‘‘ধর্ষণ এবং পর্দা’’

রাবি প্রতিনিধি: রোজাদারের চোখে মুখরোচক খাবার আর পুরুষের চোখে লোভনীয় নারী, এই দুটোকে যদি একই দৃষ্টিতে দেখা হয় তাহলে হয়তো দৃষ্টিভঙ্গিই বদলে যেতে পারে।

কারো রোজা না থাকার পিছনে লম্বা দিন, সূর্যের প্রখর তাপ অথবা ক্ষুধা দায়ী হতে পারে না। রোজা না থাকার পাপের সম্পূর্ণ ভার ওই ব্যক্তির, এইসব অজুহাতের নয়। রোজাদারের সামনে খাবার খেতে নিষেধ করা হয়েছে। এখন, কেউ যদি রোজাদারের সামনে খায় আর রোজাদার রোজা ভেঙে ফেলে তাহলে দোষ কার? খাবার খাওয়া ব্যক্তির নাকি রোজাদারের? রোজাদারের সামনে খাওয়ার পাপের ভার বহণ করবে খাদক, আর রোজা ভেঙে ফেলার পাপের ভার বহণ করবে রোজা ভঙ্গকারী। রোজা ভাঙার পাপ ওই খাদক বহণ করবে কিনা জানি না। ঈশ্বরের আদেশ অমান্য করা মানে শয়তানের অনুসরণ করা। খাদক ব্যক্তিকে যদি শয়তান ধরেও নিই, তবুও বলি, শয়তান কাউকে পাপ করতে বাধ্য করে না। একইভাবে, ধর্ষকের ধর্ষণ করার পিছনে বিয়ের বয়স হওয়ার পরও বাপ-মার বিয়ে না দেওয়া, বউ কাছে না থাকা অথবা ক্ষুধা বেশি হয়ে যাওয়া দায়ী হতে পারে না।

পুরুষের সামনে বেপর্দা হয়ে চলাফেরা করতে নারীদেরকে নিষেধ করা হয়েছে। এখন, কোনো নারী যদি বেপর্দা হয়ে পুরুষের সামনে আসে আর সেই পুরুষ তাকে ধর্ষণ করে তাহলে দোষ কার? বেপর্দা নারীর নাকি ধর্ষক পুরুষের? বেপর্দা হয়ে পুরুষের সামনে যাওয়ার পাপের ভার বহণ করবে সেই নারী, আর ধর্ষণের পাপের ভার বহণ করবে সেই ধর্ষক। ধর্ষণের পাপের ভার বহণ ওই বেপর্দা নারী করবে কিনা জানি না। এখানে বেপর্দা নারীকে শয়তান ধরে নিলেও ধর্ষণের সিদ্ধান্ত যেহেতু ধর্ষকের, তাই পাপের ভারও ধর্ষকেরই। দুটোর সমন্বয় কিভাবে সম্ভব? ধর্ষণ হলেই আমরা একদল ধর্ষিতার পর্দা (পোষাক, চলাফেরা, কথা, আচরণ) নিয়ে ঘাটাঘাটি করি, আর আরেক দল ধর্ষণের সাথে নারীর পর্দার সম্পর্কহীনতাকে উপস্থাপন করতে গিয়ে এমনভাবে কথা বলি, মনে হয় যেন পর্দার আদৌ কোনো দরকার নেই। যেখানে চারপাশে (শয়তানরূপিণী) নগ্ন কুমারী ঘুরে বেড়াবে, সেখানে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা প্রত্যেক পুরুষের ঈমানী দায়িত্ব। ওদের দিকে তাকানোই পাপ, ধর্ষণের চিন্তা আসবে কেন? পুরুষের পর্দাই আসল পর্দা। পুরুষের পর্দা হলো দৃষ্টি আর দৃষ্টিভঙ্গি। পুরুষের পর্দা নিয়ে এর চেয়ে বেশি বলার কিছু পাই না।

নারীর কতটুকু পর্দা করতে হবে এই ব্যাপারটা আমার কাছে পরিবেশের সাথে আপেক্ষিক মনে হয়। আরব, আফ্রিকা আর ইন্দোনেশিয়াতে পর্দার যে ধারণা, বাংলাদেশে তা ভিন্ন। আবার শহরে যেটা পর্দা, গ্রামে সেটা অশালীন হতে পারে, আবার উল্টোটাও হতে পারে। আমার গ্রামের মহিলাগণ শাড়ি পড়ে, পেট পিঠ দেখা যায়, এটা খুব স্বাভাবিক লাগলেও ক্যাম্পাসে বান্ধবীর পরনের শাড়ি একটু সরে গেলেই অস্বস্তিতে পড়তে হয়। সবকিছুই নির্ভর করে দর্শকের দৃষ্টিভঙ্গির উপর। যে মেয়েটি রাঙামাটিতে হাফপ্যান্ট পড়ে থাকে, রাজশাহী এসে সে রাজশাহীর পোষাক পড়ছে, সে পর্দা করছে। পরিবেশের সাথে সামঞ্জস্যতা রেখে নারীর কথা, আচরণ, স্বভাব আর পোষাক পরাই পর্দা। জামার নকশা যেন পরিকল্পনা করেই করা হচ্ছে। গলার কাট আর নকশাগুলো লিডিং লাইনের কাজ করছে। দৃষ্টি যেখানেই দেওয়া হোক না কেন, ফোকাস স্থানান্তরিত হচ্ছে। জামার বুকের উপরের নকশা দেখে মনে হয়, যেন জামার উপরে পরে আছে উজ্জ্বল চকচকে নকশা করা অন্তর্বাস। এসবকে কেউ বলবে সৌন্দর্য, কেউ বলবে শালীনতাবর্জন। আর যখন এমন কাজগুলো উদ্দেশ্যমূলক হয়ে যায়, তখনই তা দৃষ্টিকটু হয়ে যায়।

বাচ্চাকে দুধ পান করানোর সময় যে ভঙ্গিতে মা বসে থাকে, অন্য সময় যদি একইভাবে থাকে তাহলে কেমন লাগবে? প্রত্যেকের দৃষ্টিভঙ্গি একরকম নয়। অতি সাধারণ বিষয়ও অনেকের কাছে খুব বড় হয়ে যায়। দৃষ্টিভঙ্গি আর পরিবেশ বদলাতে জ্ঞানের দরকার। অজ্ঞতার কারণে অনেক অপরাধীর কাছে তাদের কৃতকর্মকে অপরাধ মনে হয় না। অন্যকে দোষ দিয়েই আমরা মুক্ত হতে চাই। এই দেশ সৌদিআরবও নয়, এই দেশ আমেরিকাও নয়। পর্দা নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য। শুধু একপক্ষ পর্দা করলে কোনো পক্ষেরই পর্দা থাকে না। তাই যৌথভাবেই একটা পথ খুঁজে নেওয়া দরকার। শয়তান পুরুষকে ধর্ষণে প্ররোচিত করবে কেন? পুরুষ তো ইউসুফ, পুরুষ তো জুরায়েজ! নারী শয়তানের বেশ ধরবে কেন? নারী তো আয়েশা, নারী তো মেরী!

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর  রাবি প্রতিনিধি মো: মুজাহিদ হোসেন।#

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.