নাটোরের সাংবাদিক নাসিমঃ সংবাদ ও মানবতার ফেরীওয়ালা

নাইমুর রহমান: এ বছরের মার্চ মাসের তৃতীয় সপ্তাহ চলছে। বন্ধ হয়ে গেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। সারাদেশের ন্যায় নাটোরবাসীর মনেও চাপা উত্তেজনা। করোনা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে দিনদিন। যে যার মতো প্রস্ততি নিচ্ছেন।

যারা টাকা বেশি আছে, তারা বস্তা বস্তা চাল ও খাবার মজুদ করছেন। যারা মধ্যবিত্ত শ্রেণির তাদের কপালে চিন্তার ভাজ, চোখেমুখে অনাকাঙ্খিত ভবিতব্যের স্পষ্ট বলিরেখা। এক কথায় অনাগত মহাদুর্যোগের চিন্তায় বিষন্ন জনমন।

চরম এই দুঃসময়ে বরাবরের মতোই দায়িত্বশীলতার জায়গায় দৃঢ় নাটোরের মূল ধারার সংবাদকর্মীরা। সংবাদ সংগ্রহের জন্য করোনা ঝুঁকির মধ্যেও কোনোরুপ নিরাপত্তা উপকরণ ছাড়াই বাইরে বের হবার প্রস্ততি চলছে তাদের।

তখন আমরাও একটু একটু করে নিজেদের প্রস্তত করছি মাস্ক, গ্লাভস, স্যানিটাইজার সংগ্রহ করে। তখন একদিন রাতে হঠাৎ দেখলাম দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন ও নিউজ২৪ চ্যানেলের নাটোর প্রতিনিধি নাসিম উদ্দীন নাসিমকে ফেসবুকে লাইভ করতে।

নাটোরের সাংবাদিকদের মধ্যে নাসিম উদ্দীনের ফেসবুক আইডিটি সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় এবং তা কারো কারো কাছে এখনও ঈর্ষার কারণ। সেই ফেসবুক আইডি ব্যবহার করে সাংবাদিক নাসিমকে লাইভে আসতে দেখে একটু অবাক হলাম। আগ্রহভরে শুনতে চেষ্টা করলাম তিনি কি বলছেন তার লাইভে। পরপর তার কয়েকটি লাইভে চোখ রাখলাম।

এসব লাইভে তিনি নাটোরবাসীকে ঘরে থাকতে অনুরোধ করছেন। কিন্ত তার অনুরোধের মধ্যে রয়েছে এক ধরণের কাতরতা যা অন্য যে কারো ঘরে থাকার আহ্বানের তুলনায় আলাদা একটু। তার লাইভে গরীব অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে নাটোরের বিত্তবান মানুষদের প্রতি জোরালো আহ্বান ছিলো। তবে তার সে আহ্বানে তখন সাড়া দেননি কেউ।

২৬ শে মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর থেকে লকডাউন শুরু হলো। সরকারের খাদ্যবান্ধবক কর্মসূচী তখনও শুরু হয়নি। এরই মধ্যে মানুষ কর্মহীন হতে শুরু করলো। রিক্সা, ভ্যান বন্ধ থাকায় দরজায় দরজায় অভাব এসে কড়া নাড়লো।

প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো এলাকার খবর আসে আমাদের কাছে যেখানে মানুষের ঘরে খাবার নেই বা তারা অনাহারে আছে। এই অবস্থায় দিনমজুর মানুষদের জন্য নিজ তহবিল হতে খাবারের ব্যবস্থা শুরু করলেন আমাদের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল ভাই কিন্ত তা অপ্রতুল।

জেলায় করোনা দুর্যোগে শিমুল ভাই প্রথম কোনো সাংসদ যিনি সর্বপ্রথম নিজ উদ্যোগে এই কার্যক্রম শুরু করেন। এসব অনটন ও কর্মহীন পরিবারগুলোর দুঃখ-দুর্দশার খবর তুলে ধরা ছাড়া আমাদের করার মতো কিছুই ছিলোনা।

এমন সময় একজন সংবাদকর্মীর হিসেবে সংবাদ সংগ্রহের পাশাপাশি মানুষের পাশে দাঁড়ালেন সাংবাদিক নাসিম। বরাবরের মতোই তার সোর্স ভালো। এসব সোর্স মারফতই অভাবী মানুষদের খবর আসতে শুরু করলো তার কাছে।

এসময় তিনি এসব মানুষের অবস্থান বর্ণনা করে ফেসবুক লাইভে এসে খাদ্যসহায়তা চাইলেন। তার আহ্বানে সাড়া দিলেন কিছু হৃদয়বান মানুষ। তাদের দেয়া খাবার পৌছে যেতে লাগলো দুঃস্থ অসহায় মানুষদের কাছে।

ততদিনে জেলায় ত্রাণ তৎপরতা শুরু হয়ে গেছে সরকারী ও সংসদ সদস্যদের ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায়। এই করোনা সংকটে জনপ্রতিনিধিদেরও লাইভে আনলেন সাংবাদিক নাসিম। তারা মানুষের জন্য কি করেছেন এবং করবেন তা জানা গেলো।

ত্রাণ বিতরণ করা এসব জনপ্রতিনিধিদের লাইভ শেষ করে কারো থেকে ৫টি, কারো থেকে ১০টি করে ত্রাণের প্যাকেট চেয়ে নিতেন নাসিম। এসব প্যাকেট পরদিন খুঁজে খুঁজে প্রকৃত অনাহারী মানুষের বাড়িতে পৌছে দিয়েছেন তিনি।

তার এই মানবিক কার্যক্রমের বিষয়টি অনেকেরই অজানা। নাসিমের মতো ত্রাণের প্যাকেট চেয়ে নিয়ে করোনার এই দুর্যোগে আমরা মানবতার সেবা করতে পারি নাই বলেই আমরা তার থেকে আলাদা। তবে নাটোরের দুজন সিনিয়র সাংবাদিকের নাম বলতেই হবে যারাও খুবই গোপনে অনেক মধ্যবিত্ত ও দুঃস্থ মানুষকে পরোক্ষভাবে খাদ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন।

তারা হলেন ইউনাইটেড প্রেসক্লাব সভাপতি নবীউর রহমান পিপলু ও সিনিয়র সাংবাদিক রেজাউল করিম রেজা ভাই। করোনার এই দুর্যোগ কতদিন অব্যাহত থাকবে জানি না, তবে করোনাকালে মানবতার জয়গান গাওয়া এই সংবাদকর্মীদের মনে রাখবে গরীব, অসহায় ও অভাবী মানুষরা। মানুষের পাশে দাঁড়ানো জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব হলেও দুর্যোগটা করোনা হওয়ায় তাদেরকেও ধন্যবাদ দেবো। সাংবাদিকরা সবাই খারাপ না এই উপলদ্ধি করোনা আমাদের দিয়ে গেলো।

সিনিয়র সহকর্মী নাসিম উদ্দীন নাসিমের জন্য অফুরান শুভকামনা রইলো। মানবতার আহ্বানে সংবাদের পাশাপাশি আগামী দিনগুলোতেও মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সংকল্প রইলো আমাদের।

লেখকঃ নাইমুর রহমান সম্পাদক, জাগোনাটোর২৪.কম। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.