তোরা মেলাই-সেলাই দে আমরা লুটে পুটে খাই, দিঘলিয়ার ভৈরব নদীতে নঙ্গর করা ট্যাংকার থেকে লাখ লাখ টাকার জ্বালানি তেল চুরি

বিশেষ (খুলনা) প্রতিনিধি: দেশে জ্বালানি তেলের বাজার যখন টালমাটাল যে সময় জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে মানুষের নাভিশ্বাস ঠিক সেই সময় খুলনায় চলছে ট্যাংকার থেকে ও ট্যাংকলরী এবং রেলের ওয়াগন থেকে জ্বালানি তেল চুরির মহোৎসব।
সংঘবদ্ধ চক্র স্থলে রেলের ওয়াগন ও ট্যাংকলরী থেকে ড্রাম বা ক্যান ভর্তি করে এবং রাতের বেলা ভৈরব নদীতে নঙ্গর করা জাহাজ থেকে নৌকা নিয়ে জ্বালানি তেল চুরি করছে প্রতিনিয়ত। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ হলেও আইন প্রয়োগকারী বিভিন্ন সংস্থা অজ্ঞাত কারণে নিরব দর্শকের ভূমিকায়। 
বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, খুলনার খালিশপুর থানার কাশিপুরে ভৈরব নদী তীরে মেসার্স পদ্মা, মেসার্স মেঘনা ও মেসার্স যমুনা নামে ৩টি তেলের ডিপো অবস্থিত। এ সকল ডিপোতে নানা ধরনের জ্বালানি তেল সরবরাহ করে চট্টগ্রাম থেকে আসা ট্যাংকার জাহাজ গুলো।
এ সকল ট্যাংকারগুলো তেল খালাসের জন্য চরেরহাট থেকে ডিপো পর্যন্ত ভৈরব ও ভৈরব-আতাই নদীর মোহনায় বিচ্ছিন্নভাবে নিরাপত্তাহীন পরিবেশে নঙ্গর করে অপেক্ষা করে। দিঘলিয়া, কাশিপুর ও রূপসা উপজেলার একটা প্রভাবশালীমহল ক্ষমতাসীন দলের নাম ভাঙ্গিয়ে রাতের আঁধারে ট্যাংকারগুলোর অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সাথে আঁতাত করে বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের ম্যানেজ করে বড় বড় নৌকা নিয়ে লাখ লাখ টাকার জ্বালানি তেল চুরি করছে। এ সব চোরাই তেল ফরমাইশখানা, সেনহাটি, নগরঘাট কাশিপুরসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাচার ও বিক্রি করা হয়।
একটি সূত্র থেকে জানা যায়, এ সকল ট্যাংকার অভিনব কৌশলে নির্মাণ করা হয়। যে কারণে এ সকল ট্যাংকারে পরিমাপের অনেক বেশী পরিমাণে তেল লোড হয়। যে তেল চোরাই পথে বিক্রি হয়। লাভবান হয় বিপিসির অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সরকারি প্রতিষ্ঠান ও সরকারি রাজস্ব।
অপর দিকে, উক্ত তেল ডিপোগুলো থেকে বিভিন্ন জ্বালানি তেল ট্যাংকলরী ও রেলের ওয়াগনে লোড নিয়ে ডিপোগুলো থেকে বিদায় নিয়ে গেটের থেকে বের হওয়ার সাথে সাথে শুরু হয় তেল পাচারের প্রতিযোগিতা। এ সব তেল নিজ নিজ দোকানে মজুদ করে স্থানীয় দোকানে বা ডিলারদের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়।
উল্লেখ্য যে, এ সকল ট্যাংকলরী তেল লোড নিয়ে খুলনাসহ কয়েকটি জেলায় সরবরাহ কাজে নিয়োজিত। পাশাপাশি রেলের ওয়াগনে লোড নিয়ে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়। এ সব ট্যাংকলরী ও রেলের ওয়াগন থেকে প্রতিনিয়ত লাখ লাখ টাকার জ্বালানি তেল চুরি হয়। ডিপোগুলোর একশ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারী ট্যাংকলরীর চালক ও হেলপার এবং কাশিপুরের একটা সংঘবদ্ধ চোর চক্র প্রতিনিয়ত দিন-রাত সব সময় তেল চুরি করছে। এখানেও ট্যাংকারের ট্যাংকগুলো অভিনব কৌশলে নির্মাণ করা। তেল লোড হয় বেশী দেখায় কম। মেজারমেন্টে থাকা লোক ছাড়া কেউ ধরার উপায় নেই। এভাবে তেল চুরির কারণে ক্ষতি গ্রস্ত হচ্ছে জ্বালানি তেলের ডিপো মালিকগণ, এজেন্টগণ সরকারি প্রতিষ্ঠান বিপিসি। সরকার হারাচ্ছে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব। জ্বালানি তেলের মধ্যে কেরোসিন, ডিজেল, অকটেন, পেট্রোল ও ফার্নেস ওয়েল অন্যতম।
অপর দিকে কাশিপুরের লোকমান, তরিকুল, আজগর, রকি, রবিন, পলাশ, নাসির, সুমন, মহিদুল, অন্তুসহ কাশিপুরের ১৫/২০ জন, ফরমাইশখানার ৮/১০ জন এবং সেনহাটি, চন্দনীমহল ও চন্দনীমহলের ওপারের রূপসা পারের একটা চক্র এ তেল চুরির ব্যবসা চালিয়ে আসছে অবাধে। 
অপর এক সূত্রে জানা গেছে, এই অবৈধ জ্বালানি তেলের অবৈধ কারবার সচল আধিপত্য রক্ষা বা হাত বদলের জন্য ফরমাইশখানা বার্ম্মাশীলঘাট ও আশেপাশে ঘটেছে একাধিক হত্যা, হামলা ও মামলার ঘটনা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক ব্যবসায়ী বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, কাশিপুর, ফরমাইশখানা, দিঘলিয়া ও রূপসা উপজেলার একটা সংঘবদ্ধ চক্র স্থাপনা তৈরি করে এ সব জ্বালানি তেল চুরি করছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এ সকল দুর্নীতি ও জ্বালানি তেল চুরির খেসারত সাধারণ মানুষের ঘাড়ে চাপানোর মানসে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। আলম নামে একজন জ্বালানি তেল ব্যবসায়ী এ প্রতিবেদককে বলেন, এ তেল চোরাই চক্রের সাথে প্রভাবশালী একটি মহলের ও আইন প্রয়োগকারী বিভিন্ন মহলের গোপন আঁতাতে এ তেল পাচার চলে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্তাব্যক্তি বা মহলকে জানিয়েও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায় না।
অপর এক সূত্র থেকে জানা যায়, এ তেল চুরির আধিপত্য নিয়ে বার্ম্মাশেল খেয়াঘাটে ও কাশিপুরে অনেক লোমহর্ষক ঘটনা ঘটেছে। এমন কি হামলা প্রতিহামলা, মামলা, একাধিক হত্যা পর্যন্ত সংঘটিত হয়েছে। বিগত দিনে চোরাই তেল, নৌকা ও ট্রলারসহ তেল চুরির সাথে জড়িত একাধিক চক্র গ্রেফতার হয়েছে। আইন প্রয়োগকারী সকল সংস্থার জোরালো অভিযানের কারণে কয়েক বছর তেল চুরি বন্ধ থাকলেও বর্তমানে এ প্রভাবশালী চোরাই চক্র চ্যালেঞ্জ নিয়ে চোরাই পথে নেমেছে। সংশ্লিষ্ট চক্রের আস্ফালন আমরা সকলকে টাকা দিই। আমাদের কেউ কিছু করতে পারবে না।
ভৈরব নদীতে নঙ্গর করা ট্যাংকার থেকে ট্রলার নিয়ে জ্বালানি তেল চুরির ব্যাপারে দিঘলিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ রিপন কুমার সরকারের সাথে কথা হয়। তিনি বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, দিঘলিয়া পারে কেউ তেল চুরির সাথে সম্পৃক্ত হলে তাকে ছাড় দেওয়া হবে না। নদীর ওপারে কেউ করলে আমাদের করার কিছু নেই। দিঘলিয়া পারের কেউ তেল চুরির সাথে সম্পৃক্ত হলে তিনি দিঘলিয়া পুলিশকে জানানোর অনুরোধ করেন।
গত শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিকালে মেসার্স পদ্মা নামক ডিপোতে নঙ্গর করা জাহাজ থেকে ঘাটের একাধিক ট্রলার নিয়ে তেল চোরদের প্রকাশ্যে জ্বালানি তেল চুরির ব্যাপারে কথা হয় খুলনা কেএমপি সদর নৌ থানার ওসি অনিমেষ হালদারের সাথে। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, আমি খুলনা থেকে ঢাকায় বদলী হয়েছি।
তিনি বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে ০১৩২০-১৬৬৫৪০ নম্বরটি দিয়ে ফোন করতে বললেন। কিন্তু বারবার উক্ত নম্বরে ফোন করেও ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরবর্তিতে উক্ত মোবাইল নম্বরদাতাকে পুনরায় জানালে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, আমি জানিয়ে দিচ্ছি। তিনি আদৌ জানালেন কিনা তা জানা সম্ভব হয়নি।
কাশিপুর বিভিন্ন তেলের ডিপো রোডের পাশে বেড়া বা শার্টারযুক্ত দোকান করে দিবারাতে ট্যাংকলরী থেকে তেল পাচার ও রেল লাইনের পাশে স্থাপনা তৈরি করে ওয়াগন থেকে ও বিএল কলেজ ও যমুনা তেলের ডিপো সংলগ্ন বালিঘাটে স্থাপনা তৈরি করে প্রতিনিয়ত তেল চুরি করে উক্ত এলাকার একটা সংঘবদ্ধ চক্র। তা ছাড়া ভৈরব নদীতে নঙ্গর করা জাহাজ থেকে তেল চুরি করে ট্রলার ভর্তি জ্বালানি তেল ওঠানো হয় কাশিপুর এলাকায়।
এ ব্যাপারেও একই দিনে কথা হয় খালিশপুর মেট্রো থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেনের সাথে। তিনি বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, নদী থেকে তেল চুরির বিষয়টি দেখবে নৌপুলিশ। তাদের জানান। তেল চুরির সাথে জড়িত সিন্ডিকেটটা কাশিপুরের। আর জাহাজ থেকে ঘাটের ট্রলার ভর্তি জ্বালানি তেল চুরি করে তো কাশিপুরে ওঠানো হচ্ছে এমন কথার জবাবে তিনি বলেন আমি বিষয়টা দেখছি। বিজ্ঞমহলের জিজ্ঞাসা সরকারি এ জ্বালানি তেল সম্পদ কি এভাবে লুটপাট হয়ে যাবে? কেউ কি নেই এ বিষয়ে প্রতিকারে এগিয়ে আসবে?
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বিশেষ (খুলনা) প্রতিনিধি সৈয়দ আবুল কাসেম। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.