দুই ট্রাক চাল পাচারের অভিযোগে খাদ্যগুদাম কর্মকর্তাসহ ২ জন কারাগারে

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি: টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির দুই ট্রাক চাল পাচারের অভিযোগে বেলাল হোসেন নামে এক খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা (ওসি-এলএসডি) ও আল আমীন নামে এক নৈশপ্রহরীকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
আজ বুধবার (১৪ এপ্রিল) দুপুরে আসামিদের টাঙ্গাইলের আদালতে নেওয়া হলে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার (১৩ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১২টার দিকে ভূঞাপুর উপজেলা খাদ্যগুদাম থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর চালবোঝাই একটি ট্রাক জব্দ করা হয়েছে। তবে পাচার হওয়া আরেকটি ট্রাকে ৩৬০ বস্তা চালের সন্ধান এখনো মেলেনি।
এ ঘটনায় আজ বুধবার (১৪ এপ্রিল) সকালে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মুক্তা রাণী সাহা খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা বেলাল হোসেন, নৈশপ্রহরী আল-আমীনসহ অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে ভূঞাপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। পরে গ্রেপ্তার দুই আসামীকে আজ বুধবার (১৪ এপ্রিল) দুপুরে আদালতে নেওয়া হয়।
স্থানীয় জানা গেছে, ভূঞাপুর খাদ্যগুদামের সিসিটিভি ক্যামেরা বন্ধ করে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল ট্রাকযোগে পাশের ঘাটাইল উপজেলার হামিদপুর বাজারে একটি রাইস মিলে বিক্রির জন্য নেওয়া হয়। আজ বুধবার আরও একটি ট্রাকে চাল বোঝাই করা হয়। এতে ১৪ মেট্রিক টন চাল ছিল। তবে ওই চাল ভূঞাপুর উপজেলার গাবসারা ইউনিয়নের ডিলার নজরুল, ফরহাদ ও দিলীপ, অর্জুনা ইউনিয়নের ডিলার সাখাওয়াত হোসেন লেবুর চাল বলে দাবী করেন খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা বেলাল হোসেন। এ বিষয়ে তিনি ভূঞাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর ডিলারদের রেখে যাওয়া চাল বলে লিখিত বক্তব্য দেন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান, ভূঞাপুর উপজেলার খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির বিভিন্ন ডিলার কিছু কিছু চাল গুদামে রেখে যায়। তাদের মধ্যে গাবসারা ইউনিয়নের ফরহাদ হোসেনের ৪ মে. টন, নজরুল ইসলামের ৪ মে. টন, দিলিপের ৪ মে. টন এবং অর্জুনা ইউনিয়নের ডিলার সাখাওয়াত হোসেন লেবুর ২ মেট্রিক টন চাল রয়েছে- যা ৩০ কেজি ওজনের সর্বমোট ২৪০ বস্তায় রাখা হয়েছে।
অপর ট্রাকটির বিষয়ে লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান, ওই ট্রাকে চালের বস্তা উঠানোর সময় তিনি উপ-খাদ্য পরিদর্শকের সঙ্গে অলোয়া ইউনিয়নের ডিলারের দোকান পরিদর্শনে যান। এ বিষয়ে তার কিছু জানা নেই।
এ বিষয়ে ভূঞাপুর খাদ্যগুদামের নৈশপ্রহরী আল আমীন তার লিখিত জবাবে বলেন, ‘তিনি খাদ্যগুদাম কর্মকর্তার মৌখিক নির্দেশে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল প্রথমে একটি ট্রাকে ভর্তি করেন। পরে আবার আরও একটি ট্রাকে বাকি চাল ভর্তি করা হয়।’
ভূঞাপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা মুক্তা রাণী সাহা জানান, ট্রাকে পাচার হওয়া চাল গত মার্চ মাসে খুলনা থেকে ভূঞাপুর গুদামে এসেছিল। তবে চালগুলো বরাদ্দের জন্য এখনো কোনো নির্দেশনা আসেনি। এর মধ্যেই খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা কীভাবে তা পাচার করছেন- সেটা তার জানা নেই।’
ভূঞাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবদুল ওহাব বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলাটি দুদক সংশ্লিষ্ট হওয়ায় জেলা দুদক সমন্বয় কার্যালয়ে পাঠানো হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইশরাত জাহান বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, ‘চাল পাচারের ঘটনায় খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা বেলাল হোসেন ও নৈশপ্রহরী আল আমীনকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে। চাল বোঝাই ট্রাক জব্দ করে পুলিশের জিম্মায় রাখা হয়েছে। পাচার হওয়া অপর ট্রাকের কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে পুলিশ তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।’
টাঙ্গাইল জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. কামাল হোসেন বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে তিন সদস্যের বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা তিন কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করবে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া পাচার হওয়া ৩৬০ বস্তা চাল উদ্ধারে আইনশৃখলা বাহিনীর সহযোগিতা নেওয়া হচ্ছে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর টাঙ্গাইল প্রতিনিধি মো, সেলিম রেজা। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.