রংপুর প্রতিনিধি: তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে পাঁচ মিনিটের ‘স্তব্ধ রংপুর’ কর্মসূচি পালন করেছে সর্বস্তরের মানুষ। আজ বৃহস্পতিবার (০১ জুন) বেলা পৌনে ১১টায় কর্মসূচির উদ্বোধন করেন সংগ্রাম পরিষদের প্রধান উপদেষ্টা ও রংপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের এই কর্মসূচিতে চলতি বাজেটে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে অর্থ বরাদ্দের দাবি জানানো হয়।
কর্মসূচির উদ্বোধনকালে চলতি বাজেট অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে অর্থ বরাদ্দ না দেওয়া হলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়ে মেয়র বলেন, আমরা তিস্তা নিয়ে আর টানাটানি দেখতে চাই না। ভারত অর্থ দেবে না চীন দেবে তা এখানকার মানুষ বোঝে না। নদীপাড়ের দুই কোটি মানুষের ভাগ্য নিয়ে কেউ খেলার অধিকার রাখে না। সরকারপ্রধান নিজেই তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে কিন্তু রংপুর অঞ্চল কোনো প্রকল্পই পাচ্ছে না, এই বৈষম্য দূর করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, যদি দেশের টাকায় পদ্মা সেতু করা যায় তাহলে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে দেশের অর্থায়ন কেন নয়! এত প্রকল্প চলছে কিন্তু তিস্তার জন্য কেন সরকার মাত্র ১০ হাজার কোটি টাকা দিচ্ছে না? অথচ তিস্তা মহাপরিকল্পনা দেশের জন্য সবচেয়ে লাভজনক। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলে ভাঙন ও ফসলহানির হাত থেকে রক্ষা পাবে লাখো মানুষ এবং হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ। এবার যদি তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে সরকার এই বাজেটে অর্থ বরাদ্দ না দেয়, তাহলে রংপুরের মানুষ সরকারকে লাল কার্ড দেখাবে।
তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি নজরুল ইসলাম হক্কানী বলেন, নদী ভাঙন ও বন্যায় প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ সর্বস্ব হারিয়ে নিজ দেশেই হচ্ছে শরণার্থী। বিলীন হচ্ছে হাজার হাজার হেক্টর ফসলি জমি। তাই তিস্তা চুক্তির অপেক্ষায় মহাপরিকল্পনার কাজ ঝুলিয়ে রাখা যাবে না।
এদিকে বেলা ১১টা বাজতেই জাতীয় সংগীতের মধ্যদিয়ে শুরু হয় ‘স্তব্ধ রংপুর’ কর্মসূচি। এ সময় সড়কের দু’পাশসহ যে যেখানে অবস্থান করছিলেন সেখানেই থমকে দাঁড়ান। রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পাশাপাশি ব্যবসায়ী, শিক্ষক, ছাত্র, শ্রমজীবী, কর্মজীবী, বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন এই দাবির প্রতি সংহতি প্রকাশ করে কর্মসূচিতে অংশ নেন। সর্বস্তরের মানুষ এত অংশ নেন।
পাঁচ মিনিটের এই কর্মসূচিটি রংপুরের ২৯টি পয়েন্টসহ তিস্তা নদীবেষ্টিতে বিভাগের বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়নে একই সময়ে পালন করা হয় বলে জানিয়েছেন তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শফিয়ার রহমান। কর্মসূচিতে দলমত নির্বিশেষে সবার অংশগ্রহণে অবিলম্বে চলতি বাজেটে অর্থ বরাদ্দসহ ছয় দফা দাবি বাস্তবায়নের দাবি উঠে আসে। এ সময় ছয়টি দাবি বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানান সংগঠনটির নেতারা।
৬ দাবির মধ্যে রয়েছে-
(০১). তিস্তা নদী সুরক্ষায় মহাপরিকল্পনার দ্রুত বাস্তবায়ন। অভিন্ন নদী হিসেবে ভারতের সঙ্গে ন্যায্য হিস্যার ভিত্তিতে তিস্তা চুক্তি সম্পন্ন, তিস্তা নদীতে সারাবছর পানির প্রবাহ ঠিক রাখতে জলাধার নির্মাণ।
(০২). তিস্তার ভাঙন, বন্যা ও খরায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের স্বার্থ সংরক্ষণ।
(০৩). ভাঙনের শিকার ভূমিহীন ও গৃহহীনদের পুনর্বাসন।
(০৪). তিস্তা নদী সুরক্ষায় বিজ্ঞানসম্মত খনন, মহাপরিকল্পনায় তিস্তা নদী ও তিস্তা তীরবর্তী কৃষকের স্বার্থ সুরক্ষায় কৃষক সমবায় এবং কৃষিভিত্তিক শিল্প কলকারখানা গড়ে তোলা।
(০৫). তিস্তা নদীর শাখা-প্রশাখা ও উপ-শাখাগুলোর সঙ্গে নদীর আগেকার সংযোগ স্থাপন এবং দখল-দুষণমুক্ত করা। নৌ চলাচল পুনরায় চালু।
(০৬). মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ এবং প্রস্তাবিত প্রকল্প এলাকায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তিস্তাপাড়ের মানুষদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর রংপুর প্রতিনিধি এস এম রাফাত হোসেন বাঁধন। #
Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.