দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায় টানেলের পরিকল্পনা : সেতুমন্ত্রী

ঢাকা প্রতিনিধি: দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া এলাকায় দ্বিতীয় পদ্মা সেতু নির্মাণের দাবির বিষয়টি সরকার বিবেচনায় নিয়েছে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তবে সেখানে সেতুর পরিবর্তে কর্ণফুলীর মতো টানেল নির্মাণের পরিকল্পনা করছে বলে জানান তিনি।
আজ শুক্রবার (০১ অক্টোবর) রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা শেখ হাসিনার উন্নয়নের সংগ্রাম, নিরবচ্ছিন্ন স্বপ্নের মহাসড়কে খুলনা থেকে চট্টগ্রাম’ শীর্ষক সেমিনারে অংশ নিয়ে সেতুমন্ত্রী এ কথা জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মদিন উপলক্ষে আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপ-কমিটি এ সেমিনারের আয়োজন করে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগ ব‌্যবস্থা সহজতর করতে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া এলাকায় দ্বিতীয় পদ্মা সেতুর যে দাবি উঠেছে, সেটি বিবেচনায় নিয়ে সরকার আগে নদীর নাব‌্যতা কী হবে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে। সরকার সেখানে সেতুর পরবির্ত আন্ডারপাস বা টানেল নির্মাণের পরিকল্পনা করছে। এখন থেকে সরকার সেতুর পরিবর্তে টানেলের দিকে নজর দিচ্ছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, নদী বাঁচাতে হবে, তা না হলে শ‌্যামল বাংলাদেশ থাকবে না। এত ব্রিজ করার দরকার কী? পদ্মা সেতু একটা হয়েছে, এখন দাবি উঠেছে দৌলতদিয়ায় আরেকটি সেতু। দুটি সেতু হলে নদীর নাব‌্যতা কী হবে? এটা কিন্তু আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছি। কাজেই সেতু না করে আমরা আন্ডারপাস করার চিন্তা ভাবনা করছি। দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায় আমরা টানেল নির্মাণের চিন্তা ভাবনা করছি। ওই দিকে জামালপুরে দেওয়ানগঞ্জে আরেকটি টানেল নির্মাণের পরিকল্পনাও আমাদের রয়েছে।
সেতুমন্ত্রী বলেন, কিছু কিছু জায়গায় আমাদের টানেলের দিকে নজর দিতে হবে। চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলে যে টানেল হচ্ছে, সেটার ৭৫ ভাগ কাজ হয়ে গেছে। নদীগুলোর এমনিতেই নাব‌্যতা নেই। সেতু যত নির্মাণ করবেন তত নাব‌্যতা হারাবে। অনেক সেতু উদ্বোধন হয়েছে, আরো প্রায় ৫০টির মতো সেতু উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে।
যশোর-খুলনা মহাসড়ক বারবার নষ্ট হচ্ছে কেন, তা ভালোভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সংস্কার করার নির্দেশ দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, রাস্তা করে রক্ষাণাবেক্ষণ না হলে তার সুফল পাওয়া যাবে না। চার লেনের সব রাস্তায় অবশ‌্যই সার্ভিস লেন রাখতে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে এবং সেভাবে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, ঢাকা-মাওয়ার মতো এক্সপ্রেসওয়ে ইউরোপের অনেক দেশেও নেই, প্রতিবেশী দেশ ভারতেও নেই। গাজীপুর থেকে টাঙাইল, এলেঙ্গা থেকে রংপুর, রংপুর থেকে পঞ্চগড় আরেকটা বুড়িমাড়ী—এগুলো আমাদের পরিকল্পনায় আছে, কাজ চলছে। ফরিদপুর থেকে বরিশাল ফোর লেন করার জন‌্য এডিবির সঙ্গে কথা হয়েছে।
আগামী বছর এ দেশের সড়ক যোগাযোগের চেহারা পাল্টে যাবে জানিয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, মেট্রোরেল, ম‌্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট, পদ্মা সেতু সব উদ্বোধন হবে। শেখ হাসিনা তার ভিশন বাস্তবায়নে সব পরিকল্পনা সাজাচ্ছেন, মাস্টারপ্লান করেছেন এবং কাজ যখন যেটা করার দরকার সেটি করছেন। আমাদের ভিশন বিএনপির ভিশন নয়।
সেমিনারে স্বাগত বক্তব্যে আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এবং উপ-কমিটির সদস্য সচিব ইঞ্জিনিয়ার মো. আবদুস সবুর বলেন, দেশে এ যাবতকাল উত্তর-দক্ষিণ সংযোগকারী যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকলেও পূর্ব-পশ্চিম সংযোগকারী সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। ফলে আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থায় রাজধানী ঢাকার ওপর চাপ ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে। যদি খুলনা অথবা বরিশাল থেকে কোনো গাড়ি চট্টগ্রাম বন্দরে যেতে চায় তবে ঢাকা ছাড়া তাদের যাওয়ার কোনো সরাসরি ব্যবস্থা নেই। পূর্ব-পশ্চিম সরাসরি যোগাযোগ তৈরি করতে পারলে ঢাকা-চট্টগ্রাম ফোর লেন সড়কের ওপর চাপ বহুলাংশে কমে যাবে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই সমগ্র সমুদ্র উপকূলজুড়ে তাদের রোড নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে। ফলে বন্দর থেকে বন্দরে পণ্য পরিবহনে তাদের একটা সমন্বিত নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে। আমরা সমুদ্র উপকূল দিয়ে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করতে পারলে দেশের ব্লু-ইকোনমিতে একটা বিশাল প্রভাব ফেলবে। আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশ হয়ে উঠবে যোগাযোগের একটি হাব। সিঙ্গাপুরের মতো বাংলাদেশও সমন্বিত যোগাযোগ ব্যবস্থার একটা রোল মডেল হয়ে উঠবে।
সেমিনারে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপ-কমিটির চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য প্রফেসর ড. মো. হোসেন মনসুরের সভাপতিত্বে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ইঞ্জিনিয়ার এ এফ এম সাইফুল আমিন। সঞ্চালনা করেন আইইবির ঢাকা কেন্দ্রের সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার কাজী খায়রুল বাশার।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর ঢাকা প্রতিনিধি মোমাসুদ রানা খন্দকার। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.