চীনের ইতিহাস পুনরায় লিখলেন প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং!

বিটিসি আন্তর্জাতিক ডেস্ক: চীনা কমিউনিস্ট পার্টি (সিসিপি) গত সপ্তাহে এক ‘ঐতিহাসিক প্রস্তাব’ পাস করেছে। দলটির ১০০ বছরের ইতিহাসের একটি সারসংক্ষেপে তাদের মূল অর্জন এবং ভবিষ্যতের দিক-নির্দেশনার বিষয়গুলো তুলে আনা হয়েছে। সিসিপি প্রতিষ্ঠার পর এ নিয়ে তৃতীয়বারের মতো কোন প্রস্তাব পাস হল।
এর আগে ১৯৪৫ সালে মাও জেদং এবং ১৯৮১ সালে দেং জিয়াওপিং পাস করেছিলেন। নতুন এই প্রস্তাব দেশটির রাজনৈতিক ইতিহাসে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মর্যাদাকে পাকাপোক্ত করেছে।
শি জিনপিংকে পার্টির প্রতিষ্ঠাতা মাও এবং তার উত্তরসূরি দেং-এর সমান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। যারা শুধু চীনে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব আনেননি বরং সমাজতন্ত্রকে নতুন রূপ দিয়েছেন।
মাও যদি চীনের প্রতিষ্ঠাতা হন, তাহলে দেং দেশটিতে আর্থিকভাবে উন্নত করেছেন। আর শি জিনপিং একটি সমৃদ্ধ সমাজ গঠনের পাশাপাশি বিশ্বে চীনের প্রভাব প্রতিষ্ঠা করেছে।
দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত সপ্তাহে শি জিনপিং নিজেকে পূর্ণ ‘মাক্স’ দিয়েছেন। এখন থেকে শিং জিনপিংয়ের চিন্তার ধরন ‘২১ শতকের মাক্সবাদ’ হিসেবে বিবেচিত হবে। একইসঙ্গে তার চিন্তা-ধারা চীনের সংস্কৃতি ও চীনা স্পিরিটের ভিত্তি হিসেবেও কাজ করবে।
চীনা গণমাধ্যম চায়না নিকানের সম্পাদক অ্যাডাম নি একটি নিউজলেটারে মন্তব্য করেছেন যে, শি জিনপিং চীনের জাতীয় ইতিহাসের মহাকাব্যে নিজেকে নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছেন।
এই ঐতিহাসিক প্রস্তাবের মাধ্যমে শি জিনপিং নিজেকে পার্টি এবং আধুনিক চীনের মহান আখ্যানের কেন্দ্রে রাখতে চান, এভাবেই তিনি তার ক্ষমতা প্রদর্শন করছেন। এই রেজোলিউশন তার ক্ষমতা ধরে রাখার একটি হাতিয়ারও।
সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ড. চং জা ইয়ান বিবিসি’কে বলেন, সাম্প্রতিক পদক্ষেপটি শি জিনপিংকে অন্যান্য পূর্ববর্তী চীনা নেতাদের থেকে আলাদা করেছে। হু জিনতাও এবং জিয়াং জেমিনের মতো সাবেক  নেতাদের কারোই শি’র মতো এমন দৃঢ় কর্তৃত্ব ছিল না।
মাও জেদং এবং দেং জিয়াওপিং যারা পূর্ববর্তী রেজুলেশনগুলো পাস করেছিল, তারা এটিকে অতীতের নিয়ম ভাঙার উপায় হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন। ১৯৪৫ সালে একটি পার্টির পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে গৃহীত প্রথম প্রস্তাবটি মাও’কে তার নেতৃত্ব সুসংহত করতে সাহায্য করেছিল, যাতে তিনি ১৯৪৯ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন গঠনের ঘোষণা দেওয়ার সময় তার সম্পূর্ণ কর্তৃত্ব লাভ করেন।
১৯৭৮ সালে দেং জিয়াওপিং যখন নেতা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন তিনি ১৯৮১ সালে দ্বিতীয় রেজোলিউশন শুরু করেন। সেখানে তিনি ১৯৬৬ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময় মাও’য়ের ত্রুটিপূর্ণ সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছিলেন, যার ফলে লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। দেং চীনের অর্থনৈতিক সংস্কারের ভিত্তিও স্থাপন করেছিলেন। পূর্ববর্তী রেজোলিউশনের পরিবর্তে শি জিনপিং এবার তার রেজোলিউশনে ধারাবাহিকতার উপর বেশি জোর দিয়েছেন।
সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ড. চং বলেন, শি’র প্রস্তাব এমন এক সময়ে এসেছে যখন চীন একটি বিশ্বশক্তিতে পরিণত হয়েছে- যা কয়েক দশক আগে ভাবাও যায়নি। দেশটি এমন এক পর্যায়ে দাঁড়িয়েছে যেখানে এটি এখন তার অর্থনীতি, সামরিক ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন করেছে এবং বিশ্বের অন্যতম প্রধান শক্তি হিসেবে তার মর্যাদাকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এর সঙ্গে সিসিপি এবং এর নেতৃত্ব অভ্যন্তরীণভাবে কোন বিরোধিতা ছাড়াই গভীরভাবে আবদ্ধ। শি’র নেতৃত্বে থাকা সিসিপি পার্টি চীনকে কৃতিত্বের শীর্ষে পৌঁছে দিয়েছে।
গত সপ্তাহে চার দিনের রুদ্ধদ্বার অধিবেশনে দলের ১৯তম কেন্দ্রীয় কমিটির ৩৭০ জনেরও বেশি পূর্ণ ও বিকল্প সদস্য জড়ো হয়েছিলেন, যারা দেশটির শীর্ষ নেতৃত্বে আছেন। আগামী বছর পার্টির জাতীয় কংগ্রেসের আগে এটি ছিল দলের নেতাদের সবচেয়ে বড় ও সর্বশেষ বৈঠক।
আগামী বছরের অক্টোবরে জাতীয় কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হতে পারে। সেখানে শি প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঐতিহাসিকভাবে তৃতীয় মেয়াদে থাকতে চাইবেন বলে আশা করা হচ্ছে। কারণ ২০১৮ সালে দেশটিতে একজন প্রেসিডেন্টের সর্বোচ্চ দুই মেয়াদে থাকার নীতি বাতিল হয়।
ধারণা করা হচ্ছে, শি শুধু তৃতীয় মেয়াদ নয়, সম্ভবত এরপরও ক্ষমতায় থাকতে চাইবেন। শি জিনপিং চীনের ইতিহাস নতুন করে লিখেছেন! তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পথও সুগম করেছেন। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এরপরও যে কোন সময় যে কোন কিছু ঘটতে পারে। অ্যাডাম নি’র মতে, চীনের অভিজাত রাজনীতি অনেকটাই অন্ধকারাচ্ছন্ন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.