ডিবিএম প্রাক বাজেট সংলাপ: করমুক্ত আয় সীমা ৫ লক্ষ টাকা এবং সার, জ্বালানী ও ভোগ্য পন্যের ওপর ভ্যাট-শুল্ক কমানোর আহবান

 

ঢাকা প্রতিনিধি: ঢাকা, ১৫ এপ্রিল ২০২৩: ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট যাতে সাধারণ মানুষের ওপরে অতিরিক্ত কোন বোঝা এবং বৈষম্য বৃদ্ধি না করে সে লক্ষ্যে বর্তমান পরিস্থিতিতে করমুক্ত আয় সীমা ৫ লক্ষ টাকা এবং সার, জ্বালানী ও ভোগ্য পন্যের ওপর ভ্যাট-শুল্ক কমানোর আহবান জানিয়েছে ডেমোক্রাটিক বাজেট মুভমেন্ট – ডিবিএম। আজ ঢাকার মোহাম্মদপুরে আয়োজিত “মূল্যস্ফীতি, বৈষম্য ও অপচয় রোধে করণীয়” বিষয়ক এক সংলাপে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনটি এ আহ্বান জানান।
ডিবিএম এর সাধারণ সম্পাদক মনোয়ার মোস্তফা বর্তমান পরিস্থিতি উল্লেখ করে বলেন সাধারণ মানুষ স্বস্তিতে নেই। করোনা ও ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের অভিঘাত সামাল দিতে সাধারণ মানুষ ঘুরে দাড়ানোর চেষ্টা করছে, কিন্তু আয়ের তুলনায় ব্যয়ের বৃদ্ধি এত বেশি যে তারা স্বাভাবিক জীবন-যাপন চালিয়ে যেতে পারছে না। অন্যদিকে সরকার কর্তৃক গৃহীত প্রকল্পের অপচয় রোধ করতে না পারায় প্রায় সকল প্রকল্পের ব্যয় কয়েকগুন বেড়ে গেছে।এমন অবস্থাকে বিবেচনায় নিয়ে “অর্থনৈতিক জরুরি অবস্থা” ঘোষণা করে কৃচ্ছতা সাধনের বাজেট প্রণয়ন করার আহবান জানান তিনি।
গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণে জনগনের অংশগ্রহনের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে উল্লেখ করে সংগঠনটির সহ-সভাপ্রধান আমানুর রহমান বলেন- সরকার জনগনের কাছ থেকেই আয় করবে আবার সে আয় জনগনের কাছে যাতে যথাযথভাবে ফিরে আসে সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে। কিন্তু জনগন যদি বুঝতে পারে তার প্রদত্ত অর্থ যথাযথভাবে ব্যয় হচ্ছে না তাহলে তারা অর্থ প্রদান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে এটাই স্বাভাবিক।
খোন্দকার রেবেকা সানইয়াত, নগর দরিদ্রদের অধিকার নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করছেন। তিনি বলেন- সরকার নগর দারিদ্র দূর করার বিষয়ে খুব একটা আগ্রহী না। কিন্তু সরকার এটা বিবেচনা করেননা যে কেন মানুষ গ্রাম ছেড়ে শহরে আসে। মানুষ চায় একটা নিশ্চিত জীবন, যেখানেই এর সুয়োগ আছে মানুষ সেখানেই যাবে।
বাজেটে শ্রমজীবীর দাবীর বিষয়ে উল্লেখ করে ডিবিএম এর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সেকেন্দার আলী মিনা বলেন- সরকার সবার জন্য পেনশন ব্যবস্থা চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু এ ব্যবস্থায়  সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হলে বাজেটে এ বিষয়ে পর্যাপ্ত বরাদ্দ রাখতে হবে।
শ্রম, স্বাস্থ্য, কৃষি, শিক্ষা, জেন্ডারসহ বিভিন্ন থিমেটিক গ্রুপের নাগরিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা সংলাপে অংশ্রগহণ করে কর মুক্ত আয় সীমা ৫ লাখে উন্নীত করা, আগামি অর্থবছরের মধ্যে কর-জিডিপি’র অনুপাত বিদ্যমান ৯ শতাংশ থেকে ১০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ যা বৈষম্য দূরীকরণে ভূমিকা রাখবে, প্রাথমিক জ্বালানী আমদানিতে বিদ্যমান ভ্যাট-শুল্ক অর্ধেকে নামিয়ে এনে জ্বালানী-বিদ্যুতের দাম সমন্বয় করা, সারের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব বাতিল, বর্তমান বাস্তবতায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি কৃষককে আরো বীজ-সার-ডিজেল-বিদ্যুতে বর্ধিত সহায়তা প্রদান, অনাবাদি জমি না রেখে তাতে চাষ করার জন্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বিশেষ করে খাদ্য ও নগদ সহায়তার পরিমান (টাকা) দ্বিগুন ও পরিধি বাড়ানো, জরুরি অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নিত্য প্রয়োজনীয় (যেমন চাল, আটা, তেল, দুধ ইত্যাদি) দ্রব্যের ওপর থেকে সব ধরনের ভ্যাট, শুল্ক সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার, প্রাথমিকভাবে হত দরিদ্র পরিবার গুলির সঠিক তালিকা প্রস্তুত করে তাদেরকে রেশন কার্ডের আওতায় নিয়ে আসা, স্বাস্থ্যখাতে “আউট অব পকেট” ব্যয় বর্তমানের ৬৮ শতাংশ থেকে কমপক্ষে ৫০ শতাংশে নামিয়ে আনার সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও বরাদ্দ করার দাবীসহ সকল ধরণের অপ্রয়োজনীয় সরকারি ব্যয় (জাঁকজমক পূর্ণ অনুষ্ঠান, অপ্রয়োজনীয় বিদেশ যাত্রা ইত্যাদি) বন্ধ করার আহ্বান জানান।
ডিবিএম আয়োজিত এই সংলাপে সাংবাদিক সালাউদ্দিন লাভলু, পিএমএইচ এর আমানুর রসুল এবং বিলস এর ডিরেক্টর নাজমা ইয়াসমিনসহ জেলা পর্যায়ের প্রতিনিধি, পেশাজীবী, সাংবাদিক ও নাগরিক সংগঠনের প্রতিনিধিগণ অনলাইন ও অফলাইনে অংশগ্রহণ করেন। ডিবিএম বাজেট প্রক্রিয়ার সকল স্তরে জনগনের অংশগ্রহণ নিয়ে কাজ করে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর ঢাকা প্রতিনিধি নাজমুস শাহাদাত নাজিম। #

 

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.