নাটোরের লালপুরে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরবরাদ্দে অনিয়মের অভিযোগ

 


নাটোর প্রতিনিধি: নাটোরের লালপুর উপজেলার ঈশ্বরদী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা আব্দুল আজিজ রঞ্জুর বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর প্রদানসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। ভূমিহীনদের নামে বরাদ্দকৃত ঘর স্বচ্ছল পরিবারের সদস্যদের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে দাবি ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য ও স্থানীয় ইউপি মেম্বারদের। দুর্নীতির অন্য অভিযোগও রয়েছে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। তবে, এবিষয়ে কোন কথা বলতে রাজি হননি ঐ চেয়ারম্যান।
জানা যায় ,ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের জন্য সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৩য় ধাপের ঘর বরাদ্দে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে নাটোরের লালপুরের ২ নম্বর ঈশ্বরদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আজিজ রঞ্জুর বিরুদ্ধে।
ভূমিহীনদের নামে বরাদ্দকৃত ঘর টাকার বিনিময়ে স্বচ্ছল পরিবারের সদস্যদের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন ভুক্তভোগী ভূমিহীন পরিবারের সদস্যরা।
ভুক্তভোগী এক নারী জানান , ঘর বরাদ্দ নেওয়ার জন্য আমার কাছ থেকে ১০ হাজার এবং আমার ছেলের কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা নিয়েছে চেয়ারম্যান । আরেক নারী জানান, আমি মানুষের বাসায় কাজ করে খায় । টাকা পাবো কোথায় । টাকা দেয়নি বলে আমার মতো চালচুলোহীন মানুষকে ঘর দেওয়া হয়নি ।
স্থানীয়রা জানান, আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ দিতে অসহায় মানুষের কাছে টাকা চেয়েছে ২ নম্বর ঈশ্বরদী ইউপি চেয়ারম্যান। যারা টাকা দিতে পারেননি তাদেরকে ঘর দেয়া হয়নি। টাকার বিনিময়ে অন্য ওয়ার্ডের স্বচ্ছল বাসিন্দাদের ঘর দেয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ তাদের। শুধু তাই নয়, জন্ম ও ওয়ারিশ সনদসহ গ্রাম আদালতে বিচারের নামে ঈশ্বরদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান টাকা আদায় করে আসছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন ইউপি মেম্বাররা। চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন তারা।
এছাড়া এক জীবিত নারীকে মৃত্যু সনদ দেখিয়ে বয়স্ক ভাতা বন্ধের অভিযোগ উঠেছে ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল আজিজ রঞ্জুর বিরুদ্ধে। টাকার বিনিময়ে অন্য একজনকে বয়স্ক ভাতা সুবিধা দেওয়ার জন্য ওই নারীর মৃত্যুর সনদ উপজেলা সমাজ সেবা অফিসে দিয়েছেন ওই ইউপি চেয়ারম্যান। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় মানুষের মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
উপজেলার ঈশ্বরদী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল আজিজ রঞ্জুর স্বাক্ষরিত মৃত্যুর সনদে একই ইউপির ৭ নম্বর ওয়ার্ডের নূরুল্লাপুর গ্রাামের দনি প্রামানিকের বিধাবা মেয়ে ছখিনা বেগম বার্ধক্য জনিত কারণে ৮ আগষ্ট ২০২২ ইং তারিখে মৃত্যু দেখিয়ে বয়স্ক ভাতা বন্ধের জন্য উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে মৃত্যুর সনদ জমা দিয়েছে বলে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। অথচ ওই বিধবা নারী সরকারের সামাজিক নিরাপত্তার কর্মসূচির আওতায় বয়স্ক ভাতা সুবিধা পেয়ে আসছিলেন। উপকার ভোগীর আইডি নম্বর ০১৬৯০০৪৫৪৪৭
চেয়ারম্যান মৃত্যুর সনদ দেওয়ার কারণে তার বয়স্ক ভাতা সুবিধা বন্ধ হয়ে গেছে। উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের মাধ্যমে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
এবিষয়ে সুবিধা বঞ্চিত ছখিনা বেগম বিটিসি নিউজকে বলেন, বয়স্ক ভাতার টাকা মোবাইলে না আসলে। আমার নাতি শিমুল সমাজ সেবা অফিসে খবর নিতে গেলে জানতে পাই যে আমি মরে গেছি। এই কারণে আমার বয়স্ক ভাতা বন্ধ হয়ে গেছে।
এই খবর শুনে আমার চোখে পানি চলে আসে এবং আমি অবাক হয়ে যায়। পরে জানতে পারি চেয়ারম্যান রঞ্জু আমাকে মরা দেখিয়ে বয়স্ক ভাতা বন্ধ করে দিয়েছে।
এছাড়া গত ২৫ অক্টোবর চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ৪০ দিনের কর্মসূচি ও ঘাট ইজারাতে অনিয়ম এবং জন্ম ও ওয়ারিশ সনদ সহ ট্রেড লাইসেন্সে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করেছে ঈশ্বরদী ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্যরা।
অভিযোগের বিষয়ে ঈশ্বরদী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল আজিজ রঞ্জু কথা বলার জন্য একাধিক বার মুঠোফোনে কল দিলেই তিনি কথা বলতে রাজি হয়নি। সরজমিনে এলাকায় গেলে গণমাধ্যমকর্মীদের দেখেই বাইক নিয়ে দ্রুত চলে যান তিনি।
লালপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীমা সুলতানা বিটিসি নিউজকে জানান, আব্দুল আজিজ রঞ্জুর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। তদন্ত করে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
নাটোর-১ আসনের সংসদ সদস্য শহিদুল ইসলাম বকুল বিটিসি নিউজকে জানান, ঘর বরাদ্দে অনিয়ম হলে তা বাতিল করাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ সকল অনিয়মের তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি এলাকাবাসীর।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নাটোর প্রতিনিধি খান মামুন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.