ঠাকুরগাঁওয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ৩ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেপ্তার-১

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের অনিয়ম ও দূর্নীতি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় তিন জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মিথ্যা আইসিটি মামলা করেছে আধুনিক সদর হাসপাতালের পরিচালক ডা: নাদিরুল আজিজ (চপল)।
গত শুক্রবার (০৯ জুলাই) দুপুরে ঠাকুরগাঁও সদর থানায় সত্য সংবাদের মিথ্যা ব্যাখা দিয়ে তিন সাংবাদিককে আসামি করে আইসিটি আইনে একটি মামলা দায়ের করে।
মামলা সূত্রে আসামী সাংবাদিকরা হলেন, ১- তানভির হাসান তানু, ইন্ডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশন ও জাগো নিউজ অনলাইন পোর্টালের ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি, ২- রহিম শুভ, নিউজ বাংলা২৪ ডট কম অনলাইন পোর্টালের ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি, ৩- আব্দুল লতিফ লিটু, বাংলাদেশ প্রতিদিন ও নিউজ২৪ চ্যানেল এর ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি।
গতকাল শনিবার রাতে তানভীর হাসান তানুকে আটক করে ঠাকুরগাঁও থানা পুলিশ। সাথে সাথেই এই আটকের ও মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে ঠাকুরগাঁও প্রেসক্লাবের ও জেলার সকল সাংবাদিকবৃন্দ। পরে প্রেসক্লাব চত্বরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে ঠাকুরগাঁও জেলার সকল সাংবাদিকরা।
উল্লেখ্য, গত ৬ ও ৭ই জুলাই জাগো নিউজ পোর্টাল, বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকা সহ বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টালে “ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে করোনা রোগীকে ৩০০ টাকার পরিবর্তে ৭০/৮০ টাকার খাবার দেওয়া হয়” এই মর্মে একটি সত্য সংবাদ প্রকাশ হয়। এই সংবাদ প্রচারের পরেই হাসপাতাল কতৃপক্ষ নড়েচরে বসে এবং তারপরেই এই সংবাদের বিপক্ষেই হাসপাতালের পরিচালক সদর থানায় আইসিটি আইনে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা হওয়ার একদিন পরেই জাগো নিউজের ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি তানভির হাসান তানুকে আটক করা হয়।
মামলার বরাতে ওসি তানভিরুল ইসলাম বলেন, গত ৫ জুলাই ও ৬ জুলাই ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডের খাবার নিয়ে জাগো নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম, নিউজবাংলা টোয়েন্টিফোর ডটকম ও বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে সংবাদ প্রকাশ করে সাংবাদিক তানভির হাসান তানু, রহিম শুভ ও আব্দুল লতিফ লিটু।
সংবাদটি ‘মিথ্যা, ভিত্তিহীন, বানোয়াট জনরোষ সৃষ্টিকারী মানহানিকর দাবি করে ৯ জুলাই হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডাঃ নাদিরুল আজিজ বাদি হয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সাংবাদিক তানভির হাসান তানু, রহিম শুভ ও আব্দুল লতিফ লিটুর নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। পরে সাংবাদিক তানভির হাসান তানুকে জেল হাঁজতে প্রেরণ করা হয়।
এদিকে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ডিজিটার নিরাপত্তা আইনে মামলা ও সাংবাদিক তানভির হাসান তানুকে গ্রেপ্তার করায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ঠাকুরগাঁও প্রেসক্লাব, ঠাকুরগাঁও রিপোটার্স ইউনিটি, ঠাকুরগাঁও টেলিভিশন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন, ঠাকুরগাঁও অনলাইন জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনসহ ঠাকুরগাঁওয়ের সর্বস্তরের সাংবাদিক মহল।
ঠাকুরগাঁও প্রেসক্লাবের সভাপতি মনসুর আলী বিটিসি নিউজকে বলেন, করোনা মহামারি মোকাবেলায় অপ্রতুল পদক্ষেপের কথাগুলো যখন সাংবাদিকরা তুলে ধরছে এবং পুনর্গঠনের পথ খুঁজে পেতে আলোচনার সুযোগ করে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এ সময় গণমাধ্যমের ওপর আঘাত আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনাকেই বিপন্ন করবে।
তিনি বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ে তিন সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনে মামলার পর এক সাংবাদিককে গ্রেপ্তারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সেই সাথে মামলা প্রত্যাহার ও তানুর নিঃশর্ত মুক্তির দাবি করছি।
ঠাকুরগাঁও রিপোটার্স ইউনিটির সভাপতি এমদাদুল ইসলাম ভুট্টু বিটিসি নিউজকে বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে স্বাধীন সাংবাদিকতাকে বাকরুদ্ধ করতে চায় একটি গোষ্ঠী। তাই প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে ও ব্যক্তিস্বার্থে যাঁরা এ আইনের চরম অপব্যবহার করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।
সাংবাদিক তানভির হাসান তানুর নিঃশর্ত মুক্তি ও সকল সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা প্রত্যাহার না করলে কঠোর আন্দোলন করা হবে বলে জানান সাংবাদিক নেতারা।
সংবাদ প্রেরক ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি আব্দুল লতিফ লিটু। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.