দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ বাঘা পৌরসভার মেয়র এর বিরুদ্ধে, মেয়াদের শেষ দিনেও হয়নি ১০টি পদের নিয়োগ পরীক্ষা

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজশাহীর বাঘা পৌরসভার ১০টি পদের নিয়োগ প্রদানের নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও হয়নি নিয়োগ পরীক্ষা। ফলে অভিযোগ উঠেছে তৃতীয়বারেও নিয়োগদানে ব্যর্থ হয়েছেন পৌর মেয়র আব্দুর রাজ্জাক।
জানা যায়, পৌরসভায় ১০টি পদে জনবল বৃদ্ধির জন্য মেয়র রাজ্জাক সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার নিকট আবেদন করেন। তাঁর আবেদনের প্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ গত ২০ ফেব্রয়ারি (২০২০) স্বারক নাম্বার-৪৬.০০.০০০০.০৬৩.১১.০২৩.১৯.১৮৯ প্রথম বার নিয়োগ দানের অনুমতি প্রদান করেন। কিন্তু নির্দিষ্ট মেয়াদের মধ্যে নিয়োগ দানে ব্যর্থ হয় মেয়র। পুনরায় তাঁর আবেদনের প্রেক্ষিতে সময় বৃদ্ধি করে দ্বিতীয়বার পত্র প্রেরণ করেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
কিন্তু নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়মের জন্য দ্বিতীয় বারের নিয়োগ পরীক্ষাও বাতিল করেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। নিয়োগ দানে ব্যর্থ হয়ে তৃতীয় বার সময় বৃদ্ধির আবেদন করেন মেয়র। ফলে মেয়রের সময় বৃদ্ধির আবেদনের প্রেক্ষিতে সর্বশেষ গত ২৯ আগষ্ট (২০২১) তৃতীয়ধাপে শেষবারের মতো নিয়োগ প্রদানের অনুমতি দেন সংশ্লিষ্ট কর্তপক্ষ।
এরপর গত ২৯ অক্টোবর নিয়োগ পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া হয়। কিন্তু তাতে বাধা হয়ে দাঁড়ায় মন্ত্রণালয়ের আদেশ। কারন, এর আগে ২৭ অক্টোবর পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাইফুল ইসলাম স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর পৌর মেয়রের বিরুদ্ধে জনবল নিয়োগ, রাজস্বের অর্থ তছরুপ, হাট-বাজার ইজারার টাকা পৌর তহবিলে জমা না করাসহ সরকারি অনুদান ও বিভিন্ন খাতের বিপুল পরিমাণ অর্থ তছরুপের লিখিত অভিযোগ জমা দেন।
তার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় গত ২৮ অক্টোবর স্থানীয় সরকার বিভাগের পৌর শাখা-১ এর উপসচিব মোহাম্মদ ফারুক হোসেন নিয়োগ কার্যক্রম স্থগিত করে দুর্নীতি তদন্তের নির্দেশ দেন উপসচিব আবুজাফর রিপনকে।
অভিযোগকারী ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাইফুল ইসলাম বলেন, ২০১৮ সালের ১ ফেব্রæয়ারি দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বাঘা পৌরসভার মেয়র আব্দুর রাজ্জাক বেপরোয়াভাবে দুর্নীতি ও অনিয়ম করে চলেছেন। এর আগে তিনি মেয়রের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ করায় তার ১১ মাসের বেতন-ভাতা আটকে রাখা হয়েছিল।
তার ওয়ার্ড এলাকায় সব ধরনের উন্নয়ন বরাদ্দ ও সেবা কার্যক্রম ছিল বন্ধ। পৌরসভার হাট-বাজার ইজারা বাবদ আহরিত ১ কোটি ২০ লাখ টাকা এবং পৌর মার্কেট নির্মাণে টেন্ডারপত্র বিক্রি বাবদ পাওয়া ৯৬ লাখ টাকা পৌরসভার তহবিলে জমা না করে মেয়র আত্মসাৎ করেছেন। এসব খাতের ভ্যাট ও আয়কর বাবদ টাকা মেয়র অদ্যাবধি সরকারি রাজস্ব খাতে জমা করেননি যা গুরুতর অপরাধের শামিল।
পৌর এলাকায় সৌন্দর্য বর্ধনের নামে ১৫ লাখ টাকা পৌর তহবিল থেকে উত্তোলন ও ব্যয় দেখানো হলেও কোথাও কোনো কাজ করা হয়নি। একইভাবে জন্মনিবন্ধন থেকে পাওয়া অর্থের একটি অংশ সরকারের রাজস্ব খাতে জমা করার নিয়ম থাকলেও পৌর মেয়র এখন পর্যন্ত এক টাকাও জমা দেননি।
কাউন্সিলর আরও বলেন, বর্তমানে বাঘা পৌরসভায় ১৮ জন স্থায়ী ও ১২ জন অস্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারী আছেন। পৌর তহবিলে টাকা না থাকায় বেতন-ভাতা নিয়মিত দেয়া হচ্ছে না। এছাড়া গত এক বছর পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ভবিষ্যৎ তহবিলেও কোনো টাকা জমা হয়নি। পৌর মেয়র বিভিন্নজনের কাছ থেকে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা করে নিয়ে বিভিন্ন পদে লোক নিয়োগের প্রক্রিয়া চালিয়েছেন। যেখানে পৌরসভার বিদ্যমান কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অর্থাভাবে নিয়মিত বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না, সেখানে আরও ১০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে-সেটা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাইফুল ইসলাম।
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, মেয়র রাজ্জাকের দুর্নীতি-অনিয়ম ছাড়াও জনবল নিয়োগ সংক্রান্ত বিবিধ অনিয়মের অভিযোগগুলো সরেজমিন তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল উপসচিব আবু জাফর রিপনকে। দ্রুত সময়ে তদন্ত শেষে সিনিয়র সচিব বরাবর প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশও দেওয়া হয়।
একইপত্রে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বাঘা পৌরসভায় কোনো জনবল নিয়োগ কার্যক্রম গ্রহণ করা থেকেও বিরত থাকতে পৌর মেয়রকে নির্দেশ দিয়েছেন মন্ত্রণালয়। এর পর গত ২১ নভেম্বর তদন্ত কারি কর্মকর্তা উপসচিব আবু জাফর রিপন পৌরসভায় তদন্তে আসলে আমার অভিযোগগুলো সন্দেহাতিত ভাবে প্রমাণিত হয়।
তদন্তের পর গত ২৩ ডিসেম্বর উপসচিব ফারুক হোসেন মেয়র রাজ্জাকের বিরুদ্ধে কেন আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবেনা তা ১০ কার্য দিবসের মধ্যে জানাতে বলেছেন। আবার একই তারিখে নিয়োগ কার্যক্রম সঠিকভাবে সম্পূর্ন করার জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর চিঠি প্রদান করা হয়। একই দিনে একই ব্যক্তির সাক্ষরিত দুই ধরনের চিঠিতে আমরা উদ্বিগ্ন। এমনকি সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটে ঢুকেও চিঠি পাওয়া যায়নি। আমি আশা করি, চিঠির বিষয়টি খোলাসা করে এসব অনিয়ম দুর্নীতির দায়ে নিয়োগ কার্যক্রম স্থায়ি ভাবে বন্ধ ঘোষনাপূর্বক মেয়রের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করবেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা।
এ ব্যপারে মুঠো ফোনে জানতে চাইলে বাঘা পৌরসভার মেয়র মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, নিয়োগের বিষয়ে যতদিন স্থগিত আদেশ ছিলো নিয়ম অনুযায়ী আমরা ততদিন সময় পাবো। সেই সময়ের মধ্যে আমরা নিয়োগ সংক্লান্ত কার্যক্রম শেষ করবো বলেও জানান তিনি।
এছাড়াও সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বাঘা পৌরসভার মেয়র আব্দুর রাজ্জাক বিটিসি নিউজকে বলেন, আমার বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ আনা হচ্ছে তা সঠিক না। একটি মহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। তারাই অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমি কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতির সঙ্গে সম্পূক্ত না বলে দাবি করেন মেয়র।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নিজস্ব প্রতিনিধি মো. মাসুদ রানা রাব্বানী / রাজশাহী। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.