চলছে। নিয়োগ বাণিজ্য করা হচ্ছেন। তিনি এ সময় মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের কোন অনুমোদনের কাগজ দেখাতে ব্যর্থ হয়। এ সময় এই প্রতিবেদক ফেসবুকে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর শাহরিয়ার আলম এর মুক্তিযোদ্ধা টেকনিক্যাল স্কুল এবং কলেজ নামে মন্ত্রণালয়ের কোন প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দেয়া হয়নি সংক্রান্ত পোষ্টটি দেখানো হলে তিনি ক্ষীপ্ত হয়ে বলেন,মন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বাজে লোক। উনি কি লিখলো তাতে কিছু যায় আসেনা।

এ ব্যাপারে নাটোর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রমজান আলী আকন্দ বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, মুক্তিযোদ্ধা টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের কোন তথ্য জেলা শিক্ষা অফিসে সংরক্ষিত নেই। কোন প্রতিষ্ঠানের সহকারী শিক্ষক, প্রভাষক নিয়োগের ক্ষেত্রে এটি আরসিএ কর্তৃক চাহিদা প্রদান পূর্বক এটিআরসিএ উক্ত শিক্ষা প্রতিষ্টানে সহকারী শিক্ষক বা প্রভাষক পদে নিয়োগ প্রদান করবে। কোন ম্যানেজিং কমিটি বা গভর্নং বডি কোন নিয়োগ প্রদান করার ক্ষমতা রাখেনা।

নাটোর সদর উপজেলা নির্বাহী আফিসার জাঙ্গাঙ্গীর আলম বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন,কথিত এ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়ে আমি তাদের অনুমোদন ছাড়া কার্যক্রম চালাতে নিষেধ করেছি । কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করতে হলে কারিগরী শিক্ষা বোর্ডের অনুমতি ও কোড নং প্রয়োজন হয়। অনুমোদন ছাড়া এভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করা যাবেনা। অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নাটোর প্রতিনিধি খান মামুন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.