তালাক নামায় স্বাক্ষর না করায় মধ্যযোগীয় কায়দায় নির্যাতনের শিকার নববধূ

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: কুড়িগ্রামে তালাক নামায় স্বাক্ষর না করায় অমানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এক নববধূ। বর্তমানে হাসপাতালের বেডে কাতরাচ্ছেন ওই নববধু। প্রেমের সম্পর্ক করে বিয়ের মাত্র এক মাসের মাথায় যৌতুক লোভী স্বামীর দাবিকৃত টাকা দিতে না পারায় জোর করে তালাক নামায় স্বাক্ষর নেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হলে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন করতে থাকে। এ নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার ঝর উঠেছে এলাকায়।
সরে জমিন অনুসন্ধানে জানা যায়, গেল মাসের প্রথম সপ্তাহে রাজারহাটের পুটিকাটা সুন্দর গ্রামের আব্দুল হামিদের কলেজ পড়ুয়া মেয়ে হান্না আক্তারের বিয়ে হয় একই গ্রামের প্রভাবশালী নুর ইসলামে ছেলে শামছুজ্জোহা মাসুদের সাথে। দুই বছরের প্রেমের সর্ম্পকের পরিনয় হিসেবে পারিবারিক মধ্যস্থতায় তাদের বিয়ে হয়। বৈবাহিক সর্ম্পকের পূর্ণ আস্থা স্থাপনে ছেলে পক্ষ মোহরানা নির্ধারণ করে প্রায় সাত লক্ষ টাকা। বিয়ের পর নবদম্পতি হান্না আক্তারের বাবার বাড়িতে অবস্থান করলেও পড়ে মাসুদ কৌশলে তার বাবার অসুস্থতার কথা বলে স্ত্রীকে ‍ নিয়ে ‍নিজ বাড়ীতে আসে।
তারপর সেখানে শুরু হয় নানা বাহনায় অমানুষিক ‍নির্যাতন।প্রথমে মাসুদ যৌতুক বাবদ ২০ লক্ষ টাকা দাবি করে শারীরিক ‍ নির্যাতন শুরু করলে ও পরে সেই নির্যাতনে যোগ দেয় মাসুদের বাবা,মা ও বোন। কিছু দিন মুখ বুঝে সহ্য করে হান্না।কিন্তু ক্রমাণ্বয়ে নেমে আসতে থাকে ‍নির্যাতনের খড়গ।
এর কয়েকদিন পর ডাক পিয়নের মাধ্যমে দুই দফা চিঠি আসে নববধু হান্নার নামে। জানতে পারেন সেটি তালাক নামা। পরে তা নিতে অপরগতা জানালে পিয়ন ফিরে যায় । তবে এতে প্রচন্ডভাবে ক্ষিপ্ত হয় তার শ্বশুর, শাশুড়ি, ননদসহ স্বামী মাসুদও।
এরই প্রেক্ষিতে গত ১লা আগস্ট থেকে হান্না্র উপর পরিবারের সকলে মিলে বেধরক মারধর ও মধ্যযোগীয় কায়দায় নির্যাতন চালায়। বের করে দেয়া হয় বাড়ী থেকে। উপায়ান্তর না পেয়ে বাড়ীর বাইরে অবস্থান ‍নিয়ে ৯৯৯ এ ফোন করে আইনি সহায়তা চান তিনি । পরে পুলিশ এসে তাকে পূণরায় শ্বশুর বাড়ীতে রেখে চলে গেলে যায়। পরে আবারো শুরু হয় নির্যাতন । এতে সঙ্গা হারিয়ে ফেলে হান্না আক্তার ।
পরে স্থানীয়দের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পেরে ছুটে আসেন সেখানকার নারীনেত্রী ও জনপ্রতিনিধি ফাতেমা বেগম। আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করে ৪আগস্ট ভর্তি করান রাজারহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে । বর্তমানে সে আশঙ্কামুক্ত হলেও শারীরিক ও মানুষিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত, স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে সময় লাগবে বলে জানিয়েন চিকিৎসকরা।
এ ঘটনার ব্যাপারে অভিযু্ক্ত শামছুজ্জোহা মাসুদ ও তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি ।
তবে হাসপাতালে চিকিৎসারত হান্না আক্তার বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানিয়েছে, শ্বশুর পরিবারের নির্যাতন থেকে মুক্তি ও স্বাভাবিক ভাবে সংসার করতে চান তিনি। এজন্য আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নির্যাতিতার পরিবার থেকে থানায় কোন অভিযোগ দায়ের হয়নি।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি মোহাফিজুর রহমান হৃদয়। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.