জার্মানিতে আতঙ্কে সিরীয় শরণার্থীরা

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্কজার্মানিতে নির্বাচনের পাঁচ সপ্তাহ বাকি। এবারের নির্বাচনে আঙ্গেলা মেরকেলের একজন উত্তরসূরি বেছে নেবে জার্মানরা। এই নির্বাচনের দিকে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখছে দেশটিতে আশ্রয় নেওয়া লাখ লাখ সিরীয় শরণার্থী। অনেক শরণার্থী নাগরিকত্ব পাওয়ার অপেক্ষায়। তারা আশঙ্কা করছে স্বপ্ন ভঙ্গের। কারণ আফগানিস্তান থেকে নতুন করে শরণার্থী আসা শুরু হয়েছে।
জার্মানিতে ২৬ সেপ্টেম্বর সাধারণ নির্বাচন। এর মধ্য দিয়ে মেরকেল জমানার অবসান ঘটতে যাচ্ছে। মেরকেল ১৬ বছর ক্ষমতায়। পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে সাধারণত টানা এতদিন কেউ দেশ শাসন করেন না। জনমত জরিপগুলোতে মধ্য বামপন্থিরা এগিয়ে আছে। তবে বিশ্লেষকদের মত হলো যিনিই ক্ষমতায় আসুন তাকে কোয়ালিশন করতে হবে।
কট্টর ডানপন্থি অলটারনেটিভ ফর জার্মানি (এএফডি) দলের অনেক নেতা আফগান শরণার্থীদের বিষয়ে ভোটারদের সতর্ক করে দিয়েছেন। তারা বলছেন বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে ২০১৫ সালের শরণার্থী সংকটের পুনরাবৃত্তি ঘটবে। মেরকেল তখন মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা শরণার্থীদের জন্য দুয়ার খুলে দেন। এভাবে জার্মানি হয়ে ওঠে প্রায় ১০ লাখ শরণার্থীর (সিরিয়াসহ অন্য দেশের) আবাসস্থল।
তালেবানের হাতে কাবুলের পতন ঘটার পর লোকজনের দেশ ছাড়ার হিড়িক পরে। কারণ তারা আশঙ্কা করছে সেখানে শরিয়া আইন আবার চালু করবে। এছাড়া অনেক সুযোগসন্ধানীও এই সুযোগে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছে। কাবুলের হামিদ কারজাই বিমানবন্দরে যেভাবে বিদেশগামী মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ে তা পশ্চিমা দেশগুলোতে আশ্রয় নেওয়া অভিবাসীদের ভাবিয়ে তুলেছে কারণ প্রতিবেশী ইরান ও পাকিস্তানে এরই মধ্যে ৫০ লাখের ওপর শরণার্থী বাস করছে। ঐ দেশগুলোর নতুন শরণার্থী নেওয়ার মতো অবস্থায় নেই।
জার্মানি যথারীতি আফগান শরণার্থীদের আশ্রয় দিতে শুরু করেছে। দুই তৃতীয়াংশ জার্মান আশঙ্কা করে যে পরিস্থিতি ২০১৫ সালের মতো হতে পারে। বর্তমানে দেশটিতে প্রায় ৮ লাখ সিরীয় শরণার্থী আছে। এদেরই একজন হলেন আনাস মোদামানি (২৪)। তার নাগরিকত্বের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। তিনি আশঙ্কা করছেন প্রক্রিয়াটি আটকে যেতে পারে। সব ঠিক থাকলে আগামী বছরই তার নাগরিকত্ব পেয়ে যাওয়ার কথা। তার মতো অনেক শরণার্থীই আশঙ্কা করছেন আসন্ন কোয়ালিশন সরকার অভিবাসী বিরোধী আইন করবে। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে মেরকেল কজন শরণার্থীর সঙ্গে সেলফি তুলেছিলেন।
বার্লিনের একটি শরণার্থী আশ্রয়কেন্দ্রে তোলা ঐ ছবিতে অন্যদের সঙ্গে মোদামানিও ছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমি জানি না নতুন সরকার মেরকেলের গৃহীত অভিবাসন নীতি বহাল রাখবে কি না। উগ্র ডানপন্থিরা ঐ নীতি স্থগিত রাখার জন্য দাবি করেছে। তারা আশা করছে এর ফলে আশ্রয়ের জন্য আবেদনের সংখ্যা কমবে। মোদামানি মনে করেন না যে বেশির ভাগ ভোটার উগ্র ডানপন্থি এএফডি পার্টিকে ভোট দেবে। তবে তারা গত নির্বাচনের চেয়ে সামান্য হলেও বেশি ভোট পাবে। জনমত সমীক্ষা অনুসারে এএফডি এবার ১০ শতাংশ বা তার চেয়ে সামান্য বেশি কিছু ভোট পেতে পারে।
শরণার্থীদের নিয়ে কাজ করা দাতব্য সংস্থা প্রো আসিলের পরিচালক কার্ল কোপও মনে করেন আফগানিস্তানের সর্বশেষ পরিস্থিতি নতুন সরকারের অভিবাসন নীতির ওপর প্রভাব ফেলবে। এটি যে শুধু সিরীয় শরণার্থীদের কেন্দ্র করে ঘটবে তা নয় সব দেশ থেকে আসা শরণার্থীকেই এর জন্য চাপে পড়তে হবে। যেমন বর্তমান নীতি অনুযায়ী একজন শরণার্থী নিজ দেশ থেকে পরিবারের বাকি সদস্যদেরও নিয়ে আসতে পারে। কিন্তু নতুন সরকার আসার পর সম্ভবত এই সুযোগ আর থাকবে না। তিনি বলছেন নির্বাচন এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের মনে ২০১৫ সালের স্মৃতি জেগে উঠবে। দেশটিতে অবস্থানরত বেশির ভাগ সিরীয় শরণার্থী এখনো নাগরিকত্ব পায়নি। তবে তারা আশা করছে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই তারা রেসিডেন্স স্ট্যাটাস পাবে।
জার্মানিতে অবস্থানরত সিরীয় শরণার্থীদের উদ্বেগ যে আফগানিস্তানের সর্ব সাম্প্রতিক ঘটনার জন্য হয়েছে তা নয় প্রতিবেশী ডেনমার্কও একটি কারণ। ডেনমার্কে প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেনের মধ্য বামপন্থি সরকার ধারণা করছে সিরিয়ার অবস্থা এখন তুলনামূলক স্থিতিশীল। এই বিবেচনায় কিছু শরণার্থী এখন নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিষয়টি মেরকেল পরবর্তী জার্মান সরকারের নীতিনির্ধারণের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.