চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় বিশেষ লকডাউন বাড়লো আরও ৭দিন \ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহবান

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি: করোনা সংক্রমন বৃদ্ধি প্রতিরোধে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ৭ দিনের কঠোর লকডাউনের আজ ৭ম দিন চলছে। তবে কয়েকদিনের লকডাউন জেলার মানুষ মেনে চলায় জেলায় সংক্রমনের হার নি¤œমুখী হলেও সহনীয় পর্যায়ে বা সন্তোষজনক না হওয়ায় জেলা বিশেষ লকডাউন আরও ৭দিন বাড়িয়েছে জেলা প্রশাসন।

আজ সোমবার (৩১ মে) দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এক প্রেসব্রিফিং এ জেলা প্রশাসক ও জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মো. মঞ্জুরুল হাফিজ আরও ৭দিন ৩১ মে দিবাগত রাত ১২টা (১জুন) থেকে ৭ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত বৃদ্ধির ঘোষণা দেন।
বিশেষ লকডাউনের পূর্ববর্তী সিদ্ধান্ত অপরিবর্তীত রেখে লকডাউন ঘোষণাকালে এসময় উপস্থিত ছিলেন জেলার পুলিশ সুপার এ এইচ এম আবদুর রকিব বিপিএম-পিপিএম, সিভিল সার্জন ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী, পৌর মেয়র মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. জাকিউল ইসলামসহ স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরা।
কঠোর লকডাউন চলাকালেই শনিবার জেলায় ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ভাইরাস ধরা পড়ে ৭ জনের দেহে। তবে কয়েকদিনের লকডাউন জেলার মানুষ মেনে চলায় জেলায় সংক্রমনের হার নি¤œমুখী বলছেন সিভিল সার্জন।
আজ সোমবার জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সিদ্ধান্তে আরও ৭দিন লকডাউন বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ও জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সদস্য সচিব ডা. জাহিদ নজরুল চৌধূরী।
জেলায় কঠোরভাবে পালিত হচ্ছে লকডাউন। মফস্বলে কঠোরভাবে লকডাউন কার্যকরে রবিবার সকালে থেকেই মাঠে তৎপর রয়েছে জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশের বিভিন্নস্তরের কর্মকর্তা ও সদস্যরা। জেলা শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে এবং জেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে প্রশাসনের তৎপরতা দেখা গেছে। লকডাউনে দূরপাল্লার ও আন্তঃজেলা বাস ও ট্রেনসহ যানবাহন বন্ধ রয়েছে। মার্কেট ও দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর সোনামসজিদ স্থলবন্দরে কার্যক্রম স্বাভাবিক গতিতেই চলছে। আম বাজারকরণ ও রপ্তানী বিষয়ে লকডাউনের আওতামুক্ত রেখে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সর্বাত্মক সহযোগিতা আশ^াস জেলা প্রশাসনের।
সিভিল সার্জন ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী সোমবার সকালে জানান, জেলায় ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ভাইরাস ধরা পড়েছে ৭ জনের দেহে। আক্রান্তরা ভারতীয় ও স্থানীয় রয়েছে। এসব ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ভাইরাস আক্রান্তদের আবারও পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। এদের মধ্যে একজন শিশুও রয়েছে। কয়েকদিনের লকডাউন জেলার মানুষ মেনে চলায় জেলায় সংক্রমনের হার নিম্নমুখী।
জেলা প্রশাসক বলেন, প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস সংক্রমণ, মৃত্যুহার ও ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট রোধে মঙ্গলবার (০১ জুন) রাত ১২ টা ০১ মিনিট থেকে আগামী ০৭ই জুন কঠোর লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানোর সীদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কঠোর লকডাউনের আওতায় ১১ দফা নির্দেশনা বজায় রেখেছে জেলা প্রশাসন।
প্রেস ব্রিফিংয়ে জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ বলেন, চলমান কঠোর লকডাউনের সকল নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত থাকবে। তবে জেলার প্রধান অর্থকারী ফল আমের মৌসুমে আমচাষী, ব্যবসায়ী, আড়তদার ও রফতানিকারকদের যাতে কোন ক্ষতি না হয়, সেলক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের আম ব্যবসায়ীদের জেলায় প্রবেশে কোন বাধা নেয়। তারা জেলায় প্রবেশ করতে পারবে ও কোনরকম বাধা ছাড়াই ব্যবসা করতে পারবে। জেলায় করোনা সংক্রমণ নি¤œমুখী। তবে এটি অব্যাহত রাখতে স্বাস্থ্য বিভাগের পরামর্শে লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। অন্যদিকে, চলমান কঠোর লকডাউনের আওতায় জেলায় প্রবেশ ও চলাচলে নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত থাকবে।
তিনি আরও বলেন, কঠোর লকডাউনে সকল প্রকার যাববহন বন্ধ থাকবে, তবে জরুরি পরিসেবা- এ্যাম্বুলেন্স ও পন্যবাহী ট্রাক চালু থাকবে। দ্বিতীয় মেয়াদে আগামী ৭ দিনে বাইরের জেলা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে কোন পরিবহন ঢুকতে পারবে না এবং জেলা হতে অন্য কোথাও যেতে পারবে না। অর্থাৎ আন্তঃজেলা পরিবহন বন্ধ থাকবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় বর্তমানে করোনা রোগী চিকিৎসাধিন রয়েছে ৫৭৬ জন। জেলায় এ পর্যন্ত মোট ১৭২৭ জনের দেহে ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। আর ১ হাজার ১১৯ জন সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন এবং মারা গেছে ৩২ জন। ভারত থেকে সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে দেশে প্রবেশ করেছে মোট ৮৬জন। ভারত থেকে আসা মানুষদের সকলকে জেলা শহরের একটি আবাসিক হোটেলে এবং সোনামসজিদ ডাকবাংলোতে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, জেলায় লকডাউন অনেকটায় কার্যকর হয়েছে, জেলার মানুষ মাস্ক ব্যবহার করছে। তিনি সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ জানান।
লকডাউন চলাকালে সকল প্রকার যানবাহন বন্ধ থাকবে তবে রোগী পরিবহনে অ্যাম্বুলেন্স, জরুরি পণ্যবাহী ট্রাক ও জরুরি সেবা দানের ক্ষেত্রে এ আদেশ প্রযোজ্য হবে না। লকডাউন চলাকালীন কোন প্রকার যানবাহন রাজশাহী-নওগাঁ থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রবেশ করতে পারবে না এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকেও কোনো যানবাহন জেলার বাইরে যাবে না। সকল ধরনের দোকানপাট ও সাপ্তাহিক হাট বন্ধ থাকবে। কাঁচাবাজার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় মুদি দোকান ও ফার্মেসি খোলা থাকবে। তবে প্রয়োজন ছাড়া কেউ এসব স্থানে যেতে পারবে না। আমের আড়ৎ/বাজার পৃথক পৃথক জায়গায় ছড়িয়ে আড়ৎদারের মাধ্যমে বিক্রয় করা যাবে।
এছাড়াও বাগান থেকে আম ট্রাকে করে প্রেরণ করা যাবে। এছাড়া কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে আম পরিবহন চালু থাকবে। উপজেলা প্রশাসন এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবেন।
জরুরী প্রয়োজনে চলাচলকারী সকলকে মাস্ক পরিধান করতে হবে। শিল্প-কারখানায় স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালু থাকবে। তবে শ্রমিকদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নিজস্ব পরিবহনে আনা নেয়া ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা ও জরুরী পরিষেবা যেমন কৃষি উপকরণ সার বীজ কীটনাশক কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি খাদ্যশস্য ও খাদ্য দ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা প্রদান বিদ্যুৎ, পানি, ফায়ার সার্ভিস, স্থলবন্দরের কার্যক্রম টেলিফোন, ইন্টারনেট, সরকারি-বেসরকারি গণমাধ্যমকর্মীদের সরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা ডাকসেবা সহ অন্যান্য অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিস সমূহ তাদের কর্মচারী ও যানবাহন এ নিষেধাজ্ঞা আওতা বহির্ভূত থাকবে।
অতি জরুরী প্রয়োজন ব্যতীত ওষুধও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য বিক্রয় চিকিৎসাসেবার মৃতদেহ /সৎকার ইত্যাদি কোন ভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবেনা। তবে টিকা কার্ড প্রদান সাপেক্ষে টিকা গ্রহণের জন্য যাতায়াত করা যাবে।
খাবারের দোকান ও হোটেল-রেস্তোরাঁয় কেবল খাদ্য বিক্রয় সরবরাহ করা যাবে। স্বাস্থ্য বিধি অনুসরণ করে জুম্মার নামাজ সহ প্রতি ওয়াক্তে নামাজ এর সর্বোচ্চ ২০জন মুসল্লি অংশ গ্রহন করতে পারবে। অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়ে সমসংখ্যক ব্যক্তি উপাসনা করতে পারবে।
উল্লেখ্য, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসনের ঘোষিত জেলায় কঠোর লকডাউন চলছে। গত সোমবার রাত (২৫ মে) ১২টা থেকে শুরু হওয়া কঠোর লকডাউন চলবে ৩১ মে রাত ১২টা পর্যন্ত। এদিকে, দ্বিতীয়বার বাড়ানো কঠোর লকডাউন আগামীকাল সোমবার (০১ জুন) রাত ১২ টা ১ মিনিটে শুরু হয়ে চলবে আগামী ০৭ মে মধ্যরাত পর্যন্ত।
সংবাদ প্রেরক বিটিসি নিউজ এর চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি মো: আশরাফুল ইসলাম রঞ্জু। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.