দুই বছর ধরে ব্যবহৃত হচ্ছে না বাগাতিপাড়ায় মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স!


নাটোর প্রতিনিধি:  নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন দুই বছরের অধিক সময় ধরে ব্যবহৃত হচ্ছে না। ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে কমপ্লেক্স ভবন থেকে তৎকালীন কমান্ডার রশীদুন্নবী বেফিনের মরদেহ উদ্ধারের পর থেকে কমপ্লেক্স ভবনটি বন্ধ রয়েছে।

সেসময় পুলিশের নির্দেশে প্রায় ছয় মাস বন্ধের পর ভবনটি ব্যবহারের অনুমতি দিলেও বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ভেঙ্গে যাওয়ায় তা এখনও বন্ধই রয়েছে।

এছাড়াও কমপ্লেক্স ভবনের প্রথম দুটি তলায় দোকান ঘর ভাড়ায় বরাদ্দ দেওয়ার কথা থাকলেও তাও কার্যকর হয়নি। এদিকে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নির্মিত কমপ্লেক্স ভবনটি এভাবে বন্ধ থাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের পাশাপাশি সাধারন মানুষও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে দুই কোটি ৭৩ লক্ষ ৪৯ হাজার টাকা ব্যয়ে কমপ্লেক্স ভবনটি নির্মাণ কাজ শেষ হয় ২০১৫ সালের ৩০ অক্টোবর। পরে ২০১৬ সালে ৫ সেপ্টেম্বর তিন তলা বিশিষ্ট কমপ্লেক্স ভবনটি উদ্বোধন করেন নাটোর-১ আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট আবুল কালাম আজাদ।

বাগাতিপাড়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আজাদ হোসেন বিটিসি নিউজকে বলেন, কমপ্লেক্সটি উদ্বোধনের পর থেকেই মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছিল।

প্রায় আট মাস ব্যবহারের পর ২০১৭ সালের ৬ এপ্রিল কমপ্লেক্স ভবন থেকে তৎকালীন কমান্ডার রশীদুন্নবী বেফিনের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

এরপর থেকেই তদন্তের স্বার্থে পুলিশ কমপ্লেক্স ভবনটি বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়। কয়েক মাস বন্ধ থাকার পর ওই বছরই ১২ অক্টোবর বাগাতিপাড়া থানার তৎকালীন অফিসার ইনচার্জ মনিরুল ইসলাম ওই মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনটি ব্যবহারের অনুমতি দেন।

তিনি আরও বলেন, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের চিঠি অনুযায়ী সংসদ ভেঙ্গে দেওয়া হলে ওই বছরের ২৪ জুলাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পান। বর্তমানে নির্বাচিত মুক্তিযোদ্ধা সংসদ না থাকায় ভবনটিও আর ব্যবহৃত হচ্ছে না। প্রায় ২৬ মাস ধরে কমপ্লেক্স ভবনটি বন্ধ রয়েছে। এছাড়া ওই ভবনের প্রথম এবং দ্বিতীয় তলায় ১২ টি কক্ষ ভাড়ায় বরাদ্দ দেওয়ার কথা থাকলেও তা কার্যকর হয়নি।

তবে তিনি দাবি করেন, ভাড়া কমিটির চাহিদার টাকায় ভাড়া নিতে সাধারন মানুষের অনাগ্রহের কারনে ভাড়া দেওয়া যায়নি। তাছাড়াও ভবনটির রক্ষণা-বেক্ষণের জন্য কর্মচারীদের বেতন-ভাতাদীরও কোন ব্যবস্থা না থাকায় কমপ্লেক্স ভবনটি বন্ধ রয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নির্বাচন না হওয়ায় দাপ্তরিক অনেক বিষয়ই মুক্তিযোদ্ধাদের জানতে বিলম্ব হচ্ছে।

মুক্তিযুদ্ধের স্থানীয় সংগঠক মুক্তিযোদ্ধা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব শ্যামল কুমার রায় বিটিসি নিউজকে জানান, কেন্দ্রীয় কমান্ড সহ সারাদেশের মুুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ড ভেঙ্গে দেওয়ার পর জেলা পর্যায়ে ডিসি ও উপজেলা পর্যায়ে ইউএনওকে প্রশাসকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অফিস খোলা মেলার বিষয় তারাই নয়ন্ত্রণ করবেন। তবে বাগাতিপাড়া মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনে এর আগে বিজয়ের মাসেও জাতীয় পতাকা উড়তে দেখা যেত না।

তবে এবিষয়ে মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিবাদী হয়ে উঠলে তৎকালীন ইউএনও জাতীয় পতাকা ও মুক্তিযোদ্ধাদের নিজস্ব পতাকা উত্তোলনের ব্যবস্থা গ্রহন করেন। ভবনটি বন্ধের ফলে মুক্তিযোদ্ধারা কমপ্লেক্স ভবন কেন্দ্রিক যেসব সুযোগ সুবিধা পাওয়া কথা ছিল তা পাচ্ছেন না। তিনি এসব সমস্যা সমাধানে দ্রুত মুক্তিযোদ্ধা সংসদ নির্বাচনের দাবি জানান।

স্থানীয়রা বিটিসি নিউজকে জানান, বিশেষ দিনে ভবনের সামনে স্থাপিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান হচ্ছিল। কিন্তু উপজেলা চত্ত্বরে নতুন আরও একটি ম্যুরাল স্থাপিত হওয়ায় প্রশাসনিকভাবে সেখানেই ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

এর ফলে মুক্তিযোদ্ধারা ছাড়া কমপ্লেক্সের ম্যুরালে আর কেউ ফুল দিতেও আসে না। দীর্ঘ দিন ধরে ব্যবহার না হওয়ায় কমপ্লেক্স ভবনটিতে এক ধরণের ভুতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রশাসক ও নির্বাহী কর্মকর্তা প্রিয়াংকা দেবী পাল বিটিসি নিউজকে বলেন, তিনি সদ্য এই কর্মস্থলে যোগদান করেছেন। বিষয়টি জানার পর যোগাযোগ করা হলে ঘর বরাদ্দ নিতে আগ্রহীরা এখন আর ঘর নিতে রাজি হ”ছনেনা।

এ বিষয়ে কমপ্লেক্স ভবনটির ভাড়া বরাদ্দ প্রদান কমিটির সভাপতি নাটোর জেলা প্রশাসক মো. শাহরিয়াজ বিটিসি নিউজকে বলেন, মুলতঃ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ না থাকায় কমপ্লেক্স ভবনটি ব্যবহার হয় না। তাছাড়া স্থানীয়রা দোকান ঘর ভাড়া নেওয়ার প্রতি তেমন আগ্রহ দেখান না।

সম্প্রতি তথ্য আপা নামের একটি প্রকল্পের অফিসের জন্য ভাড়া নিতে চেয়েও পরে তারা আগ্রহ দেখাননি।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর নাটোর প্রতিনিধি খান মামুন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.