চাঁপাইনবাবগঞ্জে পুকুরের ধারে ৩২টি বাচ্চাসহ রাসেল ভাইপার!

বিশেষ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) প্রতিনিধি: চাঁপাইনবাবগঞ্জে একটি পুকুরের পাড়ের কুঁড়েঘরের নিচ থেকে প্রায় ৩২টি বাচ্চাসহ বিষধর একটি রাসেল ভাইপার সাপের দেখা মিলেছে।
সোমবার (০১ মে) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের বালুগ্রাম এলাকার মো. মুক্তার হোসেন ওরফে মুক্তার চোকিদারের পুকুরে এই বিষধর সাপের দেখা মেলে।
পুকুর মালিক ও স্থানীয়রা প্রায় ঘন্টাব্যাপী এই ৩৩টি সাপকে মেরেছে। পরে পুকুরের পাশে একটি গর্ত করে দেশের সবচেয়ে বিষধর এসব সাপ পুঁতে ফেলা হয়।
সাপগুলো রাসেল ভাইপার প্রজাতির তা নিশ্চিত করেছেন, বন অধিদপ্তরের বণ্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা তন্ময় আচার্য্য।
স্থানীয় বাসিন্দা, প্রত্যক্ষদর্শী, পুকুর মালিক ও বণ্যপ্রাণী সংরক্ষণ কর্মকর্তা সুত্রে জানা যায়, বিরল প্রজাতির রাসেল ভাইপার সাপই এখন দেশের সবচেয়ে বিষধর। সোমবার সকালে মুক্তার হোসেন পুকুরের পাড়ে আসলে প্রথমে একটি সাপ দেখতে পায়। পরে পুকুর বিভিন্ন সরঞ্জামের স্তুপের নিচ থেকে একে একে ৩২টি বাচ্চাসহ রাসেল ভাইপার সাপ দেখতে পাওয়া যায়। এসময় স্থানীয়রা সবগুলো সাপ মেরে ফেলে।
পুকুর মালিক মো. মুক্তার হোসেন বলেন, গত ৮ বছর ধরে এই পুকুর চাষাবাদ করি। কিন্তু এর আগে কখনও এই জাতের সাপ দেখতে পায়নি। আজকে সকালে হঠাৎ এতোগুলো সাপ একসাথে দেখতে পেয়ে ভীত হয়ে যায়। পরে স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতা নিয়ে প্রায় এক ঘন্টা ধরে সবগুলো সাপ মেরে ফেলা হয়েছে। এরপর নিরাপত্তার সুবিধায় মাটির নিচে গর্ত করে পুতে ফেলা হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আবু সাইদ বলেন, গত প্রায় তিন মাস আগে রাতের বেলা এই এলাকায় আম বাগান দিয়ে চলাচলের সময় একজনকে সাপে কামড় দেয়। পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর তার মৃত্যু হয়েছে। আমাদের ধারনা, তাকে রাসেল ভাইপার সাপেই কামড় দিয়েছিল। অত্যান্ত বিষধর সাপ হওয়ায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরেও তার মৃত্যু হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী খাবির উদ্দিন (৪০) বিটিসি নিউজকে জানান, সোসাল মিডিয়া ও টিভিতে এই বিষধর সাপের কথা শুনেছি-দেখেছি। কিন্তু সরাসরি দেখা হয়নি। আজকে এখান দিয়ে জমিতে যাওয়ার পথে মানুষের জটলা দেখে পুকুরের ধারে এসে দেখি, রাসেল ভাইপার সাপ। অদ্ভুত ব্যাপার, একসাথে ৩২টি বাচ্চা এর আগে কখনও দেখেনি। সাপগুলো যদিও বিলুপ্ত প্রজাতির, কিন্তু মানুষের নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় নিয়েই সাপগুলো মেরে ফেলা হয়েছে।
বন অধিদপ্তরের বণ্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা তন্ময় আচার্য্য বিটিসি নিউজকে বলেন, সাধারণত সাপ ডিম থেকে বাচ্চা ফোটায়। কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম রাসেল ভাইপার সাপ। দেশের সবশেষে বিষধর এই সাপটি সরাসরি বাচ্চা জন্ম দেয়। সর্বোচ্চ ৪০টি পর্যন্ত বাচ্চা দিতে পারে এই সাপটি। যা অন্য যেকোন সাপের থেকে আলাদা বৈশিষ্ট্য দিয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে অন্যতম বিষধর সাপটিকে।
তিনি আরও বলেন, এই সাপ আক্রমণের শিকার না হলে কাউকে আঘাত করে না। তবে এই সাপে কামড়ালে আক্রান্ত ব্যক্তি সময় খুব কম পান। এক সময় বিলুপ্ত হওয়া রাসেল ভাইপার সাপের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। কারন গত কয়েক বছর থেকে দেশের রাজশাহী ও এর আশেপাশের বিভিন্ন জেলা, রাজবাড়ি, ফদিরপুর জেলার পদ্মা নদীর অববাহিকা এবং বরেন্দ্র এলাকায় উঁচু-নিচু জমিতে এই সাপটির সবচেয়ে বেশি বেশি দেখা মিলছে। এসব সাপ পদ্মা নদীতে বর্ষার সময়ে ভারত থেকে পদ্মা নদী হয়ে চলে আসছে।
সিভিল সার্জন ডা. এসএম মাহমুদুর রশিদ বিটিসি নিউজকে বলেন, যেসব এলাকায় সাপের কামড়ের আশঙ্কা আছে, সে সমস্ত এলাকায় মানুষকে সচেতন হয়ে চলাফেরা করতে হবে। পাশাপাশি সাপে কামড়ালে ওঝা বা ঝাঁড় ফুক নয় বরং দ্রæত নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগের জন্য মানুষকে সচেতন করে তোলা উচিত। তবে রাসেল ভাইপার সাপ অধিক বিষধর হওয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তি সময় খুবই কম পায়। তাই যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে আসতে হবে। অন্যান্য সাপের মতোই রাসেল ভাইপার সাপে কামড়ালেও একই চিকিৎসা দেয়া হয় বলে জানান তিনি। #

Comments are closed, but trackbacks and pingbacks are open.