দালালদের স্বর্গরাজ্য আর দুর্নীতি ও অনিয়মের আখড়ায় পরিণত হয়েছে সাতক্ষীরা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি: সরজমিনে সাতক্ষীরা পাসপোর্ট অফিসে গেলে  দেখা যায়, দালাল বা স্থানীয় নির্ধারিত কম্পিউটারের দোকান ছাড়া সরাসরি নির্দিষ্ট ব্যাংকে ফি জমা দিয়ে কেউ যদি পাসপোর্ট ফরম জমা দিতে যায়, তাহলে সেই পাসপোর্ট ফরমের নানা রকম ভুল ক্রটিপূর্ন বের করে পাসপোর্ট আবেদনকারী গ্রাহককে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
আবার একই ফরম টাকার বিনিময়ে কোনো দালালের মাধ্যমে জমা দিলে সাথে সাথেই জমা নেওয়া হয়। তখন ফরমে কাগজপত্র আর কোনো ত্রুটিপূর্ণ থাকে না। দ্রুত সময়ে তৈরি হয়ে যায় পাসপোর্ট বই।
 এই ভাবে জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা প্রতিনিয়ত সাধারণ পাসপোর্ট গ্রাহকরা সাতক্ষীরা পাসপোর্ট অফিসে এসে হয়রানি  হচ্ছে ভুক্তভোগীরা জানান।
সেলিম নামে এক পাসপোর্ট আবেদনকারীর ভুক্তভোগী শালক অভিযোগ করে বলেন, গত ২৭ জানুয়ারী নির্দিষ্ট ব্যাংকে পাসপোর্ট ফি জমা দিয়ে আমার ভাতিজাসহ ৩ টি পাসপোর্টের আবেদন অনলাইন করা হয়।
এর মধ্যে ২টি পাসপোর্ট  আবেদন ফরম আমি ও আমার ভাতিজা নিজেই ২০৭ নং কক্ষে দায়িত্ব থাকা সহকারী পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) কর্মকর্তার কাছে জমা দিতে যায়। আবেদন ফরমে ব্যাংকের নাম হাতে লিখে ও পেশার সনদ না দেওয়ায় নানা সমস্যার মুখে হয়রানি শিকারে পড়তে হয়।
পরবর্তীতে ওই ২ টি ফরমে ব্যাংকের নাম হাতে লিখে ও পেশার সনদ দিলে তখন ওই ২০৭ নম্বর কক্ষের সহকারী পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) কর্মকর্তা ফরম ২ টি জমা নেয়। অথচ আরেকটি আবেদন ফরমে ব্যাংকের নাম হাতে লেখা ও পেশার সনদ ছাড়াই দালালের মাধ্যমে টাকার বিনিময়ে ফরম জমা দেওয়া হলেই ফরমের কোনো ক্রটিপূর্ন  সমস্যা ছাড়াই ফরমটি জমা নেয় ওই ২০৭ নম্বর কক্ষে দায়িত্ব থাকা পাসপোর্ট কর্মকর্তা।
তবে  পাসপোর্ট অফিসে আমার ২টি জমাকৃত  আবেদন ফরম দালালের মাধ্যমে জমা না দেওয়ায় জমাকৃত ফরম ২ টি ব্যাকেন্ট ভেরিভিকেশনের জন্য উক্ত অফিসে এখনো পর্যন্ত পড়ে আছে। অথচ একই দিনে এবং পরবর্তীতে দিনগুলোর পাসপোর্ট অফিসে যারা দালালের মাধ্যমে পাসপোর্ট আবেদন জমা দিয়েছেন তাদের আবেদন ফরম ভেরিভিকেশন হয়ে গেছে। তবে ওই ২ টি ফরম দালালের মাধ্যমে নির্ধারিত টাকা পৌঁছে দিলে নাকি দ্রুত ভেরিভিকেশন হয়ে যাবে বলে ভুক্তভোগী পাসপোর্ট গ্রাহক জানান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সদস্য বিটিসি নিউজকে জানান, অফিসটি সিসি ক্যামেরার থাকলেও সিসি ক্যামেরার নিয়মে অফিস চলে না। এখানকার কর্মকর্তারা মোবাইল ফোনে এসএমএস করে তাদের নিজের তৈরিকৃত ফাইলে কোড পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সেই কোড অনুযায়ী টাকার বিনিময়ে পাসপোর্ট ফর্ম ইস্যু করে থাকেন।
এই ভাবে জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে অসহায়, দরিদ্র সরল সহজ মানুষ পাসপোর্টের জন্য ফরম জমা দিতে এসে দিনের পর দিন হয়রানির শিকার হচ্ছে। কিন্তু তাদের পাসপোর্ট জরুরি দরকার হওয়ায় কেউ অভিযোগ দিতে সাহস পায় না।
কারণ সাধারণত মানুষের জরুরি চিকিৎসা, শিক্ষার্থীদের ভিসা সংক্রান্ত বিষয়, আবার অনেকের বিদেশে ব্যবসায়িক কাজে এবং কারো জরুরি বিদেশ ভ্রমণের মতো বিষয় থাকায় পাসপোর্ট অফিসের দূর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না।
এদিকে সাতক্ষীরা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসেের ৭ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পাসপোর্ট গ্রাহকদের সেবা প্রদানের নামে ঘুষের দাবি ও হয়রানির অভিযোগে দুনীতি কমিশন সাতক্ষীরা জেলা ইউনিট এর খুলনার সহকারী পরিচালক আল-আমীনের নেতৃত্বে ২০২২ সালের ১৬ আগস্ট একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান চালায়। সাতক্ষীরা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে প্রথমে দুদক টিম ছদ্নবেশে এই পাসপোর্ট অফিসে ঢুকে অনিয়মের তথ্য পায়।
সাতক্ষীরা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের তৎকালীন সহকারী পরিচালক শাহজাহান কবিরের কক্ষে গিয়ে তার সাথে পাসপোর্ট অফিসে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে আলোচনা করেন দুদক টিম। সেই সময় কয়েকজন সেবা গ্রহীতার অনলাইন আবেদন কপি সংগ্রহ করে এবং বিভিন্ন অনিয়মের সত্যতা পায়। তার পরও পাসপোর্ট অফিসে দালালদের স্বর্গরাজ্য আর কর্মকর্তাদের দুর্নীতি ও অনিয়মের স্বর্গরাজ্য এখনো পর্যন্ত বন্ধ হয়নি বলে সূত্রে জানান।
সদ্য যোগদানকৃত সাতক্ষীরা পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসানের কাছে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিটিসি নিউজকে বলেন ফাইল ২ টি সেন্ট্রাল অফিসে তদন্ত রয়েছে। তবে আমার জানামতে পাসপোর্ট অফিসে কোনো প্রকার কেউ হয়রানির শিকার হয় না। আমি বেশ কয়েকদিন হয়েছে নতুন যোগদান করেছি। গ্রাহকদের কেউ হয়রানি করে তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর সাতক্ষীরা প্রতিনিধি মো. সেলিম হোসেন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.