ঠিকাদার চার বছরেও শেষ করতে পারেনি দিঘলিয়ার মডেল মসজিদের নির্মাণ কাজ

বিশেষ (খুলনা) প্রতিনিধি: দিঘলিয়া মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজে অবশেষে ষোলো কলা পূর্ণ করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার। মডেল মসজিদটির নির্মাণ কাজের ওয়ার্ক অর্ডার প্রাপ্তির পর থেকে বার বার নানা খোঁড়া অযুহাতে কাজের মেয়াদ বৃদ্ধি করার পরও চার বছর পার করেও কাজ শেষ করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার।
শেষ অবধি নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে কাজের সিডিউল চেঞ্জ করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়ে কাজ গুটিয়ে নিয়েছে বলে জানা গেছে। গত ৪ বছরে মসজিদটির ৩০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ফ্লোর ঢালাইসহ পিলারগুলোর আংশিক ঢালাই কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এক সময়ে কাজ শুরু হওয়া দেশের ২৫০টি মডেল মসজিদের নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে উদ্বোধন হয়েছে।
অথচ কার্যাদেশের ৪ বছর পরও দিঘলিয়ার বহুল আলোচিত ও প্রতিক্ষিত মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। কাজের এই হতাশাজনক অগ্রগতির জন্য উপজেলা প্রশাসন ও মসজিদটির মুসল্লিদের মাঝে চরম ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে দায়ী করা হচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। এমতাবস্থায় ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিল করে নতুন করে টেন্ডার আহবানের প্রক্রিয়া চলছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়।
এ প্রকল্পের আওতায় সারাদেশে ২৫০টি মডেল মসজিদের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়েছে, যেগুলো ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করেছেন। ষষ্ঠ ধাপের ৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধনের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। ২০১৯ সালের ১৬ জুন টিচবি-মামুন (জেভি) নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে দিঘলিয়া মডেল মসজিদ নির্মাণের জন্য কার্যাদেশ দেওয়া হয়। তারা নির্ধারিত সময়ে কাজটি শেষ করতে পারেনি। তাদের কার্যাদেশ বাতিল করে নতুন করে টেন্ডার আহবানের প্রস্তুতি চলছে।
ইতোমধ্যে পরিকল্পনা কমিশন থেকে এ সংক্রান্ত অনুমোদন পাওয়া গেছে এমনই তথ্য জানানো হয়েছে মসজিদ বাস্তবায়ন কর্তৃপক্ষে পক্ষ থেকে। খুলনা গণপূর্ত বিভাগ-১ থেকে আগামী দুই মাসের মধ্যে নতুন করে টেন্ডার আহবান করা হবে। ঠিকাদারের রেট বাড়ানোর আবেদন সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলেন, রেট বাড়ানোর কোন সুযোগ নেই। তারা ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বরাবর আবেদনও করেছে। তবে সূত্র থেকে জানা গেছে খুলনা গণপুর্ত অধিদপ্তরের আওতাধীন বড় বড় কাজগুলোতে রি সিডিউল হয় এমন খবর পেয়ে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার কাজে গাফিলতি করেছেন বড় ধরণের সুযোগের আশায়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার খান মাসুম বিল্লাহ এ প্রতিবেদককে বলেন, ইউএনও হিসেবে এ উপজেলায় যোগদানের পর আমি যতটুকু দেখেছি ঠিকাদারের গাফিলাতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও অপেশাদারিত্বের কারণে নির্মাণ কাজে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। তিনি বলেন, ঠিকাদার কাজ শেষ না করে কিভাবে সময় বাড়িয়ে আরো বর্ধিত বাজেটের মাধ্যমে রি-সিডিউলের মাধ্যমে কাজ করা যায় সে চেষ্টা করেছেন। গত ৫ মাসে ৫ শতাংশও কাজ হয়নি। নির্মাণ সামগ্রী দাম বেড়েছে। কাজ শুরু করতে দেরি হয়েছে এগুলো অজুহাত মাত্র।
এক সূত্র থেকে জানা গেছে, এ কাজের পিছনে থেকে কাজ করছেন রাজনৈতিক ছত্রচ্ছায়ায় জনৈক প্রভাবশালী মহল। আর তারাই কাজে গড়িমশি করে মসজিদটির নির্মাণ কাজে বিলম্বিত করার এ লাইন বার বার বাতলিয়ে চলেছেন জনৈক ক্ষমতাসীন ব্যক্তি বলে জানা গেছে।
মডেল মসজিদের নির্মাণ কাজের বাস্তবায়নকারী সংস্থা খুলনা গণপূর্ত বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী অমিত কুমার বিশ্বাস এ প্রতিবেদককে বলেন, কাজের গুণগতমান বজায় রেখে আমরা ঠিকাদারকে বারবার তাগিদ দিয়েছি কাজটি দ্রুততার সাথে সম্পন্ন করার জন্য। কিন্তু ঠিকাদার কাজটি যথা সময়ে সম্পন্ন করতে পারেনি। যার কারণে বর্তমান ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিল করে নতুন করে টেন্ডার আহবানের সিদ্ধান্ত হয়েছে । খুব দ্রুতই টেন্ডার আহবান করা হবে। আশা করি নতুন টেন্ডারের পর দ্রুত গতিতে কাজটি সম্পন্ন হবে।
মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজের ঠিকাদার মোঃ মনিরুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, জমি অধিগ্রহণে জটিলতার কারণে কার্যাদেশ পাওয়ার তিন বছর পর আমাদের কাজ শুরু করতে হয়েছে। সর্বশেষ নিজেদের টাকা দিয়ে জমি কিনে কাজ শুরু করেছি। ইতোমধ্যে আমরা পাইল ভরাট করে ফ্লোর এবং কলম ঢালাইয়ের কাজ সম্পন্ন করেছি।
তিনি বলেন, নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য অতিরিক্ত বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে আমরা অনেক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি। কাজের রেট বাড়ানোর জন্য ইতিমধ্যে আমরা আবেদন করেছি।
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ধর্ম মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় ১টি করে ৫৬৪ টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। প্রকল্পের আওতায় খুলনার দিঘলিয়া উপজেলা সদরে ৩১ শতক জায়গার উপর সোয়া ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি মডেল মসজিদ কমপ্লেক্স নির্মাণের স্থান নির্ধারণ করা হয়। ২০১৯ সালের ১৬ জুন খুলনা গণপূর্ত বিভাগ -১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী টিচবি-মামুন (জেভি) নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ প্রদান করে। কাজের মেয়াদ উল্লেখ করা হয় ১৮ মাস। অর্থাৎ কার্যাদেশ অনুযায়ী ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা।
সারাদেশে এ, বি, সি এই তিনটি ক্যাটাগরিতে এ সকল মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে। খুলনার চারটি উপজেলাতে মডেল মসজিদ নির্মিত হচ্ছে বি ক্যাটাগরিতে। বি ক্যাটাগরির মসজিদগুলোর আয়তন ১ হাজার ৬৮০ দশমিক ১৪০ বর্গমিটার হবে।
মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে নারী ও পুরুষদের পৃথক ওজু ও নামাজ আদায়ের সুবিধা থাকবে। সঙ্গে থাকবে লাইব্রেরী গবেষণা ও দীনি দাওয়াত কার্যক্রম, পবিত্র কুরআন, হেফজ, শিশুশিক্ষা অতিথিশালা, বিদেশি পর্যটকদের আবাসন, মৃতদেহ গোসলের ব্যবস্থা। থাকবে হজ্ব যাত্রীদের নিবন্ধন ও প্রশিক্ষণ, ইমাম প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। এছাড়া ইমাম-মুয়াজ্জিনদের আবাসনসহ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য থাকবে অফিসের ব্যবস্থা।
জেলা সদর ও সিটি করপোরেশন এলাকায় নির্মাণাধীন মসজিদগুলোতে একসঙ্গে ১ হাজার ২০০ মানুষ নামাজ পড়তে পারবেন। উপজেলা ও উপকূলীয় এলাকার মডেল মসজিদগুলোতে একসঙ্গে ৯০০ মানুষের নামাজের ব্যবস্থা থাকছে।
অতিব আকর্ষণীয় ও নান্দনিক নির্মাণশৈলীতে নির্মিত এসব মডেল মসজিদে একটি করে মিনার রয়েছে।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর বিশেষ (খুলনা) প্রতিনিধি সৈয়দ আবুল কাসেম। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.