ধোঁয়াবিহীন তামাক নিয়ন্ত্রনের জন্য আইনে সংশোধনী প্রয়োজন : অধ্যাপক ডা. সামিনা চৌধুরী

প্রেস বিজ্ঞপ্তি: ধোঁয়াবিহীন তামাক এর ব্যবহার সম্পর্কে অধ্যাপক ডা.সামিনা চৌধুরী বলেন ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্যের ব্যবহার নারী স্বাস্থ্যের উপর ব্যাপকভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে থাকে।
নারীদের মধ্যে সিগারেট, বিড়ির ব্যবহার তেমন না থাকলেও সাদাপাতা, জর্দা, গুল ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বিশেষত গ্রামাঞ্চলে কেউ কারো বাসায় বেড়াতে গেলে পান দিয়ে আপ্যায়ন করার রীতি গ্রামীণ সংস্কৃতির একটি অংশে পরিণত হয়েছে।
পানের সাথে নানা রকম সুগন্ধি জর্দাও ব্যবহার করা হয় যা নানা ধরণের স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরী করে থাকে। পান-জর্দা খাওয়ার যে ঐতিহ্য আমাদের সংস্কৃতিতে দাঁড়িয়ে গেছে এবং এ সকল দ্রব্য যে সকল স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরী করে থাকে এই দুইয়ের মধ্যে একটি ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান আমাদের খুঁজে বের করতে হবে যাতে আমাদের তামাক বিরোধী আন্দোলন ফলপ্রসূ হতে পারে।
নারীর স্বাস্থ্যের ক্ষতি বিষয়ে জোড় দিয়ে তিনি বলেন নারী স্বাস্থ্যের উপর ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্যের প্রভাব সম্পর্কে বলতে চাই, অনেক ক্ষেত্রে সন্তানসম্ভবা নারীদের গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে খাদ্য দ্রব্যের প্রতি অনীহা দেখা দেয়, তখন গ্রামাঞ্চলে এসকল নারীদের অনেকে পান-সুপারি-জর্দা খেয়ে এ অবস্থা মোকাবেলার চেষ্টা করে থাকেন।
কিন্তু এর ফলে ভ্রূণ বা গর্ভের সন্তানের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে। ভ্রূণটি যেভাবে বেড়ে ওঠার কথা তা বাধা গ্রস্থ হয়। এর কারণে বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম হতে পারে। যত অল্পবয়সী ভ্রূণ হবে, তার উপর এ ধরণের ক্ষতিকর প্রভাবের মাত্রা ততই বেশী হবে। এ ধরণের ক্ষতির প্রভাবে গর্ভপাতের মতো ঘটনাও ঘটতে পারে।
গর্ভফুলের মাধ্যমে মায়ের শরীর থেকে অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিদ্রব্যের পাশাপাশি ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্যের মধ্যে থাকা নিকোটিনসহ অন্যান্য ক্ষতিকর উপাদান গর্ভস্থ শিশুর শরীরে ঢুকে শিশুর মারাত্মক ক্ষতি করে থাকে। শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ বাধাগ্রস্থ করে ফলে খর্বকায়, অপুষ্ট শিশুর জন্ম হয়।

এছাড়া তামাকজাত দ্রব্যের অতিরিক্ত ব্যবহার পুরুষদের মধ্যে বন্ধ্যাত্বের ঝুঁকিও বৃদ্ধি করে।

অধ্যাপক ডা.সামিনা চৌধুরী বলেন করোনায় ধোঁয়াবিহীন তামাক আক্রান্তদের মৃত্য ঝুঁকি বাড়ায় কোভিড-১৯ ভাইরাস শ্বাসযন্ত্রের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে থাকে। যারা সাদাপাতা বা সিগারেট, বিড়িসহ তামাকজাত দ্রব্য সেবন করে থাকেন, করোনায় আক্রান্ত হলে তাদের মৃত্যুঝুঁকিও বেশী হবে।
কারণ, ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্যসহ বিভিন্ন ধরণের তামাকজাত দ্রব্য ফুসফুস, শ্বাসনালী, মুখ গহবরসহ সকল শ্বাস প্রশ্বাস অঙ্গপ্রত্যঙ্গকেই আক্রান্ত করে থাকে।
এছাড়া কিডনী, লিভারসহ পরিপাকতন্ত্রের উপরেও ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য ব্যাপক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে থাকে যেহেতু এসকল দ্রব্য সরাসরি সেবন করা হয়ে থাকে। মুখ, গলা, ফুসফুসের ক্যান্সারসহ বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সারের জন্য ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য সেবন প্রত্যক্ষভাবে দায়ী। শুধু ক্যান্সার নয়, হৃদরোগীদের ক্ষেত্রে ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য সেবন মারাত্মক ঝুঁকির সৃষ্টি করে থাকে।
পরিশেষে তিনি বলেন ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্যের সহজলভ্যতা কমানোর জন্য বাজারে প্রাপ্ত এসকল পণ্যের বিভিন্ন ধরণের সাইজের পরিবর্তে নির্দিষ্ট কয়েকটি সাইজের জন্য আইন করা প্রয়োজন।
বার্তা প্রেরক মো: রাশেদুজ্জামান, গবেষক, তামাক বিরোধী নারী জোট (তাবিনাজ) ঢাকা। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.