দেখার কেউ নেই ! লক্ষিকুন্ডায় শত শত একর ফসলী জমি নষ্ট করে অর্ধশত ইট ভাটা

ক্রাইম (পাবনারিপোর্টার: ঈশ্বরদী উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল লক্ষিকুন্ডা ইউনিয়ন। শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দুরে হলেও কৃষি আবাদ আর সবজি উৎপাদনে এই এলাকা বেশ সমৃদ্ধ। সেই কৃষি আবাদের শত শত একর ফসলী জমি নষ্ট করে গড়ে উঠেছে অবৈধ অর্ধশত ইটভাটা।
এসব ইট ভাটার জন্য ফসলী জমি কমে যাওয়া এবং ইট ভাটা থেকে পরিবেশ বিনষ্টকারী ধোয়া নির্গত হওয়ার কারণে লক্ষিকুন্ডা ইউনিয়নে সবজি উৎপাদন হুমকির মুখে পড়েছে।
বিষয়টি চরমভাবে ভাবিয়ে তুলেছে স্থানীয় কৃষক ও কৃষি কর্মকর্তাদের। কিন্তু ইট ভাটার মালিকেরা স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় এর কোন কুল-কিনারা করতে পারছেন না তারা। সম্প্রতি লীকুন্ডায় অবৈধ ইট ভাটায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা শুরু হওয়ায় আশার আলো দেখতে শুরু করেছিলেন ওই এলাকার কৃষকরা। কিন্তু হঠাৎ করেই ইট ভাটায় উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চরমভাবে উদ্বীগ্ন হয়ে পড়েছেন তাঁরা। অবিলম্বে কৃষি ও কৃষক সমাজকে বাঁচাতে লীকুন্ডায় অবৈধ ইটা ভাটার সমস্ত কার্যক্রম বন্ধের দাবী জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষকরা। তবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সিহাব রায়হান জানিয়েছেন খুব শীঘ্রই এসব অবৈধ ইট ভাটায় অভিযান চালানো হবে।
গত শনিবার সরেজমিন লীকুন্ডা ইউনিয়নের দাদাপুর, কামালপুর, বিলকেদার, বাবুলচারাসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, একর একর জমি বিনষ্ট করে একেকটি ইট ভাটা গড়ে উঠেছে। ওই সমস্ত ইট ভাটায় অবাধে পোড়ানো হচ্ছে পরিবেশ রাকারী গাছ। ইট ভাটায় পোড়ানো সেই সমস্ত জ্বালানী থেকে নির্গত ধোঁয়ায় মারাত্বক ভাবে তির সম্মুখিন হচ্ছে এলাকার পরিবেশ।
এতে চরমভাবে তি হচ্ছে আশে-পাশের কৃষি আবাদ। ইটা ভাটার ধোঁয়া ও ধুলার কারণে পার্শ্ববর্তী শত শত একর জমির আবাদ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অসহায় চাষীরা এর প্রতিকার করেও কোন ফল পাচ্ছেন না। উল্টো তাদের নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন ইট ভাটার মালিকেরা। অন্যদিকে লীকুন্ডা ইউনিয়নের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে পদ্মা নদী।
সেই নদীর কোল ঘেঁসে গড়ে ওঠা অবৈধ ইট ভাটার জন্য ভেকু মেশিন লাগিয়ে নদীর পাড় থেকে অবাধে মাটি কাটা হচ্ছে। শুধুমাত্র লীকুন্ডা ইউনিয়নেই প্রায় ৮/১০টি স্থানে এভাবে ভেকু মেশিন দিয়ে অবৈধ ভাবে মাটি কেটে ইট ভাটায় সরবরাহ করা হচ্ছে। যা পরিবেশের জন্য মারাত্বক তিকর বলে জানান স্থানীয়রা। শনিবার বিকেলে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে ছবি তুলতে গেলে ভেকু মেশিন থেকে দ্রুত নেমে পালিয়ে যান তারা।
সরেজমিন আরও দেখা যায়, দাদাপুর গ্রামের ইট ভাটার পাশের একটি জমিতে কপি, পেঁপে ও গাজর লাগিয়েছেন কৃষক জাহাঙ্গীর হোসেন। ইট ভাটার ধুলার কারণে সেই কপি ও পেঁপের পাতায় ধুলার আস্তোর পড়েছে আর গাজরের গাছ বাদামী রং ধারণ করেছে। একই চিত্র দেখা যায় প্রতিটি ইট ভাটার পার্শ্ববর্তী জমির সবজির উপর।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কৃষক বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, লীকুন্ডায় অবৈধ ইট ভাটার কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য তাদের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট রয়েছে। সেই সিন্ডিকেট এর মাধ্যমে প্রতিটি ভাটা থেকে মাসিক ভাবে টাকা তুলে ঈশ্বরদীর প্রশাসন ও কতিপয় সাংবাদিকদের ম্যানেজ করা হয়। আমরা আমাদের ফসলের তির জন্য অনেকবার প্রতিবাদ করেছি, সাংবাদিকদের কাছেও গিয়েছি। কোন লাভ হয়নি। অপর এক কৃষক জানান, ইট ভাটার কারণে তার জমিতে কয়েকবার ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। প্রতিবাদ করে কাজ না হওয়ায় বাধ্য হয়ে ইটা ভাটার মালিকের কাছে কম দামে সেই জমি বিক্রি করে দিয়েছি।
কৃষক নজরুল ইসলামের ছেলে এবারের এসএসসি পরীার্থী মিলন হোসেন বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, তার বাবার কৃষি আবাদের জমিটি ইট ভাটার মালিকরা গিলে খেয়েছে। এজন্য সেই জমিতে কোন ফসল হয় না। তাই বাধ্য হয়ে জমিটি বিক্রি করতে হয়েছে। এছাড়াও অবৈধ ইটভাটার প্রচন্ড ধুলা ও পরিবেশ বিনষ্টকারী খোঁয়ার কারণে তার পড়ালেখা চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। এই সমস্যা শুধু তার একার নয়, লীকুন্ডা ইউনিয়নের শত শত শিার্থীর। মিলন তার পড়ালেখার সুষ্ঠু পরিবেশ রার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তপে কামনা করে অবৈধ ইটভাটা বন্ধের দাবী জানান।
এবিষয়ে কৃষক নেতা আবুল হাসেম ও সিদ্দিকুর রহমান ময়েজ বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, বিষয়টি নিয়ে আমরাও চিন্তিত। বিষয়টি নিয়ে সর্বস্তরের কৃষকদের সাথে আলাপ-আলোচনা চলছে। ফসলী জমি নষ্ট করে গড়ে উঠা অবৈধ ইট ভাটার কার্যক্রম বন্ধে খুব শীঘ্রই মানববন্ধনসহ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলীপি প্রদান করা হবে।
তারা আরও বলেন, কৃষি জমি নষ্ট না করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেখানে নির্দেশ দিয়েছেন, সেখানে শত শত একর কৃষি জমি নষ্ট করে ইট ভাটার কার্যক্রম কোন ভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
উপজেলা কৃষি অফিসার আব্দুল লতিফ বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, লীকুন্ডায় ফসলী জমি নষ্ট করে ইট ভাটা নির্মান করায় কৃষি আবাদের জমির পরিমাণ কমে আসছে। এছাড়াও ইট ভাটার কারণে পার্শ্ববর্তী জমির ফসল মারাত্বক ভাবে তিগ্রস্থ হচ্ছে। এছাড়াও ভাটার ধোঁয়া ও ছাই ফসল এবং পরিবেশের জন্য মারাত্বক হুমকি স্বরূপ। বিষয়টি তিনি খোঁজ-খবর নিয়ে লিখিত আকারে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানাবেন বলেও জানান।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সিহাব রায়হান বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, বিষয়টি আমাদেরও নজরে এসেছে। ফসলী জমি নষ্ট করে ঈশ্বরদীতে কোন অবৈধ ইট ভাটার কার্যক্রম চলতে দেয়া হবে না। আগেও উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে, খুব শীঘ্রই অবৈধ ইট ভাটায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর ক্রাইম (পাবনারিপোর্টার মো: ময়নুল ইসলাম লাহিড়ী মিন্টু। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.