নবীগঞ্জের নোয়াগাও গ্রামে তান্ডব ! অগ্নিসংযোগ-লুট, ৭০ লাখ টাকার ক্ষতি \ এলাকায় উত্তেজনা

নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি: পুর্ব ঘটনার জেরধরে নবীগঞ্জ উপজেলার সাতাইহাল ৬ মৌজার লোকজন নোয়াগাওঁ গ্রামে হামলা ভাংচুর ও অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটিয়েছে।
আজ রবিবার (৩০ মে) সকালে এ ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছে। এছাড়া হামলাকারীরা নোয়াগাওঁ গ্রামের লোকদের ১৫/১৬ টি গরু, ছাগল, অসংখ্য হাসঁ-মোরগ, প্রায় ৩ হাজার মন ধান লুটপাটসহ অনুমান ৭০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি করেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এ ঘটনায় ১৩ নং পানিউন্দা ইউনিয়নবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে।হবিগঞ্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
স্থানীয় সুত্রে জানাযায়, গত বুধবার (২৬ মে) রাতে উপজেলার পানিউন্দা ইউপির নোয়াগাওঁ হাওরে গজনাইপুর ইউপির সাতাইহাল গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা নুর উদ্দিন (বীর প্রতীক) এর মালিকানাধীন ফিশারিতে অবস্থানরত পাহারাদার ও তার স্ত্রীকে বেদরক আঘাত করে নোয়াগাওঁ গ্রামের একদল দুর্বৃত্ত। আহত দম্পতি সিলেট ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
এ ঘটনায় মামলাও করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা নুর উদ্দিন (বীর প্রতীক)। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১১ নং গজনাইপুর ইউনিয়নের সাতাইহাল গ্রামসহ ৬ মৌজার লোকজন গতকাল শনিবার রাতে মিটিং করে নোয়াগাও গ্রামে মুক্তিযোদ্ধা হামলা করার পরিকল্পনা করেন।
ঘটনার খবর পেয়ে আজ রবিবার সকালে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মহি উদ্দিন ও নবীগঞ্জ থানার অফিসার ইনর্চাজ ডালিম আহমদসহ গজনাইপুর ইউপির হায়রঘাটে সাতাইহাল গ্রামের মুরুব্বীদের নিয়ে বৈঠক করেন। এবং দাঙ্গা হাঙ্গামায় না জড়ানোর জন্য অনুরুধ করেন। এই সুযোগে সাতাইহাল ৬ মৌজার প্রায় হাজারখানেক লোকজন হাকডাক দিয়ে বিকল্প রাস্তায় নোয়াগাওঁ গ্রামে ঢুকে মুক্তিযোদ্ধার ফিশারীর আশপাশের বাড়িঘরে হামলা, ভাংচুরসহ তান্ডবলীলা চালায়।
এক পর্যায়ে তারা বাড়িঘরে অগ্নি সংযোগ করে ১৫/১৬টি গরু, ১০/১৫টি ছাগল, অসংখ্য হাসঁ মোরগ এবং বিভিন্ন বাড়ি থেকে কমপক্ষে ৩ হাজার মন ধান লুট করে নিয়ে যায়। এছাড়া অগ্নি সংযোগের ফলে ১৫টি পাকা-আধা পাকা, টিন সেটের বাড়িঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এতে ধান-চালসহ ঘরের আসবাবপত্র পুড়ে যায়।
অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার গুলো হলেন ছাদ্দেক মিয়া, মাদ্দক মিয়া, হিরন মিয়া, কামাল মিয়া, আওলাদ মিয়া, আজাদ মিয়া, তাজুদ মিয়া, আফজল মিয়া, আব্দাল মিয়া, মহিবুর রহমান, রমজান মিয়াসহ ১৫ টি পরিবার। অগ্নিকান্ডে ও লুটপাটে ক্ষতির পরিমান হবে প্রায় ৬০/৭০ লাখ টাকা বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
৬ মৌজার তান্ডবে নোয়াগাওঁ ফিশারীর পাড়ে যেন মৃত্যুপুড়িতে পরিনত হয়েছে। মানুষের মধ্যে শুরু হয়েছে হাহাকার ও কান্নার রুল। ক্ষতিগ্রস্থ লোকজন বলেছেন, ৬ মৌজার লোকজন গতকাল শনিবার রাতে মিটিং করে আমাদের বাড়িঘরে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটানোর সংবাদ পেয়ে  স্থানীয় চেয়ারম্যানের মাধ্যমে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে। তারা কার্যত কোন ব্যবস্থা  নিলে এমন  নির্মম ঘটনা হয়তো বা ঘটতো না। সকালের দিকে সাতাইহাল ৬ মৌজার প্রায় হাজারখানেক লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে অর্তকিতভাবে হামলা করে বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করে লুটপাট শুরু করে। প্রাণের ভয়ে তারা পালিয়ে আত্মরক্ষা করেন।
ঘটনার খবর পেয়ে হবিগঞ্জ পুলিশ সুপার  মোহাম্মদ উল্ল্যা, বাহুবল সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (সদ্য পদায়ন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার) পারভেজ আলম চৌধুরী, উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মহি উদ্দিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান ইজাজুর রহমান বিটিসি নিউজকে বলেন, সাতাইহাল ৬ মৌজার মানুষ রবিবার  সকালে নোয়াগাওঁ ফিশারীর পাড়ের বাসিন্দাদের বাড়িঘরে হামলার পরিকল্পনার খবর পেয়ে তিনি জেলা ও উপজেলার প্রশাসনের দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবগত করেছেন। সকালেই ফোন আসে ৬ মৌজার লোকজন হামলা ও অগ্নিসংযোগ করেছে। তারা এত দুর থেকে এসে নোয়াগাওঁ গ্রামে ঢুকে যে তান্ডব করেছে তা দুঃখ জনক। তাদের তান্ডবের সময় ধান, গরু, ছাগল, হাসঁ মোরগ পর্যন্ত লুটপাট করে নিয়ে যায়। ১৫টি ঘর সম্পুর্ণ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এতে ক্ষতির পরিমান হবে ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকা হবে বলেও তিনি দাবী করেন।
এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্ল্যা বিটিসি নিউজকে বলেন, খবর পেয়ে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। অভিযোগের ভিত্তিতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি মোঃ আলাল মিয়া। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.