চাকুরীর প্রতিশ্রুতিতে ১৯ লক্ষ টাকার অবৈধ নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে

রংপুর প্রতিনিধি: রংপুর মিঠাপুকুরে বড় হয়রতপুরে বেগম রোকেয়া টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড বি.এম. কলেজের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অবৈধ চাকুরী দেয়ার নামে ১২ লাখ টাকা গ্রহণ করায় লিগ্যাল নোটিশ ও ৭ লক্ষ টাকা নগদ গ্রহণের অভিযোগ করেছ দুই চাকুরী প্রত্যাশী।

গত ১৮ই ফেব্রুয়ারী২০২০ রংপুর জজ কোর্টের আইনজীবী এস.এম রুহুল ইসলাম রাজীবের মাধ্যমে ফাতেমা আক্তার লতা – এ নোটিশ পাঠান।

লিগেল নোটিশ সূত্রে জানা যায়- বেগম রোকেয়া টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড বি.এম. কলেজ এর ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায়   অধ্যক্ষ উক্ত প্রতিষ্ঠানে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার পদে নিয়োগ প্রদানের নিমিত্তে প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের জন্য বিগত ৩০/১২/১৬ ইং তারিখে ৩,৫০,০০০/-(তিন লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকা গ্রহণ করেন। উক্ত প্রতিষ্ঠান নিয়োগ প্রদানে ব্যর্থ হলে গ্রহণকৃত টাকা ২/৩/১৮ইং তারিখে ফেরত প্রদান করবেন এই মর্মে ২/২/১৮ তারিখে ১০০/- টাকা ও ৫০/- টাকা-২২৪৮০৪৫,২২৪৮০৪৬,৫১২৯৬০৬ ও ৫১২৯৬০৭ নাম্বার স্টাম্পে  স্বাক্ষর করেন।

নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে টাকা দিতে ব্যর্থ হলে তখন চাকুরি নিশ্চিত হবে বলে শতভাগ আশ্বাস দিয়ে পুনরায় আরোও ৩,৫০,০০০/-(তিন লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকা গ্রহণ করেন। কিন্তু চাকুরিতে নিয়োগ সম্পূর্ণ না হওয়ায় ১৫/১২/১৮ ইং তারিখের মধ্যে পরিশোধ করবেন বিধায় ১০/৭/১৮ ইং তারিখে ৩০০/- টাকার-২৯৪০২৩৪,২৯৪০২৩৫,২২৪৮৩৩৪ নাম্বার দলিলে স্বাক্ষর করেন। এছাড়া অঙ্গীকারবদ্ধ ৫,০০,০০০/-(পাঁচ লক্ষ)টাকা ৪৩১০৩১৫,৪৩১০৩১৬ ও ৪৩১০৩১৭ নাম্বার দলিলে ২৫/৫/১৯ ইং তারিখে পরিশোধ করতে চাইলে ব্যর্থ হন। অঙ্গীকারনামা এর সময়সীমা অতিক্রান্ত হলেও তিনি টাকা প্রদানে ব্যর্থ হন এবং কাল ক্ষেপন করেন। গেল ৫/১/২০ ইং তারিখ সকালে টাকা চাহিলে নানান টালবাহনা,খারাপ-আচরণ ও হুমকি প্রদান করেন একপর্যায়ে তিনি গ্রহণকৃত টাকা প্রদানে অস্বীকার করেন।

একইভাবে বড় হযরতপুর ইউনিয়নের আতোয়ার রহমান নামে আরেক জনকে কম্পিউটার ও ল্যাবশপ সহকারী পদে নিয়োগে আশস্ত করিয়া ৭ লাখ টাকা গ্রহণ করেন।চাকুরী প্রদানে টালবাহানা করলে  নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে ১০০ শত টাকার তিনটি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষরিত করেন। যাহার স্ট্যাম্প নাম্বার-২৯০৮৩৩৩,২৯০৮৩৩০ ও ২৯০৮৩৩৪। এই পদে চাকুরী দিতে ব্যর্থ হন।

অন্যদিকে একইভাবে উপরিউক্ত প্রতারণার ফাঁদ পেতে বড় হযরতপুরের খামারতৈয়বপুর গ্রামের রোমেল মিয়ার স্ত্রী ফাতেমার আক্তার লতার (ভুক্তভোগী) সঙ্গে, সরেজমিনে কথা বলে জানা যায়, শতভাগ নিশ্চিত চাকুরীর কথা বলে কয়েক দফায়  বিভিন্নভাবে আবারও নগত লক্ষাধিক টাকা গ্রহণ করে, কোনো চাকুরি প্রতারণার মাধ্যমে কবে কখন কিভাবে নগদ অর্থ অধ্যক্ষকে দেওয়া হয়েছে, তার সম্পূর্ণ ডকুমেন্ট  তারিখ সহ আমার গুরুত্বপূর্ণ ফাইল রয়েছে।

এখন চাকুরি দিতে পারছেন না বরং নানান টালবাহনা শুরু করছেন। এতো টাকা নগত প্রদান করেও চাকুরী না পাওয়ায়, বর্তমানে আমার পরিবারে অশান্তি বিরাজ করছে সঙ্গে কর্মবিমুখ হয়ে বেকারত্বের দ্বারপ্রান্তে এসে ভবিষ্যৎ অন্ধকার দেখছি।

লতার স্বামী রোমেল মিয়া বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, অধ্যক্ষ জাহিদুল ইসলাম এবং ল্যাব এসিস্ট্যান্ট শংকর আমার কাছে এসে কাগজপাতি দেখিয়ে বলেন, সরকারি বিধি অনুযায়ী অফিস সহকারি কাম কম্পিউটার পদে আমাদের প্রতিষ্ঠানে লোক নেওয়া হবে। যোগ্যতানুযায়ী আপনার স্ত্রী যোগ্য সুতরাং প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের স্বার্থে কিছু টাকা খরচ করলে নিয়োগ দেওয়া যাবে।সেই অনুযায়ী আমি দফায় দফায় তাকে টাকা প্রদান করি যাহা ১০০/- ও ৫০/- টাকার ১০ টি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষরিত আছে।তিনি এখন বলছেন ঐ পোষ্টের জন্য নিয়োগ বাতিল হয়েছে তাই আয়া পোষ্টে তাকে নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে।

অবৈধ নিয়োগ বাণিজ্যের প্রতারণার ফাঁদে পরে অবশেষে অধ্যক্ষের কাছে পাওনা টাকা সম্পূর্ণ নগদে ফেরত চাইলে অধ্যক্ষ চড়াও হয়ে ওঠে এবং ঘটনাস্থলে উত্তেজনা বিরাজ করে।

চাকুরী প্রত্যাশী আতোয়ার রহমান বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন,আমার চাকুরী নিশ্চিত বলে ঢাকায় আমি চাকুরী ছেড়ে চলে আসি।অধ্যক্ষ জাহিদুল এর কথায় গত দুই বছর ধরে চাকুরীর আশায় বেকার হয়ে বাড়িতে আছি। এখন আমার চাকুরীর বয়সও শেষ অধ্যক্ষের কাছে টাকা চাইলে কাল ক্ষেপণ ও বিভিন্ন প্রভাবশালী মহল ও ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের দিয়ে আপোষ মিমাংসার জন্য ভয়-ভীতি হুমকি দিয়েই চলেছে। এমতাবস্তায় আমরা নিজেদের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি বিভিন্ন মহলে অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার পাচ্ছিনা।

সরেজমিনে, প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ জাহিদুল ইসলামের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে- তিনি লিগ্যাল নোটিশ পেয়েছেন বলে বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান। তবে ১২ লক্ষ টাকা গ্রহণের বিষয়টি তিনি সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন।

তিনি বলেন,রোমেলের কাছ থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা হাওলাদ নিয়েছি এবং তাকে চার লক্ষ ত্রিশ হাজার টাকা দিয়েছি।আতোয়ার এর কাছে এক লাখ এগারো হাজার টাকা ধার স্বরুপ নিয়েছি। নিজ হস্তে দলিলে স্বাক্ষরিত বিষয়টি জানালে এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করেন নি। তিনি বলেন অফিস সহকারি কাম কম্পিউটার পদে নিয়োগের বিষয়টি বাতিল হয়েছে।

আজ সোমবার সকালে এ বিষয়ে রংপুর জেলার শিক্ষা কর্মকর্তা মোসাম্মৎ রোকসানা ইয়াসমিন এর  অফিসে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি।

তবে,মিঠাপুকুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে বলেন, দুজন প্রার্থীর লিখিত অভিযোগ পেয়েছ। ইউএনওকে অবগত করা হয়েছে তিনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

অন্যদিকে, উক্ত প্রতিষ্ঠানের সভাপতি মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা মামুন ভুঁইয়া বিটিসি নিউজ এর প্রতিবেদককে জানান, রোমেল ও আতোয়ার নামে দুজনের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এব্যাপারে দ্রুত তদন্ত কমিটি গঠন করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।

সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর রংপুর প্রতিনিধি এস এম রাফাত হোসেন বাঁধন। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.