তৃণমূলের শহিদ দিবসের জবাবে পথে নামছে বিজেপি

(তৃণমূলের শহিদ দিবসের জবাবে পথে নামছে বিজেপি–ছবি: প্রতিনিধির)
কলকাতা-হাওড়া (ভারত) প্রতিনিধি: তৃণমূল কংগ্রেসের ‘শহিদ দিবস’এর পাল্টা বিজেপির ‘শহিদ শ্রদ্ধাঞ্জলি দিবস’। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা তৃণমূলের মেগা ইভেন্টের এই পাল্টা কর্মসূচিকে ঘিরে এখন রীতিমতো সরগরম বাংলার রাজনীতি। ১৯৯৩ এ ২১ জুলাই যুব কংগ্রেসের মহাকরণ অভিযানে বামপন্থী সরকারের পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছিলেন ১৩ জন।
আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন যুব কংগ্রেসের সেই সময়ের রাজ্য সভানেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরের বছর থেকেই ২১জুলাই দিনটিকে ‘শহিদ দিবস’ হিসেবে পালন করে থাকে যুব কংগ্রেস।
১৯৯৮এ কংগ্রেস ভেঙে মমতার নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেস জন্ম নেওয়ার পর থেকেই ২১ জুলাই দিনটিকে প্রতিবছরই খুব বড় পরিসরে পালন করে আসছে তৃণমূল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যাকে বিজেপি বিরোধী প্রধান মুখ হিসেবে তুলে ধরার লক্ষ্যে এবারে এর পরিধি আরও অনেকটাই বাড়িয়ে সর্বভারতীয় রূপ দেওয়ার আয়োজন করেছেন তৃণমূলনেত্রীর ভাইপো সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। দলের সদ্য-দায়িত্বপ্রাপ্ত সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।
আগামীকাল বুধবার সেই ২১ জুলাই। করোনা সন্ত্রাসের পরিবেশে কোভিড বিধি মেনে ভার্চুয়াল মাধ্যমে তৃণমূলের এই অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি যখন তুঙ্গে, ঠিক তখনই পথে নামলো বিজেপি।
আজ মঙ্গলবার (২০ জুলাই) রীতিমতো সাংবাদিক সম্মেলন করে গেরুয়া শিবিরের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হলো, আগামীকাল ২১ জুলাই দিনটিকে ‘শহিদ শ্রদ্ধাঞ্জলি দিবস’ হিসেবে পালন করবেন তাঁরা। উদ্দেশ্য, বিধানসভা নির্বাচনের আগে এবং পরে বাংলায় রাজনৈতিক সন্ত্রাসে নিহত বিজেপির কর্মী-সমর্থকদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন।
২১ জুলাই ধর্মতলায় তৃণমূলের অনুষ্ঠান মানেই রেকর্ড জনসমাবেশ। আকার-আয়তনে প্রতিবছরই টেক্কা দেয় আগের বছরকে। মঞ্চে মূল আকর্ষণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ঘিরে তারকা সমাবেশও দেখার মতো। প্রতিবছরই নতুন নতুন চমক। নতুন নতুন অতিথি। শীর্ষনেত্রীর ভাষণে প্রতিফলিত হয় আগামী দিনে পথ চলার দিশা।
বিশ্বজুড়ে কোভিডের দাপটে ২০২০ থেকে অবশ্য বদলে গেছে এই মেগাইভেন্টের ধারাটা। বিশাল জনসমাবেশের বদলে ভার্চুয়াল মিটিং। গত বছর কালিঘাটে নিজের বাড়িতে বসেই ভাষণ দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবং জায়েন্ট স্ক্রিনে চোখ রেখে তা অনুধাবন করেন রাজ্য-জেলা-ব্লক-বুথ স্তরের নেতাকর্মীরা। মমতার বার্তা ছড়িয়ে পড়ে কলকাতা থেকে দিল্লিতে। শহর থেকে প্রত্যন্ত গ্রামে। এবারে বিধানসভা নির্বাচনে অভূতপূর্ব সাফল্যের পরে মমতাকে সর্বভারতীয় নেত্রী হিসেবে তুলে ধরতে বিশেষ মাত্রা দেওয়া হচ্ছে ২১ জুলাইকে। উত্তর-পূর্বের ত্রিপুরা থেকে শুরু করে দক্ষিণের তামিলনাড়ু, এমনকী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নিজের রাজ্য গুজরাটেও ২১ জুলাইকে সামনে রেখে ব্যাপক প্রচারাভিযান চালাচ্ছে মমতার দল। দেওয়ালে দেওয়ালে আঁকা মমতার মুখ। পোস্টার-ফ্লেক্স তো আছেই। রাজধানী দিল্লিতেও জায়েন্ট স্ক্রিনের ব্যাপক আয়োজন। নেত্রী ভাষণ দেবেন ভার্চুয়ালেই।
ঠিক এই পরিস্থিতিতেই আচমকা কর্মসূচি ঘোষণা করে দিয়ে ২১ জুলাইকে সামনে রেখেই কোমর বেঁধে নেমে পড়লো বিজেপি। দলের মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য আজ মঙ্গলবার (২০ জুলাই) এক সাংবাদিক সম্মেলনে জানালেন,বিধানসভা নির্বাচনের আগে ও পরে তাঁদের ১৫০ এরও বেশি কর্মী-সমর্থক রাজনৈতিক সন্ত্রাসে প্রাণ হারিয়েছেন। তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে আগামীকাল বুধবার ২১ জুলাইকেই ‘শহিদ শ্রদ্ধাঞ্জলি দিবস’ পালনের জন্য বেছে নিয়েছেন তাঁরা। শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে মূলত দিল্লি এবং কলকাতায়। কোভিড বিধি মেনেই। সকাল সাড়ে ১১ টায় দিল্লির  রাজঘাটে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সাংসদ দিলীপ ঘোষের নেতৃত্বে ধরনায় বসবেন সাংসদ-নেতা-কর্মীরা। অন্যদিকে কলকাতায় দলের হেস্টিংস কার্যালয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ভার্চুয়ালে তা অবশ্যই পৌঁছে যাবে রাজ্য-জেলা-মন্ডল এবং বুথস্তরে।
তৃণমূলের লক্ষ্য, দেশের অন্তত ৫০ লক্ষ মানুষের কাছে ভার্চুয়াল মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বার্তা। বিজেপিকে ক্ষমতাচ্যুত করার শপথ। অন্যদিকে বিজেপির লক্ষ্য, জাতীয়স্তর থেকে বুথস্তরে পৌঁছে দেওয়া তৃণমূলের সন্ত্রাসের কাহিনি। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে বিদেশের বাঙালি সমাজের কাছেও পৌঁছতে চান তাঁরা।
সত্যি, বঙ্গ-রাজনীতিতে এ যেন এক ভার্চুয়াল লড়াই !  
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ (বাংলাদেশ) এর কলকাতা-হাওড়া (ভারত) প্রতিনিধি সৌম্য সিংহ। # 

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.