দিঘলিয়ায় গাভী পালন করে স্বাবলম্বী ফরমাইশখানার এক মোল্লা পরিবার

দিঘলিয়া (খুলনা) প্রতিনিধি: খুলনা জেলার দিঘলিয়া উপজেলার ফরমাইশখানা গ্রামের মোল্লা পরিবার খামার করে সাফলতা অর্জন করেছেন। দিঘলিয়া উপজেলার বাসিন্দা মরহুম খোশদেল মোল্লার পুত্র মোঃ কামরুল মোল্লা ও মোঃ কামাল মোল্লা দুই ভাই। চাকুরী ও ব্যবসা-বানিজ্যে দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পেতে হবে, সংসারের শুরু থেকেই এ নিয়ে নানান স্বপ্ন তাদের। স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে নিয়ে শুধু ধান চাষ করে পেট চালানো যায় না। তাই দারিদ্র্য থেকে কিভাবে মুক্তি পাওয়া যায় এ চিন্তায় তারা যেন ঠিকমতো ঘুমাতে পারতেন না।
একপর্যায়ে মাত্র ১২ হাজার টাকা দিয়ে বিদেশি জাতের একটি ৪ মাসের গভীন গাভী কিনে শুরু করেন গাভী পালন। এটাই যেন তাদের অভাব মোচনের শুরু।
ধীরে ধীরে নিজেদের গরুর খামারটিকে আরো বড় পরিসরে রূপ দিতে সরকারি-বেসরকারি সংস্থার কাছে ঋণের জন্য দৌড়া-দৌড়ি শুরু করেন এবং ঋণ পেয়েও যান। এরপর তাকে আর পেছনে ফিরে থাকাতে হয়নি।
এতক্ষণ গাভী পালন করে স্বাবলম্বী খামারি কামরুল-কামালের কথা হচ্ছিল। খুলনা শহরের উত্তর কোল ঘেষে ভৈরব নদীর উত্তর পারে দিঘলিয়া উপজেলা। এ  উপজেলার ফরমাইশখানা গ্রামে এক ভাই স্ত্রী, এক ছেলে এবং এক মেয়ে নিয়ে তার সংসার। অপর ভাইয়ের স্ত্রী ও দুই পুত্রের সংসার।
মোল্লা কামরুল ও মোল্লা কামাল বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, ১০ বছর আগে তাদের সংসারে চরম অভাব ছিলো। এখন আল্লাহর রহমতে তাদের অভাব পালিয়ে গেছে। নিজ নিজ স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে তাদের খামারের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। বর্তমানে খামার শুধু দুই ভাইয়ের মধ্যে  নয়। তাদের দুই ভাইয়ের পাশাপাশি মেঝে ভাইয়ের তিন পুত্র মোল্লা ফারুখ, মোল্লা মাহমুদ ও মোল্লা মারুফও এখন পিছিয়ে নেই। বর্তমানে গোটা মোল্লা পরিবার খামারী নামে নিজেরাই আত্ন পরিচিত।
বর্তমানে কামালের খামারে ১টি গাভী থেকে ৪টি গাভী, ১টা ষাড় গরু যার মূল্য আনুমানিক ৩ লাখ টাকা এবং ৩টি বাছুর রয়েছে। যার বাজার মূল্য বর্তমানে ১২ লাখ টাকারও বেশি। ইতোমধ্যে আরো ২টা গাভী বিক্রি করেছেন। বর্তমানে তিনি প্রতিদিন ২০ কেজি করে দুধ পাচ্ছেন। প্রতিদিন দুধ বিক্রি করে গরুর দৈনন্দিন খরচ মিটিয়েও প্রতিমাসে বছর বাছুর ছাড়াও ৭০/৭৫ হাজার টাকা উদ্বৃত্ত থাকে। অপর ভাই কামরুলের ১টা গাভী ও ২টা বাছুর। গাভী বর্তমানে ১৫/১৬ কেজি দুধ দেয়। সব দুধ সপ্তাহে দুইদিন খুলনায় নিয়ে যোগান বিক্রি করেন। তিনিও দুধ বিক্রি করে সংসার ও গরুর খাবার ম্যানেজ করেন। পরিবারের ভাইপো ফারুখের ২টা গাভী ও ২টা বাছুর, মাহমুদের ১টা ষাঁড় এবং মারুফের ১টা গাভী। পরিবারের অপর ভাই মোল্লা জুলফিকারেরও ১টা গাভী ও ১টা বাছুর।
খামারী কামরুল ও কামাল বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, নিজেদের ও গরুর খাবার চাহিদা পুরণের জন্য তাঁরা জমিতে ধান চাষ করছেন। দেড় বিঘা জমিতে ঘাস চাষ করছেন। গরুর খাদ্য মূল্য অনেক বেশী। নিজের খড় ও ঘাস উৎপাদন না করতে পারলে খামার টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। আমরা আমাদের বাড়ির আঙ্গিনায় লাউ, বেগুন, সিম ও বেগুনের চাষ করেছি। পুকুরে মাছ চাষ করেছি। গোলা ভরা ধান, পুকুর ভরা মাছ ও গোয়াল ভরা গরু শুধু তাদের ক্ষেত্রে সাজে। এখানেই শেষ নয়। তারা আরো বলেন তাদের পরিবারের জ্বালানী চাহিদা পুরণের জন্য বাড়িতে বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপন করেছি। যে গ্যাস উৎপাদন হয় তা দিয়ে তাদের জ্বালানী চাহিদা পূরণ হয়ে যায়। বায়োগ্যাস প্লান্ট থেকে উচ্ছিষ্ট গবর আমরা জৈব সার হিসেবে জমিতে ব্যবহার করি। শুধু আমরাই নই আস পাশের লোকজন সার ও জ্বালানি হিসেবে মুটে তৈরির জন্য গবর নিয়ে যায়। তারা এ প্রতিবেদকের মাধ্যমে দিঘলিয়ার যুব সমাজকে ধান ও ঘাস চাষের পাশাপাশি পরিবার ভিত্তিক খামার স্থাপনে এগিয়ে আসার আহবান জানান।
দিঘলিয়া উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার মোঃ ফজলুল করিম বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, দিঘলিয়ার ফরমাইশখানা কামরুল ও কামালের পারিবারিক খামার আমি মনে করি দিঘলিয়া তথা খুলনাবাসীর জন্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে আদর্শ। আমরা দিঘলিয়ার বড় বড় প্রশিক্ষণে তাদের ডেকে নিয়ে তাদেরকে উৎসাহিত করব। আমার পক্ষ থেকে তাদেরসহ সকল খামারীদের সকল প্রকার সাহায্য সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর দিঘলিয়া (খুলনা) প্রতিনিধি সৈয়দ আবুল কাসেম। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.