নতুন জ্বালানির খোঁজে সরকার : নসরুল হামিদ

বিশেষ (ঢাকা) প্রতিনিধি: বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সুবর্ণজয়ন্তী পেরিয়ে নতুন জ্বালানির খোঁজ করছে সরকার। বিশ্বব্যাপী পরীক্ষামূলক নতুন জ্বালানি হাইড্রোজেন দিয়ে বিদ্যুৎ উপাদনের সাম্ভাব্যতা জরিপ করা হবে। এজন্য সরকার একটি নীতিমালাও করছে।
মঙ্গলবার (৩১ মে) পিডিবির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ জ্বালানি খনিজসম্পদ মন্ত্রী এ কথা জানিয়েছেন।
হাইড্রোজেন দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্র অনেক দিন থেকে চেষ্টা করছে। ইতোমধ্যে ইইউ এ কাজে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগের জন্য তহবিল গঠন করেছে। দক্ষিণ কোরিয়া ইতোমধ্যে একটি হাইড্রোজেন পাওয়ার প্ল্যান্ট চালু করেছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি হিসেবে হাইড্রোজেন ভবিষ্যৎ দুনিয়ার জ্বালানি হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সামনে বড় পরিবর্তন আসছে, হাইড্রোজেন পলিসি করতে যাচ্ছি। ভবিষ্যতে এই জ্বালানি দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন হতে পারে। এখনও ফিজিবিলিটি করা হচ্ছে। যাচাই বাছাই চলছে। ৪১ সালের মধ্যে ৪১ শতাংশ বিদ্যুৎ আনতে হবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে। এজন্য ব্যাপক বিনিয়োগ করতে হবে।’
নসরুল হামিদ বলেন, ‘পিডিবির আজ  ৫০ বছর হলো। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে যাত্রা শুরু করে পিডিবি।  ওয়াপদাকে ভেঙে দুটি সংস্থা করা হয়। তার একটি পিডিবি। বঙ্গবন্ধুর এই দূরদর্শী চিন্তার কারণে আজ  আমরা এইখানে। উনি বুঝতে পেরেছিলেন— গ্রামে বিদ্যুতের সুবিধা বাড়াতে হবে। বিদেশ থেকে কেন্দ্র এনে প্রথম বিদ্যুৎ উৎপাদন  শুরু করেছিলেন। নানা সমস্যার মধ্যে তিনি এসব উদ্যোগ নেন। তিনি বুঝেছিলেন ওই সময় কলকারখানার উন্নয়ন করতে হবে। স্বাধীনতার তিন বছরের মধ্যে ঘোড়াশাল বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ বেশ কয়েকটি কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। ৫০০ মেগাওয়াট থেকে আজ ২৫ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট ক্ষমতায় উন্নিত হয়েছি আমরা। এরমধ্যে নানা ঘটনা ঘটেছে৷ নানা প্রতিকূলতা পার হয়ে এসেছি আমরা। আজকে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বেও বিদ্যুৎ বিভাগ শতভাগ সফল। প্রধানমন্ত্রীর পরিশ্রম, দুর্দান্ত সাহস এবং দূরদর্শী চিন্তার কারণে আমরা আজ  শতভাগ বিদ্যুৎ দিতে পারছি।’
তিনি বলেন, ‘এখন আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ দেওয়া এবং সেটা  নিরবচ্ছিন্নভাবে সরবরাহ করা। এদিকে আগামীতে সারা বিশ্বে বিদ্যুতের দামে একটি বড় পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। এর দাম নির্ভর করে জ্বালানির দামের ওপর। আমরা বিদেশ থেকে তেল আনি, গ্যাস আনি। এক্ষেত্রে এখন দামের একটি বড় প্রভাব পড়ছে। বিদ্যুতের  দাম বাড়ুক না কেন, আমরা কতটা এফিশিয়েন্ট কিনা, দ্রুত বিদ্যুৎ দিতে পারবো। স্বল্প সময়ে বিদ্যুৎ দিতে তেলভিত্তিক কেন্দ্র করা হলেও এখন তা থেকে সরে আসতে শুরু করেছি। এখন যাদের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে, তাদের থেকে বিদ্যুৎ প্রয়োজন না হলে নেবো না। দীর্ঘ মেয়াদি রামপাল থেকে, এস আলম-সহ বেশ কিছু বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে আমরা বিদ্যুৎ পাবো। এসব থেকে আমরা সাশ্রয় মুল্যে বিদ্যুৎ পাবো। তার মানে আমরা এখন সাশ্রয়ী ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের দিকে এগুচ্ছি।’
 তিনি জানান, চলতি বছর ঝড়-বন্যায় বিদ্যুৎ বিভাগ ভালোভাবেই কাজ করেছে। দ্রুত কাজ করা গেছে। বিদ্যুৎ বিভাগ স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছে। এটা অনেক বড় অর্জন। সহযোগিতা পেলে আরও ভালোর দিকে যেতে পারবো।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমদানি করা বিদ্যুতের পরিমাণ আমরা বাড়াতে চাই। নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আনা হবে। ৫/৭ বছরে এসব পার্শ্ববর্তী দেশসহ বেশ কিছু এলাকা থেকে বিদ্যুৎ আনতে পারবো।’
তিনি বলেন, ‘আমি দাম কমবে বলিনি, আমি বলেছি সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ দেবো। আগে যে দামে বিদ্যুৎ দেওয়া যেতো, এখন সে দাম কিন্তু নেই। বিশ্বে জ্বালানির দাম অনেক বেড়ে গেছে। কিন্তু আমাদের অবস্থা কিন্তু এখনও অনেক স্থিতিশীল। রেন্টাল থাকবে কী থাকবে না,. সেটা নির্ভর করছে চাহিদার ওপর। ব্যবসায়ীদের ভাবা উচিত তারা বিদ্যুৎ পাচ্ছে কিনা। আমরা মিশ্র জ্বালানিতে গিয়েছি। তেলের বিদ্যুৎ রাখবো কী রাখবো না, সেটা তারা কেন ভাববে। তাদের ভাবা উচিত নিরবচ্ছিন্ন পাচ্ছে কিনা। ১৩ বছর আগের তুলনায় অবস্থা ভালো হিয়েছে কিনা। মানুষের আয়ও বেড়ে গেছে।’
পিডিবির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ আজ  থেকে ৫০ বছর আগে এই পিডিবি গঠন করা হয়। অনেক চড়াই-উতড়াই পার হয়ে আজকে এই জায়গায় এসেছে। আধুনিক, যুগোপযোগী,  এবং প্রযুক্তিসহ একটি আধুনিক সংস্থা গঠন করার ব্যাপারে আমরা গুরুত্ব দিয়ে কাজ শুরু করছি। অটোমেশনের সর্বোচ্চ প্রয়োগ করা হবে। এজন্য জনবল উন্নয়নের যে কাজ তা ইতোমধ্যে শুরু করেছি। সরকারের দিক নির্দেশনার আলোকে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আগামী দিনে এই চ্যালেঞ্জগুলো কীভাবে নিয়ে যাবো সেই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।’
চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা কোয়ালিটি বিদ্যুৎ নিয়ে কাজ করছি, সাশ্রয় বলতে দাম কম তা নয়। বিইআরসি আমাদের প্রস্তাব যাচাইবাছাই করছে। সরকার এই খাতে ভর্তুকি দেয়। এই সংস্থার অনেক পরিবর্তন করা হবে, এতে খরচ আছে। এছাড়া জ্বালানির সর্বোচ্চ ব্যবহার এখন আমরা করার চেষ্টা করছি। সব কিছু সমন্বয় করেই একটা গ্রহণযোগ্য দাম বের হয়ে আসবে বলে আশা করছি।’
এফইআরবির চেয়ারম্যান শামীম জাহাঙ্গীরের সভাপতিত্বে, নির্বাহী পরিচালক রিশান নসরুল্লাহ’র সঞ্চালনায় ‘মিট দ্য প্রেসে’ বিদ্যুৎ বিভাগ এবং পিডিবির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বিশেষ (ঢাকা) প্রতিনিধি মো: ফারুক আহম্মেদ। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.