ধানের উৎপাদন খরচ না উঠায় চলনবিলের কৃষকরা হতাশ , ধানের দাম ১১০০ করার দাবী


নাটোর প্রতিনিধি:  সারা দেশে বোরো ধান কাটার ধুম উৎসব চলছে। এ সময় কৃষকের আনন্দ হওয়ার কথা।শস্য ভান্ডারখ্যাত চলনবিল এলাকায় বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে।

সদ্য কাটা ধানের বাজার দর কম থাকায় কৃষকের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। বোরো চাষি কৃষকরা জানান, গত বছর যে ধান প্রতি বিঘায় ২০-২৫ মণ ফলন হয়েছে সেখানে এ বছর হচ্ছে ১৪-১৮ মণ। আবার ব্লাস্ট ও চিটা রোগে আক্রান্ত জমিতে ১০-১২ মণ হারে ফলন হচ্ছে। তারা আরো জানান, অন্য যেকোনো বছরের তুলনায় এ বছর বোরো চাষে খরচ হয়েছে বেশি।

এদিকে, বিভিন্ন হাট-বাজারে মিনিকেট ধান ৬শ থেকে ৬৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ফলে কোনো কৃষকেরই এ বছর উৎপাদন খরচ উঠবে না বলে চাষিরা হতাশা প্রকাশ করেছেন। অকাল বন্যায় ফলন বিপর্যয়ে টানা দুই বছর জমির পাকা ধান কেটে গোলায় তুলতে পারেনি শস্য ভান্ডার খ্যাত চলনিবল অধ্যুষিত নাটোরের সিংড়া উপজেলার কৃষকরা।

তবে কয়েক দফা ভারী বর্ষণ ও শিলাবৃষ্টি ব্যতীত চলতি মৌসুমে ঘটেনি বড় ধরনের কোন ফসলহানির ঘটনা। তাই এবার যথাসময়েই বোরো ধান কাটা শুরু করে কৃষকরা।

প্রায় দুই বছর পর নির্বঘেœ বোরো ধান ঘরে তুললেও আনন্দ নেই কৃষকদের চোখেমুখে। পাকা ধান ঘরে তোলার ঠিক আগেই শীষ মরা রোগে চিটা হয়েছে ধান। প্রতিকূল আবহাওয়ার আশঙ্কা থেকে আগেই যেসব কৃষক কিছু ধান কেটে ঘরে তুলেছেন তাদেরও ফলন হয়েছে গতবারের চেয়ে ৫ থেকে ৬ মণ কম।

গত বছর যে জমিতে ধান হয়েছে ২৪ থেকে ২৬ মণ সেই জমিতে এ বছর ধান পাওয়া যাচ্ছে ১৬ থেকে ১৮ মণ। এর পরেও মরার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে মজুরীর বদলে ধান নেয়া।

কৃষকরা বলছেন, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে চলনবিলে বোরো ধান কাটতে আসা শ্রমিকরা এখনো না আসার কারণে ধান নিয়ে দুশ্চিন্তা বেড়েছে তাদের।

স্থানীয় শ্রমিকদের দিয়ে ধান কাটা শুরু হলেও জেলার বাহিরে শ্রমিক না আসার কারণে দেখা দিয়েছে সংকট। মন প্রতি ১০ থেকে ১২কেজি করে ধান দিয়ে ধান কাটতে হচ্ছে জমির মালিকদের। তাদের হিসেবে, ধান চাষের শুরু হতে প্রতি বিঘা জমিতে ধানের চারা বাবদ চারশ থেকে পাঁচশ টাকা,

জমি চাষ করা আটশ টাকা থেকে এক হাজার টাকা, দিনমজুর বাবদ এক থেকে দেড় হাজার টাকা, পানিসেচ বাবদ দেড় থেকে দুই হাজার টাকা, সার (ইউরিয়া, পটাশ, ডেপ, জিপ, কিটনাশক) বাবদ আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা ও কাটা-মাড়াই বাবদ আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বর্তমানে ধানের বাজার দর ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা মণ।

বিভিন্ন হাট-বাজারে মিনিকেট ধান ৬শ’ থেকে ৬৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।তাই ধানের দর ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা মণ না থাকলে কৃষক লাভের মুখ দেখতে পারবে না।

কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, চলতি বছর নাটোরে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে ৬১হাজার ৪৩৫হেক্টর জমিতে, যা থেকে ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩লাখ ১৮হাজার ৯১৫ মেট্রিক টন।

চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে সিংড়া উপজেলার ১ পৌরসভা ও ১২ টি ইউনিয়নে ৩৭ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো চাষ হয়েছে। যার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৮ হাজার ৫ শত ৮৫ মেট্রিক টন ধান।

বেড়াবাড়ি গ্রামের কৃষক আলতাফ হোসেন বিটিসি নিউজকে জানান, তার ১০ বিঘা জমির মধ্যে ৫ বিঘা জমির ধান কাটা হয়েছে। প্রতি বিঘায় ফলন হয়েছে ১৬ মণ। অথচ গত বছর এই জমিতে ফলন পেয়েছিলেন ২৩ মণ করে। এখন খরচের টাকাই উঠছে না।

স্বভাবতই ধান চাষে আগামীতে অনাগ্রহের কথা জানান কৃষকরা। ধানের বদলে তামাক বা ভুট্টার মতো ফসল চাষে আগ্রহের কথা জানান তারা।ধানের দাম প্রতিমণ ১২০০ টাকা করার দাবী জানান।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নাটোর প্রতিনিধি খান মামুন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.