চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ‘নিখোঁজ’, বাড়ছে জল্পনা-কল্পনা

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: হঠাৎ করেই লোকচক্ষুর আড়ালে চলে গেছেন চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গ্যাং। ৫৭ বছর বয়সী এ নেতাকে প্রায় ২৩ দিন ধরে জনসমক্ষে দেখা যাচ্ছে না। তার আকস্মিক এ অন্তর্ধান নিয়ে অনলাইনে নানা ধরনের জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে।
গত ডিসেম্বরে মন্ত্রী মনোনীত হওয়ার সময় কিন গ্যাংকে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে মনে করা হচ্ছিল।
গত সপ্তাহে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, স্বাস্থ্যগত কারণে ইন্দোনেশিয়ায় কূটনীতিকদের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারবেন না পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গ্যাং। কিন্তু পরে মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট থেকে এ লাইনটুকু সরিয়ে ফেলা হয়। তার পরিবর্তে পূর্বসূরি চীনা কমিউনিস্ট পার্টির ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিশনের পরিচালক ওয়াং ই সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন।
এমনকি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ফরেন পলিসি বিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেলের বৈঠকও পেছানো হয়েছে। তবে এজন্যও কোনো কারণ ব্যাখ্যা করা হয়নি।
গত সোমবার (১৭ জুলাই) প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতের্তের মধ্যকার বৈঠকেও ছিলেন না চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তবে সংবাদমাধ্যমের ফুটেজে ওয়াং ইসহ মন্ত্রণালয়ের অন্য কর্মকর্তাদের সেই সভায় দেখা গেছে।
চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে দীর্ঘদিন জনসমক্ষে দেখা না যাওয়া নিয়ে অনলাইনে নানা ধরনের জল্পনা-কল্পনা দেখা যাচ্ছে। এটা চীনের সিক্রেসি বা গোপনীয়তাকে আবারও সামনে নিয়ে আসছে।
চীনা সার্চ ইঞ্জিন বাইডুতে গত সাত দিনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্পর্কে তথ্য খোঁজ করা ব্যাপক বেড়ে গেছে। ‘কিন গ্যাং’ সার্চ করা এক সপ্তাহে বেড়েছে পাঁচ হাজার শতাংশ। এমনকি চীনের জনপ্রিয় তারকাদের চেয়েও তার নাম বেশি সার্চ করা হচ্ছে।
অনলাইনে যেসব তত্ত্ব প্রচার হচ্ছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে কিন গ্যাংকে বিয়েবহির্ভূত সম্পর্কের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে এ বিষয়েও কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র।
একজন শক্তিশালী কূটনীতিক হিসেবে পরিচিত হলেও কিন গ্যাং চীনের ‘নেকড়ে যোদ্ধা’ কূটনীতি থেকে কিছুটা দূরত্ব রেখে চলছিলেন। তিনি দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সী পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
দুই বছর যুক্তরাষ্ট্রে চীনা রাষ্ট্রদূত হিসেবে কাজ করার পর ২০২২ সালের ডিসেম্বরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে তার নাম ঘোষণা করা হয়। এর আগে কিন গ্যাং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ও প্রেসিডেন্ট শির বিদেশ সফরগুলোর কাজে সহায়তা করতেন। এটিই তাকে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে তোলার সুযোগ করে দেয়।
কিন গ্যাং এ মুহূর্তে কোনো সমস্যায় রয়েছেন, নাকি আবার জনসমক্ষে ফিরবেন, তা এ মুহূর্তে বলা মুশকিল বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
চীনে কোনো ধরনের ব্যাখ্যা ছাড়াই উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিদের হুটহাট নিখোঁজ হয়ে যাওয়া নতুন কিছু নয়। অনেক সময় দেখা যায়, অপরাধ তদন্তের আওতায় থাকায় হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যান। আবার অনেক সময় তারা অন্তর্ধানে যান এবং পরে ফিরে আসেন জনসমক্ষে। কিন্তু দৃশ্যপটের বাইরে থাকার কারণ সম্পর্কে তারা কিছু বলেন না।
প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং নিজেও ২০১২ সালে চীনের নেতা হওয়ার আগে প্রায় দুসপ্তাহ জনসমক্ষে আসেননি। তখন তার স্বাস্থ্য ও চীনা কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্বের বিষয় আলোচনায় এসেছিল। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.