নাগেশ্বরীতে রহস্যজনক মৃত্যুর ১৯ দিন পর কবর থেকে মরদেহ উত্তোলন

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীতে আলোচিত আব্দুর রশিদের রহস্যজনক মৃত্যুতে ১৯ দিন পর কবর থেকে তার মরদেহ উত্তোলন করা হয়েছে। গত ২৯ মে দ্বিতীয় স্ত্রীর বাড়ী থেকে বের হওয়ার পরই রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয় আব্দুর রশিদের।

এ ঘটনায় তার প্রথম স্ত্রী নুর হাসনা আক্তার জোসনা বাদী হয়ে ফুলবাড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

পরে কুড়িগ্রাম জেলা এক্সিকিউটিভ মেজিস্ট্রেটের মাধ্যমে নাগেশ্বরী ও ফুলবাড়ী থানা পুলিশের সহযোগিতায় আজ মঙ্গলবার (১৬ জুন) বেলা ১টার দিকে নাগেশ্বরী পৌরসভার বালাটারী গ্রামে তার প্রতিষ্ঠিত মাদরাসার কবর স্থান থেকে মরদেহ উত্তোলন করেন।

এ সময় সহকারী কমিশনার ও কুড়িগ্রাম জেলা এক্সিকিউটিভ মেজিস্ট্রেট আমিনুর রহমান বুলবুল, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবু বক্কর সিদ্দিক, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আবু বক্কর সিদ্দিক উপস্থিত ছিলেন।

এজাহার সূত্রে জানা যায়, নাগেশ্বরী পৌরসভার বালাটারী গ্রামের মৃত আনছার আলীর ছেলে এবং নাগেশ্বরী সরকারি কলেজের ফিন্যান্স এ্যান্ড ব্যাংকিং বভাগের বিভাগীয় প্রধান মো. আব্দুর রশিদের সাথে একই গ্রামের মৃত সোহরাব আলী আহমেদের মেয়ে নুর হাসনা আক্তার জোসনা (৪০) এর সাথে ২১ বছর আগে বিয়ে হয়। তাদের ঘরে রাহনূমা তাসনীম ওসিন (১৮) এবং তাহিয়া তাসনীম তাসিন (১৩) বছর বয়সী ২টি কন্যা সন্তানও রয়েছে।

এমতাবস্থায় আব্দুর রশিদ প্রথম স্ত্রীর সম্মতি ছাড়াই ২০১৭ সালে উপজেলার রায়গঞ্জ ইউনিয়নের রতনপুর গ্রামের সোবহান ব্যাপারীর মেয়ে শামসুন্নাহার পারভীনকে (৪০) দ্বিতীয় বিয়ে করেন।

পার্শ্ববর্তী ফুলবাড়ী উপজেলার চন্দ্রখানা এলাকার ব্র্যাক মোড়ে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন দ্বিতীয় স্ত্রী শামসুন্নাহার। সেখানে প্রায়ই যাওয়া আসা করতেন আব্দুর রশিদ।

তাদের মধ্যে প্রায়ই ঝগরাঝাটি হতো। এরই মধ্যে হঠাৎ চলতি বছরের ২৯ মে আব্দুর রশিদ তার প্রথম স্ত্রী নুর হাসনা আক্তার জোসনাকে মোবাইল ফোনে জানায় যে, তাকে তার দ্বিতীয় স্ত্রী শামসুন্নাহার পারভীর মারপিট ও নির্যাতন করে আহতে করেছে।

এছাড়াও সে আর বাঁচতে পারবে না বলে তাকে বাঁচানোর সহযোগিতা চেয়ে প্রথম স্ত্রীকে দ্রুত ফুলবাড়ীর ভাড়াটে বাসায় গিয়ে তাকে উদ্ধার করতে অনুরোধ করেন। ফোন পেয়ে প্রথম স্ত্রী নুর হাসনা তৎক্ষনাত তার ভাগিনাকে সাথে নিয়ে ফুলবাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা করেন। পথিমধ্যে আবারও অজ্ঞাত ব্যাক্তির মাধ্যমে আব্দুর রশিদের ফোন দিয়ে তাদেরকে ফুরবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাকেন। পরে তারা হাসপাতালে পৌঁছে দেখেন তার স্বামী মারা গেছেন।

এতে করে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন এবং কিছুক্ষণ পর কিছুটা সুস্থ ও স্বাভাবিক হলে স্বামীর মরদেহ নিয়ে বাড়িতে ফেরেন। এরপর তার নিজ বাড়িতে জানাজা শেষে লাশ দাফন করেন।

এদিকে গোসল করানোর সময় গোসলদাতা মৃতদেহের পুরুসাঙ্গ ও অন্ডকোষে ফুলা জখমসহ শরিরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষতের চিহ্ন দেখেছেন বলেও এজাহারে উল্লেখ রয়েছে।

মরদেহ দাফনের পর বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকায় এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্ন মহলে তীব্র নিন্দা ও সমালোচনার ঝর ওঠে এবং এটি রহস্যজনক মৃত্যু বলেও দাবি করেন পরিবার ও স্থানীয়রা।

পরে নিহত আব্দুর রশিদের প্রথম স্ত্রী ফুলবাড়ী থানায় একটি হত্যা মামলা করলে কবর থেকে মরদেহ উত্তোলন করেন প্রশাসন। এ ঘটনায় নিহতের পরিবার ও স্থানীয়রা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সঠিক বিচার দাবি করেছেন।

এ ব্যাপারে জেলা এক্সিকিউটিভ মেজিস্ট্রেট আমিনুর রহমান বুলবুল বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, তদন্তের স্বার্থে ফরেন্সিক রিপোর্টের জন্য মরদেহ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট পেলে জানা যাবে হত্যা নাকি স্বাভাবিক মৃত্যু।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি মো. হাফিজুর রহমান হৃদয়। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.